দোকানে থেকে উধাও হ্যান্ড স্যানিটাইজার, এই অবস্থায় কী করেন তাঁরা? কুছ পরোয়া নেই নিজেরাই ইউটিউব ঘেঁটে বের করে ফেলেছেন উপায়, নিজেরাই বানিয়ে ফেলছেন স্যানিটাইজার, এবং ব্যবহারও করছেন দিব্যি। তাঁরা হলেন ত্রিপুরার বৃহত্তম শ্মশান বটতলার 'মহাপুরোহিত', করোনাতঙ্কের বাজারে যাঁরা তৈরি করে ফেলছেন নিজেদের ব্যবহারের হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
দেশব্যাপী লকডাউন জারি হলেও তার আওতায় স্বাভাবিকভাবেই পড়ছে না দেহ সৎকারের কাজ। এবং সবাই বাড়িতে বসে বিশ্রাম নিতে বাধ্য হলেও কাজ থেকে একদণ্ডের জন্য ছুটি নেই বটতলা শ্মশানের পুরোহিত এবং অন্যান্য কর্মীদের। তবে হাত সাফ করার সরঞ্জাম ফুরিয়েছে বহুদিন আগেই।
প্রতিদিন গড়ে অন্তত ছ'টি দেহ সৎকারের জন্য আনা হয় এই শ্মশানে। এগুলির মধ্যে থাকে হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্তের পর খালাস পাওয়া দেহও। দাহ করার আগে দেহগুলির অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া হয়, যখন দেহ ধোয়া হয়, পুজো দেওয়া হয়, এবং চোখে তুলসী পাতা দিয়ে চিতায় তোলা হয়।
মহাপুরোহিত সুবীর চক্রবর্তী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, "যে সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি, তাতে নিজেদের সুরক্ষিত রাখা প্রয়োজন। ত্রিপুরায় এখনও করোনাভাইরাসের রোগী নেই, কিন্তু অন্যান্য জীবাণু থেকেও তো সুরক্ষা চাই। এখন স্যানিটাইজার ফুরিয়ে গেছে, তাই আমরা ইউটিউব থেকে নিজেরাই শিখে নিয়েছি বাড়িতে বসে কীভাবে বানাতে হয়।"
ওষুধের দোকান থেকে আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল কিনে তার সঙ্গে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে কেনা অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে স্যানিটাইজার তৈরি করেছেন সুবীরবাবু। "আমি প্রায় ৫০০ এমএল বানিয়েছি এই মিক্সচার, সারাদিন ছোট বোতল থেকে বের করে ব্যবহার করি। আমার সহকর্মীদের সঙ্গেও ভাগ করে নিচ্ছি," একটি ছোট প্লাস্টিকের বোতল দেখিয়ে বলেন তিনি।
শ্মশানের আরেক পুরোহিত অজয় চক্রবর্তী জানান যে তাঁর সহকর্মীদের পাশাপাশি তিনিও সবরকম পদক্ষেপ নিচ্ছেন নিজেকে সুরক্ষিত রাখার, বাড়িতে তৈরি স্যানিটাইজার ব্যবহার করা সহ। তিনি আরও বলেন, মরদেহের সঙ্গে এখনও আত্মীয়স্বজন এলেও, সংখ্যায় অনেক কম তাঁরা। তবে তাঁর মতে, লকডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকারের উচিত, শেষযাত্রায় ক'জন মরদেহ নিয়ে আসতে পারেন, সেই সংখ্যা বেঁধে দেওয়া। অজয়বাবুর কথায়, "লকডাউনের আগে ২০-২৫ জন আসতেন, এখন দাঁড়িয়েছে ১৫ বা তার কম। আমরা তাঁদের বলি একে অপরের সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে, এবং শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের ভেতরে আসতে দিচ্ছি। কিন্তু সরকার চাইলে সেই সংখ্যাটা আরও কমতে পারে।"
শ্মশানে ব্যবহার্য সামগ্রীর যে দোকান, তার মালিক কমল দাস বলছেন, তাঁর দোকানে খুব বেশি মাল নেই আর। "আর মাত্র কিছুদিনের স্টক আছে। লকডাউন বেশিদিন চললে এখানে পুজো-আচ্চার সামগ্রী যথেষ্ট থাকবে না আমার কাছে।"