ত্রিপুরার রানি বা রানি আনারস এ বছর তেমন ফলন দিল না। এই আনারসকে ২০১৮ সালে রাজ্যের জাতীয় ফল বলে আখ্যা দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। যেহেতু লকডাউনের সময়ে ক্ষমিক পাওয়া যায়নি এবং কিছুটা অনাবৃষ্টির জন্য এ বছর ফলন ভাল হয়নি বলে জানাচ্ছেন আনারস চাষিরা।
৬৫ বছরের নরেশ চন্দ্র দেব ও তাঁর ভাই দুলাল চন্দ্র দেবে পশ্চিম ত্রিপুরায় নন্দননগরে ৮.৮৩ হেক্টর জমি আনারস চাষ রয়েছে পুরুষানুক্রমে।
সাতের দশকে নন্দননগর আনারস চাষের মূল ক্ষেত্র ছিল। পাঁচ দশক পর সে গ্রাম একটি ছোট শহরে পরিণত হয়েছে, তবে ওই একটি ছাড়া আর সমস্ত আনারস বাগান বন্ধ।
নরেশ ও দুলালের বাবা প্রমোদ চন্দ্র দেব ৭-এর দশকে আনারস চাষ শুরু করেন। পাঁচ দশক পর তাঁর চার সন্তান দুলাল, নরেশ ও তাঁদের দুই বোন সেই বাগিচা সামলান, যা চারভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে।
এ বছরের বর্ষার অভাবের কথা জানিয়ে দুলাল দেব বললেন, তাঁদের বাগানে কোনও কৃত্রিম সেচের ব্যবস্থা নেই। আমরা বর্ষার উপর নির্ভর করি। পুরো বাগানে পাইপলাইন বসানোর অনেক খরচ। আমাদের যা বিক্রি হয় তাতে চাষের আর মজুরের খরচ উঠে আসে। এ বছর কয়েকদিন বজ্রপাত ছাড়া বেশি বৃষ্টি হয়নি, তাতে ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি হয়েছে। সরকারের উচিত আমাদের জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা না হলে এ বাগান টিকবে না।
অন্য বছর বৃষ্টি কম হলে গ্লুকোজ সলিউশন মাটিতে দিয়ে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করলেও এ বছর লকডাউনের কারণে কোনও মজুর পাওয়া যায়নি।
নরেশ বললেন, “আমরা কৃষিঋণ চাই না। ও সামান্য টাকা, ফুরিয়ে যাবে। আমাদের ফলনের নিশ্চিত বিক্রির ব্যবস্থা যদি থাকত, তাহলে আমরা আরও টাকা লগ্নি করতে পারতাম, বাহানের উন্নতি, বড় ফলের দিকে মন দিতে পারতাম।”
বড় ৭০০-৮০০ গ্রামের আনারস প্রতিটা ৭ থেকে ৮ টাকায় পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন ওঁরা। ছোটগুলি বিক্রি হয় দেড় থেকে দু টাকায়।
আনারস চাষিরা চাইছেন সরকার নতুন প্রক্রিয়াকরণ কারখানা শুরু করুক। এর আগে অরুন্ধতীনগরে কয়েকটি তেমন কারখানা থাকলেও তা বন্ধ হয়ে যায়। একটি ফল প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট উত্তরপূর্ব আঞ্চলিক কৃষিপণ্য নিগম লিমিটেড চালালেও, সেও কয়েকবছর হল বন্ধ।
রাজ্যের বিজেপি আইপিএফটি সরকার ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলে আসছে।
২০১৯ সালে ১৩০ মিলিয়ন টন আনারল দুবাই, দোহা ও বাংলাদেশে রফতানি হয়েছিল, যা আগের বছরের ৩০ মিলিয়ন টনের তুলনায় অনেক বেশি।
এ বছর ফলন খারাপ হলেও রাজ্য সরকারের এক আধিকারিকের মতে অবস্থা তত খারাপ নয়।
ত্রিপুরায় বিভিন্ন জেলার মোট ৮৮০০ হেক্টর জমিতে ১.২৮ মিলিয়ন টন আনারস উৎপাদিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে কিছু সরকার পরিচালিত হলেও প্রায় সবটাই বেসরকারি। ৪০০০ জনের মত মানুষ সরাসরি আনারস চাষে যুক্ত।