ফের ত্রিপুরায় অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটল এক বিচারাধীন বন্দীর। রাজধানী আগরতলা থেকে ৩৫ কিমি দূরে সিপাহীজলা জেলার বিশালগড় কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ঝুলন্ত অবস্থায় আবিষ্কৃত হলো খুনের চেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত বিচারাধীন এক বন্দীর দেহ। পুলিশের দাবি, এটি আত্মহত্যার ঘটনা।
এআইজি (আইন শৃঙ্খলা) সুব্রত চক্রবর্তী জানান যে অভিযুক্ত সঞ্জীব দাস, যাকে গত বছরের ২৬ অগাস্ট খুনের চেষ্টা করার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়, সংশোধনাগারে হেফাজতে ছিল মামলা চলাকালীন। সেখানেই তার কুঠুরিতে ঝুলন্ত অবস্থায় আবিষ্কৃত হয় তার দেহ। ওই আধিকারিকের কথায়, "মঙ্গলবার জেলের ভেতরে নিজেই নিজের গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে ওই বন্দী। সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ আমাদের খবর দেন। ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠানো হয়েছে আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজে। আমরা গোটা ঘটনার তদন্ত করছি।"
এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাজ্যের বিরোধী দল সিপিএম। ওই বন্দীর মৃত্যু সম্পর্কে তাদের প্রশ্ন, তা 'খুন' হয়ে থাকতে পারে কিনা। এই ব্যাপারে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে সিপিএম।
সিপিএম-এর তরফে একটি বিবৃতি জারি করেন দলের অফিস সম্পাদক রাখাল মজুমদার, যাতে বলা হয়েছে, "সঞ্জীব ওই কুঠুরিতে একা ছিল না; তার সঙ্গে অন্যরাও ছিল। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে একজন বিচারাধীন ব্যক্তি নিজের গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে? এটা কী আত্মহত্যা না খুন? বিজেপি-আইপিএফটি সরকারের শাসনকালে এই নিয়ে তৃতীয়বার অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটল কোনও বিচারাধীন বন্দীর। এর আগে একইরকম দুটি ঘটনা ঘটে পশ্চিম আগরতলা পুলিশ লক-আপ এবং রাধাকিশোরপুর থানার লক-আপে।"
সিপিএম-এর তরফে ত্রিপুরার মানবাধিকার কমিশনকে এই মামলার স্বতঃপ্রবৃত্ত তদন্ত চালু করার আবেদন জানানো হয়।
অন্যদিকে বিজেপির বক্তব্য, সরকার নিশ্চিত এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে সত্য প্রকাশ্যে আনবে। তারা পাল্টা এই প্রশ্নও তোলে, সিপিএম সরকারের আমলে যখন এই সংশোধনাগার আগরতলায় অবস্থিত ছিল, তখন সেখানে ১৫ জন আবাসিকের মৃত্যুর তদন্ত কেন করে নি সিপিএম। ২০১৩ সালে এই সংশোধনাগার সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিশালগড়ে।
বিজেপির মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্য এই প্রতিবেদককে জানান, "যখন আগরতলায় ছিল সেন্ট্রাল জেল, তখন সেখানে ১৫ জনের বেশি বন্দীর মৃত্যু হয়। সেইসব ঘটনার তদন্ত করে নি কেন সিপিএম? একইরকম ঘটনায় দু'রকম অবস্থান কীভাবে হতে পারে? এটা তো সরাসরি দ্বিচারিতা।"
চলতি মাসের ১২ তারিখ পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার অন্তর্গত পশ্চিম আগরতলা থানার লক-আপে ঝুলন্ত অবস্থায় আবিষ্কৃত হয় এটিএম হ্যাক করার দায়ে অভিযুক্ত এক ৩৮ বছরের ব্যক্তির মৃতদেহ। আগরতলায় এটিএম 'স্কিমিং'-এর অভিযোগে নভেম্বর মাসে গ্রেফতার করা হয় চারজন তুর্কি সাইবার অপরাধীকে, যারা সন্ধান দেয় ওই ব্যক্তির।