আচমকাই গতকাল চলে গেলেন সংগীত পরিচালক তথা গায়ক বাপ্পি লাহিড়ি। লতা মঙ্গেশকরের পর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাঙালি। তার মাঝেই বুধবার সাত সকালে আরও এক বাঙালি তারকার মৃত্যুর খবর এল আরব সাগরের পার থেকে। মুম্বইয়ের হাসপাতালে প্রয়াত ‘ডিস্কো কিং’। বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। মঙ্গলবার মুম্বইয়ের জুহুর এক হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।
আশির দশকে বলিউড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির দিশা বদলে গিয়েছিলেন এই বাঙালি। ‘ডিস্কো ডান্সার’, ‘হিম্মতওয়ালা’, ‘শারাবি’, ‘অ্যাডভেঞ্চার্স অফ টারজান’, ‘ডান্স ডান্স’, ‘সত্যমেব জয়তে’, ‘কম্যান্ডো’, ‘শোলা অউর শবনম’-এর মতো একাধিক সুপারহিট ছবির সংগীতের দায়িত্বভার সামলেছেন তিনি। আমির খানের বাবা তাহির হুসেনের ‘জখমি’র সঙ্গে বলিউডের সংগীত জগতে নিজের আত্মপ্রকাশ দাপটের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন এই বাঙালি সংগীত শিল্পী। ২০২০ সালে ‘বাগি ৩’ ছবির ‘ভাঙ্গাস’বাপ্পিদার কম্পোজ করা শেষ গান। ১৯৮৪ সালের ‘তোহফা’ চলচ্চিত্রের বাপ্পি লাহিড়ির কম্পোজে ‘এক আঁখ মারু তোহ’ গানের রিমিক্সড ভার্সন। এই ভার্সনটি কম্পোজ করেন তানিষ্ক বাগচী, বাপ্পি দা, দেব নেগি এবং জোনিতা গান্ধী। এর আগে ‘তোহফা’ চলচ্চিত্রের বাপ্পিদা’র সুরে মূল গানটি গেয়েছিলেন, কিশোর কুমার এবং আশা ভোঁসলে।
করোনা আক্রান্ত হয়ে গত বছর মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। পরে সেরে উঠলেও বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। করোনার জেরে কন্ঠস্বর হারিয়েছেন বাপ্পিদা, এমন গুজবও রটেছিল। যদিও ছেলে বাপ্পা লাহিড়ি সেই সময় জানিয়েছিলেন, ‘কোভিডের পাশাপাশি বাবার ফুসফুসেরও সমস্যা দেখা দিয়েছিল। বাবাকে কথা বলতে বারণ করা হয়েছে'। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনেয়ার কারনেই মৃত্যু হয়েছে বাপ্পি লাহিড়ির।
বাপি লাহিড়ির মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সারা দেশ। তাঁর মৃত্যতে গভীর শোক প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর। নরেন্দ্র মোদির একটি টুইট বার্তায় লিখেছেন 'বাপি লাহিড়ির সমস্তটা জুড়ে ছিল সঙ্গীত, নানা ধরনের আবেগকে তিনি অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁর কাজ মনে রাখবে। প্রাণবন্ত স্বভাবের জন্য তাঁর অভাব বোধ করবে। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত। পরিবার ও অনুরাগীদের প্রতি সমবেদনা। ওঁ শান্তি”।
আরো পড়ুন: শেষযাত্রায় বাপ্পি লাহিড়ী, কাঁধ দিলেন ছেলে বাপ্পা, কান্নায় ভেঙে পড়েছে নাতি
একই সঙ্গে টুইট বার্তায় শোক প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি টুইটে এক শোক বার্তায় লিখেছেন, “কিংবদন্তি গায়ক এবং সুরকার বাপি লাহিড়ী জীর মৃত্যু সংবাদে আমি শোকাহত। তাঁর মৃত্যু ভারতীয় সংগীত জগতে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। বাপি দা তার বহুমুখী গানের প্রতিভা এবং প্রাণবন্ত প্রকৃতির জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর পরিবার ও ভক্তদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। ওম শান্তি”।
এদিকে বাপ্পিদা’র মৃত্যুতে আমূল ইন্ডিয়ার তরফে এক শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। বাপ্পি লাহিড়ির স্মৃতির উদ্দেশ্যে শোকপ্রকাশ করে আমূল ইন্ডিয়া লিখেছে ‘চলতে চলতে মেরে ইয়ে গীত ইয়াদ রাখনা”… গানটি ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া আইকনিক ছবি চলতে চলতে থেকে কিশোর কুমারের গাওয়া একটি বিখ্যাত গান। বাপ্পী লাহিড়ীর সঙ্গীত পরিচালনা চলচ্চিত্রটিকে একটি অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলো, এবং কিশোর কুমারের গাওয়া 'চলতে চলতে মেরে ইয়ে গীত ইয়াদ রাখনা' গানটি তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল।
আজ সকাল, ঘড়ির কাটা সকাল ১০টা। চোখের জলে বিদায় নিলেন সকলের প্রিয় বাপ্পিদা। ফুলের চাদরে সাজানো প্রবাদপ্রতীম শিল্পীর দেহ নিয়ে ভিলে পার্লের পবনহংস শ্মশানের উদ্দেশে রওনা হল শববাহী গাড়ি। বাপ্পিদার শেষযাত্রায় পা মেলালেন বন্ধু-অনুরাগীরা। সেখানেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে