সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই সময়েই বিয়েটা সেরে ফেলতে পারতেন তিনি। অটো চালিয়ে ধীরে ধীরে দীর্ঘদিন ধরে জমিয়েছিলেন লাখ দুয়েক টাকা। বিয়ের জন্য। তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ভেস্তে দিয়েছে তাঁর বিয়ে। তাই সেই জমানো টাকাতেই পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করছেন তিনি।
বেনজির এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন, ৩০ বছরের পুনের অটো চালক অক্ষয় কোঠয়ালে। শুধু পরিযায়ী শ্রমিকদেরই নয়। অক্ষয়ের অটো এখন গর্ভবতী মহিলা, অসুস্থ রোগী, প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে যাচ্ছে শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে একদম বিনামূল্যে। নিয়মিত করোনা সচেতনতার প্রচারেও অংশ নিচ্ছেন তিনি। অক্ষয়ের এমন কাণ্ডে প্রশংসার ঝড় সবজায়গায়।
বিয়ের জমানো টাকা দিয়ে তিনি কি করছেন। জানা গিয়েছে, প্রতিদিন ৪০০ লোকের জন্য খাবার রান্না করছেন তিনি। তারপর সেই রান্না করা খাবার নিয়ে শহর ঘুরে পরিযায়ী শ্রমিক ও দরিদ্রদের মধ্যে সেই খাবার বিতরণ করছেন।
পিটিআইকে অক্ষয় জানিয়েছেন, তিনি এই কাজ ভালোবেসে ফেলছেন। "অটো চালিয়ে দু লক্ষ টাকা জমিয়েছিলাম বিয়ের জন্য। ২৫ মে আমার বিয়ে ছিল। তবে লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়ায় আমি আর আমার স্ত্রী ঠিক করি এই মুহূর্তে বিয়ে করা ঠিক হবে না।"
এরপর কোঠয়ালে আরো জানিয়েছেন, "রাস্তায় বেশ কিছু মানুষকে দেখেছিলাম যারা একবেলা খাবারও পাচ্ছে না। সেই সময় আমি আর আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করি পরিযায়ী শ্রমিক ও দরিদ্রদের সাহায্য করব।"
এমনটা জানিয়ে তিনি আরো বলেছেন, "নিজের সঞ্চিত অর্থ খরচ করব। আমার বন্ধুরাও টাকা দেয়।" মহারাষ্ট্রের টিম্বার মার্কেট এলাকায় থাকেন তিনি। নিজের এলাকাতেই একটি কমিউনিটি কিচেন খোলেন তিনি। সেখানে চাপাতি আর সবজি তৈরি করে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসা তাঁর নিত্য কর্তব্য।
তিনি বলেছিলেন, "আমার অটো নিয়ে মালঢাকা এলাকায় স্টেশনের কাছে, সঙ্গমওয়ারী, ইয়ারাওয়াদা-য় একবার খাবার দিতে যাই। ধীরে ধীরে সেই টাকার যোগানও কমে আসছে, তাই সবজি-চাপাতির বদলে পোলাও, মশলা রাইস কিংবা সম্বর রাইস বিতরণ করতে চান তিনি আর তাঁর বন্ধু। আপাতত তাঁদের লক্ষ্য ৩১মে লকডাউনের শেষদিন পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করা।
শুধু খাবারই নয়, অক্ষয় ও তার বন্ধুরা স্থানীয় এলাকায় মাস্ক ও স্যানিটাইজারও বিতরণ করেছেন।
তিনি নিজের অটোয় লাইডস্পিকারে করোনা সতর্কতামূলক বার্তাও দিয়ে থাকেন। অক্ষয় আরো জানান, "এই লকডাউনে গর্ভবতী মহিলা এবং প্রবীণ নাগরিকদের বিনামূল্যে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছি।" গত বছর মহারাষ্ট্রের বন্যাতেও ত্রাণ সামগ্রীতে সাহায্য করেছিলেন তিনি।