হাওয়াই, আলাস্কা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আছড়ে পড়েছে সুনামি । শনিবার প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ টোঙ্গার কাছে, সমুদ্রের নিচের অবস্থিত একটি আগ্নেয়গিরিতে বড়মাপের অগ্ন্যুৎপাত ঘটে, যার জেরেই উপকূল জুড়ে আছড়ে পড়েছে বিশাল সুনামি তরঙ্গ। উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা সুনামির সতর্কতা পেতেই উচ্চ ভূমির সন্ধানে ছুটতে শুরু করেছিলেন। অগ্ন্যুৎপাতের পর বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে, ছোট দ্বীপরাষ্ট্রটির সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
টোঙ্গার রাজধানীতে প্রায় চার ফুট উঁচু সুনামির তরঙ্গ আঘাত হেনেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অগ্ন্যুৎপাতের পর টোঙ্গার আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো ছাই ঝড়ে পড়তেও দেখা গিয়েছে। যে ডুবো আগ্নেয়গিরিতে এই বিশাল অগ্নুৎপাত ঘটেছে, তার নাম 'হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হাপাই'। আগ্নেয়গিরিটি টোঙ্গার প্রধান দ্বীপ টোঙ্গাটাপু থেকে প্রায় ৪০ মাইল উত্তরে অবস্থিত।
শুধু টোঙ্গা নয়, কাছাকাছি অবস্থিত ফিজি এবং সামোয়া দ্বীপেও শনিবার সন্ধ্যায় সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সামোয়া দ্বীপপুঞ্জ সুনামির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। সতর্কতাও তুলে নেওয়া হয়েছে। তারপরও জনগণকে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে দূরে থাকার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এই সুনামিতে টোঙ্গা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এসবের মধ্যেও এক বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তির প্রাণে বাঁচার ঘটনা হার মানাতে বাধ্য যে কোন হলিউড সিনেমাকেও। ২৭ ঘন্টা জলের নীচে থেকেও প্রাণে বাঁচলেন এক বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি। কাকতালীয় হলেও তিনি এখন সংবাদ শিরোনামে। কীভাবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন তিনি সেকথা তিনি নিজে মুখেই জানিয়েছেন।
জানা গিয়েছে ৫৭ বছর বয়সী বিশেষ ভাবে সক্ষম ওই ব্যক্তির নাম ফোলাউ। সুনামির বিষয়ে তার ভাইয়ের থেকে আগাম সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন তিনি। উপায় না দেখে তিনি একটি গাছে আশ্রয় নেন। এরপর ঢেউ কিছুটা কমতেই তিনি গাছ থেকে নেমে আসার চেষ্টা করেন। ঠিক তখনই পিছন থেকে দৈত্যকার এক বিশাল ঢেউ তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তার সঙ্গে ভেসে গিয়েছিল তার পরিবারের আরও কয়েকজন।
তিনি এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, "ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে জলের মধ্যে আমরা ভেসে চলেছি। আমরা কেউ কাউকে দেখতে পায়নি অন্ধকার এতটাই তীব্র ছিল। এদিকে উথালপাথাল ঢেউ! তার মধ্যে আমি আমার ছেলের ডাক শুনতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু সে কোথায় তা দেখতে পাচ্ছিলাম না। তার কথায়, আমি গভীর ঢেউয়ের মধ্যে ছিলাম। আমি চাইনি আমার মত বিপদের স্থানে আমার পরিবার আসুক, তাই আমি সাড়া দিইনি"।
ধীরে ধীরে জলে ভেসে আমি প্রায় ৭.৫ কিলোমিটার এসে মূল দ্বীপ টোঙ্গাটাপুতে পৌঁছাই। প্রায় ২৭ ঘণ্টারও বেশি সময় ওভাবে জলে ভেসে ছিলাম। তিনি আরও বলেন মনে রাখবেন, আমি প্রতিবন্ধী। “আমি কেবল ভেসেছি, চারপাশে আসা বড় ঢেউ দ্বারা আছড়ে পড়েছি। আমি ঠিকমতো হাঁটতে পারি না।" কীভাবে ২৭ ঘন্টা ধরে জলের মধ্যে জীবন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালিয়েছিলাম তা একমাত্র আমিই জানি”। আমার এই দুটি হাত আমাকে জলের মধ্যে অতক্ষণ সময় ভাসিয়ে রাখতে সাহায্য করেছিল। সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, প্রায় ৯ বারের চেষ্টায় আমি সফল ভাবে দ্বীপে পৌঁছাতে সক্ষম হই’। এদিকে রাতারাতি তিনি 'অ্যাকুয়াম্যান' নামে ভাইরাল হয়েছেন। সে প্রসঙ্গে ফ্লোলাউ সংবাদসংস্থাকে সাবলীল ভাবে জানিয়েছেন, 'অ্যাকুয়াম্যান' চরিত্রটি তার কাছে একেবারেই অজানা”