প্রেতকথা নাকি প্রেমের মোটিভেশনাল স্পিকার গৌরব তপাদার নিজেকে আদৌ পারফেক্ট করে তুলেছেন? নাকি এখনও অনেক কিছু বাকি! দীর্ঘদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় থেকেও মানুষের চোখের আড়ালেই ছিলেন গৌরব। আজও কিছুটা দূরে থাকতেই পছন্দ করেন। মন খুলে কথা বললেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে।
তারপর, কেমন চলছে সব?
আপাতত, চ্যানেলের দিকে কাজটা নিয়ে এখন একটু দোলাচল, নতুন শো আসছে। তবে যাচ্ছে ভালই।
ভূত নিয়ে অবসেশন কি খুব বেশি, সেই জন্য প্রেতকথা?
ভূত নিয়ে অবসেশন তো অবশ্যই। ছোট থেকেই ভূতের প্রতি একটা আলাদারকম ভালবাসা রয়েছে। ভূত কার না ভাল লাগে? ছোটবেলায় ভূত একটা ফ্যান্টাসি তারপর একটু বড় হলে ভূত হচ্ছে একটা বিনোদন, আর বয়স হয়ে গেলে ভবিষ্যত যে আমিও এটাই হতে চলেছি ( হাসি )।
প্রেতকথায় ঘটনা শোনানো হয়, কিন্তু আমরা যাচাই কি করে করব?
যাচাই করবে কী করে? এটা ভাল প্রশ্ন! কোনও পয়েন্ট তুমি পাবে না এটা নিয়ে। আমি যদি জিজ্ঞেস করি ভগবান আছে? উত্তর আসবে হ্যাঁ বা না। যা আমরা দেখতে পাই না সেটাকে যাচাই করা যায় না। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে। আর যারা সবথেকে বেশি অবিশ্বাস করে তারাই যাচাই করতে সেই করে।
বাঙালি আজও ভূতকে প্যাশেনেটলি ভালবাসে?
শুধু ভালবাসা নয়, বাঙালি ভূতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায়। আমরা টাইম ট্রাভেল, থ্রিলার পড়তে ভালবাসি। তারপরও ধর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে রবিঠাকুর প্রেতচর্চা করতেন। বাঙালি ভূতকে ভালোবাসে।
প্রেত কথার গৌরব আর মোটিভেশনাল স্পিকার গৌরব - কতটা আলাদা?
দুটো জনার কিন্তু আলাদা নয়। দুটোর মূল জায়গা হচ্ছে স্পিরিচুয়ালিটি। ভূত বা প্রেম বা ঘৃনা সবটাই কিন্তু স্পিরিচুয়াল। যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই স্পিরিচুয়াল ফিলিংকে অনুভব করতে পারছ ততক্ষণ কিন্তু ভূত বা প্রেম মিলিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।
জীবনের চড়াই উৎরাই থেকেই কি গৌরব আজকে অ্যাডভাইজার হতে পেরেছে?
দেখো, বড় হওয়ার পথে তো অনেককিছুই হয়। এখন কেন হল এই বিষয়টা নিয়ে না ভেবে কী করে এটা থেকে বেরিয়ে আসা যায় সেটা দেখতে হবে। শুধু তাই নয়, আমি যে গানগুলো লিখতাম সেটায় মোটিভেট করার চেষ্টা করতাম। আমরা হারতে পারি না। আমি এটাকে মোটিভেশনাল বলি না, আমি চেষ্টা করি যাতে পরিষ্কার ভাবে মেন্টাল ব্লকেজ কমাতে পারি।
গৌরবের মেন হাতিয়ার কি কণ্ঠের মুন্সিয়ানা?
এটা তো সবথেকে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। কোনও কথা এক্সপ্রেস করতে গেলে সুন্দর কণ্ঠস্বর, বলার ধরণ এগুলো অবশ্যই মানে রাখে। এমন বহু মানুষ আছেন যারা আমার থেকে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। এক্সপ্রেশন সকলকে আলাদা করে। যারা সাংবাদিক হন, তাঁদেরও এই বিষয়ে দখল রাখে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যর্থতাকে কাটিয়ে ওঠার কোনও টোটকা?
ব্যর্থতা তো পার্ট অফ লাইফ। এটাকে তো মেনে নিতেই হবে। আমাদের চ্যানেল গ্রাফেও তো রিচ ডাউন থাকে। ব্যর্থতা এলে ট্রাই কর। চেষ্টা ছাড়লে চলবে না। শুধু সোশ্যাল মিডিয়া কেন, নিজের জীবনেও ব্যর্থতা এলে থামলে চলবে না। আমায় তো অনেকদিন অবধি লোকজন চিনতও না।
নিজেকে পারফেক্ট করে তুলতে পেরেছ?
না, ওরম ভাবে নিজেকে পারফেক্ট করে তোলা যায় না। পারফেক্ট কী আদৌ কিছু হয়? এটা সম্ভব নয়। একটা মানুষ কখনও পারফেক্ট হতেও পারে না। ক্যামেরার সামনে আমায় যে ভগবান ভাবে, সে আমায় বাস্তবে দেখলে ভাববে এর মত হব না। এমনকি সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এটা হয়। এক ছাদের তলায় থাকতে শুরু করলেই যত দোষ চোখে পরে। যারা মেনটেইন করতে পারে তাঁদের ক্ষেত্রে ঠিক আছে।
কোনওদিন সাইকোলজিস্ট হতে ইচ্ছে হয় নি?
না, আমি কোনোদিন সেরকম সক্রিয় ভাবে এই পেশায় নিজেকে নিতে চাই না। আমার মানুষের মন বুঝতে ভাল লাগে। বেশ এটুকুই! মানুষকে নিয়ে কাজ করতে ভাল লাগে।
নিজের পেশা যদি পরিবর্তন করতে হয়?
দেখা যাবে কি করব! আমি খুব কমিউনিকেট করতে পছন্দ করি, তাই যেখানেই যাই না কেন আমি ঠিক বেরিয়ে যেতে পারব।
প্রেত নাকি প্রেম - তোমার কোনটা পছন্দ?
আমার তো প্রেত পছন্দ। আমায় অপশন দিলে ভূতের সিনেমা দেখব। কারণ প্রেম বিষয়টাও রহস্য নেই। প্রেত বিষয়টা রহস্য। একটা সময় পর প্রেমে সব রহস্য হারিয়ে যায়। রহস্য থাকলেই সেটা প্রেম। প্রেত সবসময় রহস্য।
অনেকেই বলে ক্রিয়েটররা এখন দূরত্ব বজায় রেখে চলে, কী বলবে?
আমি দূরেই থাকতে চাই। আমি একজন ক্রিয়েটর। আমি যদি দূরেই না থাকি, তাহলে ক্রিয়েট করব কি করে? ভেবে চিন্তে তো কাজ করতে হয়, লিখতে হয়। আমার স্পেস বা একাকিত্ব প্রয়োজন। সবসময় লাইক কমেন্ট এই নিয়ে বসে থাকলে আর কি হবে। যতদূরে থাকা যাবে তত ভাল কিছু বেরবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যদি কিছু বন্ধ করতে চাও তবে কি বদলাবে?
ধর্মবিদ্বেষী কথাবার্তা বলা বন্ধ করে দেব। রাজনৈতিক দলগুলোর ব্লু টিক দেওয়া বন্ধ করে দেব। রঙ আমার কাছে কিছু ম্যাটার করে না। দেশ চালানোর জন্য অনেক অভিজ্ঞতা লাগে। অল্প বয়সীদের অনেকেই ধেরিয়ে দেয়। সবাই তো বিবেকানন্দ ডিরোজিও হয় না। অভিজ্ঞতা দরকার। আমার ওদের ভাল লাগে না। এবার কারণটা অনেক বড়, পলিটিকাল বিষয় ভাল লাগে না।