১৩৮ কোটির দেশ আমাদের এই ভারতের একটা বড় অংশই এখনও দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে। হতদরিদ্র এই মানুষগুলোর আজও দু'বেলা দু'মুঠো খাবার জোটে না। অথচ, যাঁদের হাতে অর্থের কোনও অভাব নেই, তাঁদের দেখে বোঝা দায় যে তাঁরাও এই একই দেশের নাগরিক! বিশেষত, এদেশের ধনী পরিবারগুলি বিয়ের অনুষ্ঠানে যেভাবে খরচ করে, তাতে ভারতে দরিদ্রদের উপস্থিতি বিশ্বাস করাটাই বোধ হয় কিছুক্ষণের জন্য কষ্টকর হয়ে ওঠে!
তবে সবথেকে উদ্বেগের বিষয় হল, খাদ্যের অপচয়। একদিকে যখন গরিবকে খালি পেটেই রাতে ঘুমোতে যেতে হয়, অন্যদিকে এই এলাহি বিয়েবাড়িগুলিতে কিলো-কিলো খাবার স্রেফ ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়! সোশাল মিডিয়ায় এমনই এক অপচয়ের ছবি তুলে ধরেছেন এক আই.এ.এস আধিকারিক। আপাতত সেই ছবি ভাইরাল।
অবনীশ শরন নামে ওই সরকারি আধিকারিক যে ছবি তাঁর ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি অস্থায়ী ডাস্টবিনের সামনে এক সাফাইকর্মী বসে রয়েছেন। তাঁর সামনে মাটিতে ডাঁই করা রয়েছে খাবারের স্তূপ! চারপাশে সারি দিয়ে সাজানো রয়েছে সাদা রঙের এঁটো প্লেট। সেইসব পরিষ্কার করতে ব্যস্ত রয়েছেন ওই যুবক। তখনই এই ছবিটি তোলা হয়েছে। অবনীশের এই ছবি নেট নাগরিকদের মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, আগামী দিনে গোটা বিশ্বেই খাদ্যসঙ্কট প্রবল হবে। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। সবথেকে বড় কথা হল, ভারতের অসংখ্য মানুষের কাছে পেট ভরা খাবার কেনার মতো অর্থই নেই। তারপরও ধনী পরিবারগুলির অনুষ্ঠানে কেন কোনও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় না? সবথেকে বড় কথা, কোভিড পরিস্থিতিতেও এত জাঁকজমকের অর্থ কী? যেখানে অসংখ্য মানুষ তাঁদের রুজি হারিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন, সেখানে এমন আয়োজনকে আদৌ সমর্থন করা যায় কি? এমনই অসংখ্য প্রশ্ন তুলেছেন টুইটারেত্তিরা। অবনীশ এই ছবির মাধ্যমে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকেই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, "আপনার ওয়েডিং ফোটোগ্রাফার যে ছবিটি তুলতে পারেননি। খাদ্যের অপচয় বন্ধ করুন।
এখনও পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষ এই টুইটে লাইক করেছেন। কমেন্টও করেছেন অসংখ্য ফলোয়ার। তাঁদের একাংশ মনে করছেন, যাঁরা অপচয়ে অভ্যস্থ, তাঁদের কোনও দিনই হুঁশ ফিরবে না। তাই অবিলম্বে এই বিষয়ে কড়া আইন আনা দরকার। বাকিরা মনে করছে, অতিরিক্ত খাবার এভাবে অপচয় না করে তা অভাবী, দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া যেতে পারে। তাতে অন্তত কিছু মানুষের পেট ভরবে। যাঁদের সত্যিই খাবারের প্রয়োজন রয়েছে। তবে মতামত যাঁর যাই হোক, অবনীশের পোস্ট করা ছবি সকলকেই হতবাক করে দিয়েছে। খাদ্যের অপচয় নিয়ে আমজনতাকে ভাবতে বাধ্য করেছে। তবে প্রশ্ন হল, এই ভাবনার স্থায়িত্ব কতদিন?