গত বছরের আগস্টে নতুন করে আফগানিস্তান (Afghanistan) দখলে নিয়েছে তালিবান। ফের আতঙ্কের ছায়া গোটা দেশে। একের পর এক বীভৎসতার ছবি সামনে আসতে শুরু করে। প্রকাশ্যে মহিলাকে হেনস্থা করা থেকে শুরু করে হালিকপ্টারে মৃতদেহ ঝুলিয়ে রেখে কাবুলের আকাশে চক্কোর কাটতে দেখা গিয়েছে। সংগীত শিল্পীর সামনে তার বাদ্যযন্ত্রকে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে দিতেও দেখা গেছে। এত কিছুর পরেও কিন্তু এই দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় গত ১০ বছর ধরে চলছে একটি স্কুল। সেখানকার পড়ুয়াদের অধিকাংশই মেয়ে। ঘোর তালিবান জমানাতেও বন্ধ হয়নি সেই স্কুল। এমনই অবাক করা খবর সামনে আসতেই এমন উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সারা বিশ্বের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ।
এই স্কুল চালান ফ্রেশতা। বছর বাইশের এক তরুণী। মাত্র ১২ বছর বয়সেই ছোট্ট ফ্রেশতা এই স্কুল খুলে ফেলেছিল। আফগানিস্তানের অন্যান্য প্রদেশের মেয়েদের মতোই পাহাড় ঘেরা এই প্রদেশেও মেয়েদের শিক্ষার হার খুবই কম। ২৫ শতাংশের মতো। যেটুকু শিক্ষার আলো পৌঁছেছে, তার সিংহভাগ কৃতিত্ব ফ্রেশতার। তিনিই এই এলাকার একমাত্র স্নাতক। কয়েক মাস আগেই বামিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়েছিলেন।
২ ঘন্টা ধরে চলে পঠনপাঠন। নানা প্রান্ত থেকে ৪ থেকে ১৭ নানা বয়সের পড়ুয়ারা আসে পড়তে। কিন্তু তালিবানি জমানায় কীভাবে জিনের স্কুল খোলা রেখেছেন এই তরুনী? ‘আল জাজিরা টিভি’কে দেওয়া একান্ত এক সাক্ষাতকারে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমার স্কুল ছিল অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ও রঙিন। কিন্তু তালিবান যখন বামিয়ানে ঢুকে পড়ল আমার বন্ধুরা আমাকে সাবধান করে দিয়েছিল। আমি সব পোস্টার ও আঁকা ছবি যা টাঙানো ছিল সব খুলে ফেলি। আসলে সবাই ভয় পাচ্ছিল। একে তো আমি স্কুল চালাই। তার ওপরে মেয়েদের পড়াই। আমি সব পেন আর রং একটা ব্যাগে ভরে সামনের নদীতে ফেলে দিই।”
স্কুল থেকে কোনও রোজগার নেই ফ্রেশতার। কচ্চিৎ যেটুকু সামান্য অনুদান আসে, তা স্কুলের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে লাগান তিনি। নিজের স্বপ্নের স্কুলকে আগামী দিনেও একই ভাবে চালিয়ে যেতে চান এই অসমসাহসী আফগান তরুণী। শিক্ষা খাদ্য সহ একাধিক সংকটে জর্জরিত এই দেশ। এবিষয়ে ফ্রেশতা জানান, শিক্ষার আলোকেই আজকের সব অন্ধকার দূর করা সম্ভব।