সেই স্কুলজীবন থেকে টিনটিনের অন্ধভক্ত। এতটাই অনুপ্রাণিত টিনটিন এবং তার পোষা কুকুর স্নোয়ি'র (বাংলা অনুবাদে কুট্টুস) দ্বারা, যে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে টোটো করে ঘুরে বেড়িয়েছেন সারা পৃথিবী। নেলউইন আলদ্রিয়ানসিয়া নামে ইন্দোনেশিয়ার এই বাসিন্দা শুধু যে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়ার অন্যান্য দেশ, লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ, এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ঘুরেছেন তাই নয়, প্রতিটি দেশে মিলিয়ে মিলিয়ে খুঁজে বের করেছেন টিনটিন কমিকসে বর্ণিত একাধিক জায়গা, এবং ছবি তুলেছেন সেসবের। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া এবং হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হয়েছে ছবিগুলি।
তাঁর নিজের ব্লগে নেলউইন লিখেছেন, প্রায় ১০ বছর ধরে টিনটিনের দেখানো পথে ভূপর্যটন করে চলেছেন তিনি, তবে এখনও এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে যাওয়া বাকি, যেমন সাংহাই, তিব্বত, কঙ্গো, পেরু, ইত্যাদি। তবে ৩০টির বেশি জায়গায় ইতিমধ্যে পা রেখেছেন নেলউইন, যদিও তাঁর সফরে ছিল না কুট্টুস, ছিলেন না ক্যাপ্টেন হ্যাডক, প্রফেসর ক্যালকুলাস, বা টমসন অ্যান্ড টম্পসন। দেখে নিন তাঁর সফরের কিছু মাইলফলক:
রেড স্কোয়ার, মস্কো (টিনটিন ইন দ্য ল্যান্ড অফ দ্য সোভিয়েতস, ১৯৩০)
প্রাক্তন সোভিয়েত রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর প্রবাদপ্রতিম রেড স্কোয়ার প্রতি বছর দেখতে যান লক্ষ লক্ষ পর্যটক। এই স্কোয়ারের চারপাশে রয়েছে রুশ সরকারের সদর দফতর ক্রেমলিন, লেনিনের সমাধি, এবং সেন্ট বেসিল চার্চ, যার গম্বুজ বিশ্ববিখ্যাত। তার প্রথম প্রকাশিত অ্যাডভেঞ্চারে ১৯৩০ সালে মস্কো যায় টিনটিন, এবং নেলউইন যান ২০১৭-র এপ্রিল মাসে।
নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (টিনটিন ইন আমেরিকা, ১৯৩২)
টিনটিন সিরিজের তৃতীয় বই এটি, প্রথম প্রকাশ ১৯৩২। এই বইয়ের দুই অন্যতম অকুস্থল শিকাগো শহর এবং আমেরিকার আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের কাল্পনিক গ্রাম, রেডস্কিন সিটি। বইয়ের শেষে নিউ ইয়র্ক বন্দর থেকে জাহাজে করে আমেরিকা ছাড়ে টিনটিন, যেখানে নেলউইন পৌঁছে যান ২০১১ সালে।
আইফেল টাওয়ার, প্যারিস, ফ্রান্স (প্রিজনারস অফ দ্য সান, ১৯৪৯)
এই বইটি যতদিনে প্রকাশিত হয়, ততদিনে পশ্চিমী দুনিয়া জুড়ে নাম ছড়িয়ে পড়েছে টিনটিন এবং তার সৃষ্টিকর্তা জর্জেস রেমির, ছদ্মনাম আর্জে। মূল অ্যাডভেঞ্চারের প্রেক্ষাপট দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু, কিন্তু টিনটিনের পিছু পিছু ধাওয়া করে দুই অকর্মণ্য গোয়েন্দা টমসন এবং টম্পসনের ধারণা জন্মায়, কোনও উঁচু জায়গায় লুকিয়ে আছে সে। কেন? কারণ তাঁদের পেন্ডুলাম তাই বলছে। অতএব চলো আইফেল টাওয়ার! নেলউইন এখানে ছবি তোলেন ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে।
ব্রাসেলস, বেলজিয়াম (দ্য ক্যালকুলাস অ্যাফেয়ার, ১৯৫৬)
'দ্য ক্যালকুলাস অ্যাফেয়ার' ছিল টিনটিন সিরিজের ১৮ নম্বর বই। আবারও একবার গল্পের মূল প্রেক্ষাপট সিলডাভিয়া নামে পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত একটি কাল্পনিক দেশ, কিন্তু কিছু ঘটনা ঘটে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসেও, যেখানে নেলউইন যান ২০১৪ সালে।
চুনাপাথরের পাহাড়, ডোভার, ইংল্যান্ড (দ্য ব্ল্যাক আইল্যান্ড, ১৯৩৮)
ব্রিটেনে জাল নোটের চক্র ফাঁস করতে তদন্তে নামে টিনটিন, এবং দুষ্টু লোকেরা তাকে একসময় সাসেক্স অঞ্চলের খাড়াই পাহাড়ের গা বেয়ে ফেলে দেয়। ঘটনাস্থল, ডোভারের চুনাপাথরের পাহাড় (হোয়াইট ক্লিফস অফ ডোভার)। এখানেও নেলউইন চলে যান ২০১৪ সালে।
কুতব মিনার, দিল্লি, ভারত (টিনটিন ইন টিবেট, ১৯৬০)
এই অভিযানে টিনটিনকে বিশেষভাবে ভারত এবং নেপালের নানা জায়গা ঘুরে দেখতে হয়, যেগুলি আজও পর্যটকদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়। দিল্লিতে কুতুব মিনার, লাল কেল্লা, হুমায়ুনের সমাধি, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে স্বয়ম্ভূনাথের মন্দির এবং পাটন দরবারে পদধূলি পড়ে টিনটিন এবং ক্যাপ্টেন হ্যাডকের। এই সব জায়গা নেলউইন ঘুরে দেখেন ২০০৬ থেকে ২০১৬-র মধ্যে।
বেলগ্রেড দুর্গ, বেলগ্রেড, সার্বিয়া (কিং অটোকারস সেপ্টর, ১৯৩৯)
এই গল্পের মূল প্রেক্ষাপটও আবার সেই কাল্পনিক সিলডাভিয়া, যার সঙ্গে যুদ্ধ চলছে প্রতিবেশী কাল্পনিক রাষ্ট্র বরদুরিয়ার। সম্ভবত এই দুটি দেশ সার্বিয়া এবং বসনিয়ার কল্পিত রূপ। সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডের দুর্গই সম্ভবত অটোকার প্রাসাদের অনুপ্রেরণা।
পেত্রা, জর্ডান (দ্য রেড সি শার্কস, ১৯৫৮)
এই অভিযানে আবদুল্লা নামক বিচ্ছু বাচ্চার বাবাকে বাঁচাতে খেমেদ (প্যালেস্টাইন) পৌঁছে যায় টিনটিন, সঙ্গে ক্যাপ্টেন হ্যাডক। পরে জানা যায়, পাহাড়ে লুকিয়ে আছেন আবদুল্লার বাবা, যা আজকের যুগের জর্ডানের পেত্রার নাবাতিয়া মন্দির। অগাস্ট ২০১৭-য় ছবিটি তোলেন নেলউইন।
কেমাইয়োরান এয়ারপোর্ট, জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া (ফ্লাইট ৭১৪ টু সিডনি, ১৯৬৮)
ঘরের পাশেই এই জায়গায় পৌঁছতে নেলউইনকে অপেক্ষা করতে হয় ২০১৮ পর্যন্ত। বর্তমানে পরিত্যক্ত এই এয়ারপোর্ট টাওয়ারে উঠতে গেলে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়। শহরের মাঝেই এক জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে এই টাওয়ার।
এছাড়াও আরও অজস্র জায়গার ছবি রয়েছে নেলউইনের সংগ্রহে। জন্মান্তর বলে সত্যিই কিছু থেকে থাকলে তাঁকে অনায়াসে এ যুগের টিনটিন বলা যেত!