সোশ্যাল মিডিয়ায় সোশ্যাল বার্তা পৌঁছানোই আসল। ক্যামেরার সামনে বসে শুধু আজগুবি বলে যাওয়া একেবারেই ক্রেডিট নয়। অন্তত সহজ ভাষা সোজা ভাবেই বলতে পছন্দ করেন ইউটিউবার ঝিলাম গুপ্তা। আর এবার নিজের কেরিয়ার থেকে শুরু করে সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার - সবকিছুই শেয়ার করলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে।
কেমন আছ ঝিলাম?
দারুণ! একদম ভাল, ভাল না থেকে উপায় আছে কী, একটু চাপ যাচ্ছে এই যা।
সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম অথবা ইউটিউবের প্ল্যানিং টা কীভাবে এল?
এল বলতে, মাধ্যমটি যখন সোশ্যাল। তখন সেখানে যেকেউ বার্তা দিতে পারে। আমিও তাই। সোশ্যাল মিডিয়ায় সামাজিক কথা বার্তা বললেই হয় না। বরং তাতে তথ্য থাকতে হয়। তো এইভাবেই, আমিও বলতে শুরু করলাম। লোকজন শুনতে শুরু করল, তাদের ভাল লাগল এভাবেই।
অনেকেই দাবি করেন, ঝিলাম বেশ স্পষ্ট কথা বলে - আদৌ এটা কতটা সত্যি?
( হেসে ) হ্যাঁ! আমার উচ্চারণ খুব স্পষ্ট। সেইদিকে আমি সত্যিই স্পষ্ট কথা বলি। আর কী বলো তো, আমরা বলতে অনেক কিছুই চাই। কিন্তু সেটা সবসময় সম্ভব হয় না। বেশি কিছু বলতে গেলে লোকজন হুলিয়ে খারাপ কথা বলবে। অবান্তর কথা না বললেই হল। অন্তত আমি মনে করি হাসির ভিডিও হোক বা ফ্ল্যাট মেসেজ সেটা যেন যুক্তিযুক্ত হয়। তাই মন মর্যাদা রেখে আমি যতটা পারি ততটা বলি।
সব ইউটিউবারদের মধ্যে জোরালো কণ্ঠ আদৌ রয়েছে?
সকলেরই রয়েছে কম বেশি। প্রত্যেকেই নিজের মত করে বলার চেষ্টা করে। কিন্তু ওই যে, কণ্ঠরোধ করে দেওয়ার বিষয়টা থাকে। সেই ভয় টাও সকলের মধ্যে কাজ করে।
বাংলা সিরিয়াল আর ঝিলাম, এক অবিচ্ছেদ্য বিষয়! কী বলবে?
সত্যি কথা বলতে গেলে বাংলা সিরিয়ালের প্রতি আমার কোনও রাগ নেই। আমার রাগ এর প্লট এবং গল্পের প্রতি। একেতেই দিনের পর দিন ধরে এই সিরিয়াল চলবে। আমরা যখন ছোট তখন হত জন্মভূমি, সেটা ভাল ছিল। আর তারপরে এল রাশি! এই যে রাশি এসে একটা ট্রেন্ড সেট করল, গ্রামের গরীবের মেয়ে আর বড়োলোকের ছেলে - এটাই চলল এবার।
ধারাবাহিক নিয়ে যে এত রোস্ট কর তার মূল কারণ কী এটাই?
আর নয়তো কী? নাহলে এই যে অবাস্তব সিরিয়াল। কেন? গ্রামে বড়োলোকের মেয়ে হয় না? এখনকার দিনে এরকম মেয়ে কোথায়, যে এত আঘাত কূটকচালি সহ্য করার পরেও শাশুড়িকে কিডনি দিতে যাবে? নিকুচি করেছে বলে বেড়িয়ে যাবে। তাহলে কেন এত মেয়েদের হ্যাটা করা হয়! এইজন্য আমার ভাল লাগে না।
এরমধ্যে কোনও সিরিয়াল তোমার ভাল লেগেছে?
( একটু ভেবে ) আমি অনেক শখ নিয়ে লালকুঠি দেখতে বসেছিলাম। কিন্তু ভূতের মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কেউ কেউ যে কী করে বলে লালকুঠি দেখলে ভয় লাগে, আমি জানি না। তবে এখনকার সিরিয়ালে ওমেন এমপাওয়ারমেন্ট এর কিছুই দেখানো হয় না সব বুজরুকি।
কোনটা ক্রিঞ্জ কনটেন্ট তোমার কাছে?
এটা একটা ভিন্ন ধারণা রয়েছে আমার কাছে। আমি বলব চিপ। আর এটা সকলের কাছে সমান নয়। আমার কাছেও নয়। একজন তুমি যদি কেয়া বৌদি যিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সোনা বাছা করে তার কথা বল ওটা চিপ আমার কাছে। আবার অনেকেই বলবে পোশাকের দিক থেকে বিচার করলে তো সেলেবরাও এসব করেন। তো তুমি কাউকে বিচার করতে পারবে না।
বাস্তবের ঝিলাম আর ক্যামেরার ওপারের ঝিলাম একই?
একদম না! একেবারেই না। ওই যে আমি 'স স' করে কথা বলি, ল্যাদ খেয়ে কথা বলি - ওটা আমি একটা চরিত্র প্লে করি জাস্ট। আমি একদম এরম নয়। হ্যাঁ! বাস্তবে খুব কুঁড়ে আমি। ভীষণ অলস। সেই কারণে ভিন্ন ক্যারেকটার প্লে করতে পারি না সেজেগুজে। কিন্তু হ্যাঁ হাসাতে পারি। আমি নিজে হাসি না অন্যকে হাসাই।
তোমার ফ্যানেরা বলেন, তুমি নাকি খুব রাসভারি?
এই মেরেছে! আমি তো শুধু রাসভারি মানে কমল মিত্রকে জানতাম ( হাসি )। না না, আমার নিজেরও রাশ হালকা। আমি মজা করতে, আনন্দ করতে ভালবাসি। প্রচুর কথা বলতে ভালবাসি। কিন্তু আমি শুনেছি আমার মেয়ে ভক্ত নাকি বেশি! ( হাসি )।
ইউটিউবারদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার প্রবণতা, এই নিয়ে কী বলবে?
আসল কথা টা হচ্ছে, তাদেরকেও মেকাররা চাইছেন। একজন নতুন সদস্য যে কোনোদিন ক্যামেরা ফেস করে নি সে অনেক কিছুই জানেন না। কিন্তু একজন ক্রিয়েটর সে নিজেই এই কাজটা করে। স্ক্রিপ্ট থেকে শট, অভিনয় সবটাই করে - তাই কিছুটা আন্দাজ তার রয়েছে। তাই একটা প্লাস পয়েন্ট তো রয়েছেই বলতে পারো।
ইন্ডাস্ট্রিতে মাঝেমধ্যেই তারকাদের সঙ্গে তোমায় দেখা যায়, কিরকম উপভোগ কর?
ভালই লাগে। আমি সত্যি কথা বলছি, এটুকু বুঝেছি যে উনারা মানুষ ভাল। এত সাফল্যের পরেও কোনও বাড়াবাড়ি নেই, স্টারডামের অহংকার নেই। ওরা এত সুন্দর ভাবে মিশে যায় আমার সঙ্গে, যে মনেই হয় না। এটা একজন সেলেবের থাকা উচিত।
ইউটিউবই প্রফেশন হিসেবে কেন?
তার কারণ, আমি কারওর কথা শুনে কাজ করার মানুষ নয়। তোষামোদ করতে পারি না। বেশি কথা সহ্য করতে পারি না। তাই নিজের মত করেই কাজ করা ভাল। প্রচুর চাকরি ছেড়েছি, ইউটিউবে কারওর অধীনে যে কাজ করতে হবে না আমায়, এটার জন্যই।