পুরুষ থেকে নারী হয়েও সন্তানধারণ সম্ভব, বার্তা দিতেই দৃষ্টান্ত স্থাপন, বাবা-মা হলেন সমকামী দম্পতি। ইতিহাসের সাক্ষী থাকল কেরল। দিন কয়েক আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের বাবা-মা হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আনেন এই সমকামী দম্পতি। পাশাপাশি নিজেদের বেশ কিছু ফটোশ্যুটের ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোডও করেন, যা নিমেষেই ভাইরাল হয়ে যায়।
দম্পতি জানান, 'আমরা একটি সন্তান চেয়েছিলাম, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এক বড় বার্তা সমাজের সামনে তুলে ধরতে পারে'। পাভেল জানান, অনেক ভেবেচিন্তে তারা সিদ্ধান্ত নেন সন্তান নেওয়ার। কোঝিকোড়ের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারদের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছেন এই দম্পতি। ৮,ই ফেব্রুয়ারি কোঝিকোড়ের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন জাহাদ ফাজিল। 'ট্রান্স দম্পতি' নবজাতকের 'লিঙ্গ পরিচয়' এখনও প্রকাশ করেননি। সন্তানের জন্ম দিয়েই জাহাদ বলেন, "আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। আমাদের সন্তানের জন্ম তাদের প্রতি আমাদের জবাব, যারা আমাদের সমর্থন করেছেন, সাহস জুগিয়ে গিয়েছেন। তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই। জিয়া যোগ করেন, “নবজাতক এবং জাহাদ, দুজনেই ভাল আছে"।
কোঝিকোড়ের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে সকাল ৯.৩০ নাগাদ সুস্থ সন্তানের জন্ম দেন জাহাদ। চিকিৎসকরা বলেন," প্রসবের সময় জাহাদের শরীরে সুগারের মাত্রা বেশি ছিল, তা নিয়ে কিছু সমস্যা হলেও মা ও নবজাতক দুজনেই সুস্থ রয়েছেন"। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জও শিশুর জন্মের পর ট্রান্সজেন্ডার দম্পতিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজে মেডিকেল কলেজের আইএমসিএইচ (মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট) সুপারিনটেনডেন্টের সঙ্গেও কথা বলেছেন এবং তাদের সবরকম ভাবে সমকামী দম্পতিকে সাহায্য করার বার্তা দিয়েছেন। কোঝিকোড় মেডিকেল কলেজে প্রসবের পর জাহাদের চিকিৎসা চলছে।
দিন কয়েক আগেই সোশয়াল মিডিয়ায় নিজেদের ছবি পোস্ট করে প্রথম সন্তান প্রসঙ্গে সমকামী সম্পতি বলেন, “এই মুহূর্তে মাত্র পাঁচ-ছয়জন আছেন যারা এটা সম্পর্কে জানেন কিন্তু এখন আমি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সবাইকে আনন্দের এই খবর আমি জানাতে চলেছি। অপেক্ষা করুন ধৈর্য ধরুন ফল পাবেন’ই”। কোন দত্তক সন্তান নয়, একেবারে বায়োলজ্যিকাল বাবা-মা হতে চান তাঁরা। সন্তান ধারণ প্রসঙ্গে দম্পতি বলেন, অনেকেই সমকামী বিষয় নিয়ে মজা করেন, অসম্ভব বলে ব্যাখ্যা করেন, কিন্তু আমরা এই অসম্ভবকেই সম্ভব করতে যাচ্ছি’। তারা চায় আর পাঁচটা সাধারণ দম্পতির মতো মাদার’স ডে, ফাদার’র্স ডে সহ সমস্ত ছুটি করতে। দম্পতি তাদের জীবন আগত নতুন অতিথিকে নিয়ে বেশ উত্তেজিত।
দম্পতির কথায়, “আমরা কখনই স্বপ্নে ভাবিনি যে ৩ বছর আগের এক সিদ্ধান্ত আমাদের চিরকালের জন্য জীবনসঙ্গী করে তুলবে, এবং আমাদেরকে বিশ্বের সামনে দাঁড়ানোর সাহস যোগাবে। এখন আমরা বাবা-মা হয়েছি। “আমরা আমাদের সন্তানকে নিয়ে উত্তেজিত”। আমরা আশা করছি যে সন্তান ধারণ করা এখন আরও স্বাভাবিক হবে। আপনি যদি সমলিঙ্গের দম্পতি হন তবে তাতে কিছু যায় আসে না। আপনি যেভাবে চান সেভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। কেরলের সরকারি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের গাইডকে কুর্নিশ জানিয়েছে তারা।