সাউথ-ইস্ট ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট প্রকাশ ঘোষ! পরনে পুলিশের পোশাক, পায়ে জুতো। ডিউটি করতে করতে কাজের ফাঁকে পড়ানোয় ব্যস্ত বছর আটের একটি বাচ্চাকে। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সে, তার মা পাশেই রাস্তার ধারের একটি খাবারের দোকানে কাজ করেন। ফুটপাথকেই বেছে নিয়েছেন সংসার হিসাবে। আর সেখানে থেকেই ‘মানুষ’ হওয়ার লক্ষে চলছে প্রতিদিনের লড়াই। আর তার স্বপ্নপুরনে পাশে পেয়েছেন ‘পুলিশ কাকু’কে! না শুধু পুলিশ কাকু বললে ভুল বলা হবে, ‘স্যারের’ দেখানো পথই এখন তার কাছে অনুপ্রেরণা।
Advertisment
বড় যে হতেই হবে তাকে। সংসারের হাল তো ধরতেই হবে। চোখের সামনে মায়ের কষ্ট দেখছে জন্মে থেকেই। কষ্ট করেই ছোট্ট ছেলের পড়াশুনা চালাচ্ছেন মা। ভর্তি করেছেন এক সরকারি স্কুলে। সন্তানকে নিয়ে অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা মায়ের। প্রথমে সেভাবে পড়াশুনায় মন ছিল না সন্তানের। আর সেই কথাই মুখ ফুটে ট্রাফিক সার্জেন্টকে বলে ফেলেন মা। এরপরই শুরু হয় ‘স্যারের’ তত্ত্বাবধানে প্রতিদিনের পড়াশুনা।
কাজের ফাঁকে অবসর সময় পেলেই পুলিশ ‘স্যারের’ কাছে চলে ছোট্ট ছেলের পড়াশুনার পাঠ। এখন পড়ায় মন বসেছে। ছাত্রের পারফরমেন্সে খুশি ‘পুলিশ স্যার’। বালিগঞ্জ আইটিআইয়ের ঠিক পাশে এখন এটাই রোজকারের ছবি। সকালে পুলিশ ‘স্যারের’ কাছে পড়া। রাত্রে হোম ওয়ার্ক! পরের দিন নিয়ম করে পড়া ধরা। বাদ যায়না কিছুই। এমন একটি বাচ্চার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিতে পেরে গর্বিত পুলিশ স্যারও।
তাঁর কথায়, “পরনে পোশাক, পায়ে গেটার্স থাকায় ফি দিন দাঁড়িয়েই ক্লাস নিতে হয়”। তাই হাতে রাখতে হয়েছে গাছের সরু ডাল। আর তাই দিয়েই চলে পড়াশুনা। ব্যস্ত রাস্তায় ট্রাফিক সামলানো থেকে শুরু করে খুদের পড়াশুনা সবটাই একা হাতে বেশ ভালভাবেই রপ্ত করেছেন প্রকাশ। কলকাতা পুলিশের তরফে কুর্নিশ জানানো হয়েছে এই সার্জেন্টকে। সেই সঙ্গে কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজেই ঠাই পেয়েছে প্রকাশের কাহিনী। আর এই কাহিনী মুহূর্তেই ভাইরাল হয়েছে। রাস্তার পাশে থাকা এক অসহায় পড়ুয়াকে সঠিক দিশা দেখানোর জন্য সকলেই পুলিশ স্যারের উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন।