কথায় বলে, অর্থই অনর্থের মূল। কথায় অবশ্য আরও অনেক কিছুই বলে, যেমন, অর্থকে কেন্দ্র করেই ঘুরছে এই দুনিয়া। অথবা, টাকায় কী না হয়। কিন্তু মহারাষ্ট্রের সাতারার এক ৫৪ বছর বয়সী বাসিন্দার কাছে সততা যে অর্থের চেয়ে অনেক এগিয়ে, তা প্রমাণ করে দিলেন তিনি।
টুকটাক নানারকম কাজ করে কোনোক্রমে দিনাতিপাত করেন ধনজী জগদলে। টাকার দরকার যথেষ্টই, অথচ সেই তিনিই দেওয়ালির দিন এক বাস স্টপে ৪০ হাজার টাকা কুড়িয়ে পেয়েও আত্মসাৎ না করে তা ফিরিয়ে দিলেন টাকার মালিককে। বলা বাহুল্য, তাঁর এই সততায় অভিভূত সকলেই।
যিনি টাকা ফেরত পেলেন, তিনি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ধনজীকে এক হাজার টাকা পুরস্কার দিয়ে চেয়েছিলেন, কিন্তু ধনজী নিলেন কত? মোট সাত টাকা, যা কিনা সাতারার মান তালুকায় তাঁর গ্রাম পিঙ্গালিতে যাওয়ার বাস ভাড়া। তাও এটুকুই বা নিলেন কেন? কারণ তাঁর পকেটে তখন পড়ে রয়েছে তিন টাকা।
আরও পড়ুন: ১১ লাখ টাকার বিদ্যুতের বিল মেটাতে বস্তা ভর্তি খুচরো পয়সা!
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ধনজী বলেন, "দেওয়ালির দিন আমি দহিওয়াড়ি যাই একটা কাজে, তারপর বাস স্টপে এসে দাঁড়াই। দেখি, কাছেই পড়ে আছে এক বান্ডিল নোট। আশেপাশের লোকজনের কাছে খোঁজ নিতে নিতে দেখতে পাই, খুব উদ্বিগ্নভাবে একজন কিছু একটা খুঁজছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারি, টাকাটা ওই ভদ্রলোকেরই।"
ধনজী আরও বলেন, "উনি আমায় বলেন, বান্ডিলে রয়েছে ৪০ হাজার টাকা, যা তিনি যোগাড় করেছিলেন তাঁর স্ত্রীর অপারেশনের জন্য। আমায় উনি হাজার টাকা দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমি স্রেফ সাত টাকা নিই, কারণ আমার গ্রাম পর্যন্ত বাসভাড়া ১০ টাকা, আর আমার পকেটে মাত্র তিন টাকা ছিল।"
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে ‘নায়ক’ অনিল কাপুর?
এখন অবধি ধনজীকে সম্বর্ধনা জানিয়েছেন সাতারার বিজেপি বিধায়ক শিবেন্দ্ররাজে ভোসলে, প্রাক্তন সাংসদ উদয়নরাজে ভোসলে, এবং একাধিক সংগঠন, যদিও কারও কাছ থেকেই কোনোরকম আর্থিক পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেন তিনি।
সাতারা জেলার কোরেগাঁও তহসিলের বাসিন্দা এবং বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী রাহুল বারগে ৫ লক্ষ টাকা দিতে চেয়েছিলেন ধনজীকে, যা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। "অন্য কারোর টাকা নিয়ে ঠিক স্বস্তি পাওয়া যায় না। আমি একটাই কথা সবাইকে বলতে চাই, সৎভাবে বাঁচুন।"