সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয়তা মানেই ডিজিটাল ক্রিয়েটর নাকি সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার - সমাজের উদ্দেশ্যে বার্তা দেওয়াই আসল লক্ষ্য নাসিফ আখতারের। স্ট্যান্ড আপ কমেডি দিয়ে শুরু করলেও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয় নাম নাসিফ। সেলেবদের সমালোচনা হোক কিংবা নিজের অভিনয় দক্ষতা - খোলামেলা আড্ডায় সবকিছুই শেয়ার করলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে।
কেমন আছ নাসিফ?
এই তো বিন্দাস! চলছে, আমি সবসময় ভাল থাকি।
নাসিফ আখতারের যাত্রাপথ কীভাবে শুরু হয়েছিল?
এটা বলতে পারো আমি সবার আগে স্ট্যান্ড আপ কমেডি করতাম। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও সেভাবে শুরু করিনি। কিন্তু করোনা মহামারীর সময় বাড়িতে বসে এত বিরক্ত লাগছিল যে কিছু একটা করতে হত। তখনই ভিডিও বানাই, ব্যাস! ওভাবেই শুরু। আসলে ভেবে বানাই নি, দেখলাম ভাইরাল হয়ে গেল, তাই আর থামি নি।
সেলেবদের বেশি রোস্ট করতে ভাল লাগে নাকি অন্য কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের?
সত্যি বলতে গেলে রোস্ট আমার একদম আর ভাল লাগে না। তাই সেসব করিও না। তবে হ্যাঁ স্পেসিফিক ভাবে বলতে গেলে আমার সেলেবদের নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে ভাল লাগে। ( হাসি )
নিজেকে ডিজিটাল ক্রিয়েটর বলবে নাকি সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার?
ডিজিটাল ক্রিয়েটর হতে গেলে সোশ্যাল বার্তা তো দিতেই হবে। কারণ পাঁচজন মানুষ যদি আমায় দেখে কিছু দেখে তার মানেই ওরা ইনফ্লুয়েন্স হচ্ছে। এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া। আমি মনে করি আমায় যাঁরা ফলো করে তাঁরা আমায় দেখে ইনফ্লুয়েন্স হয়।
এই যে ভিডিওর মধ্যে স্ল্যাং কিংবা গালাগাল বলো, এটা কীভাবে নেয় তোমার ফ্যানরা?
আমার যাঁরা ফ্যান তাঁরা কিন্তু আমার বন্ধু তাই বলতে পারো ওদের সঙ্গে আমি সেইভাবেই কথা বলি। গালাগাল দেওয়াটাও একটা পার্ট। ওঁরা সেটা নিয়ে আজ অবধি কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তাই বলে এটা না যে আমি আমার মা বাবার সামনে গিয়ে গালাগাল দেব! অনেকেই এসে বলে আমি সবার সামনে ফ্রিতে স্ল্যাং দিতে চাই, কিন্তু এটা ঠিক নয়। একেবারেই ঠিক নয়। আমি তাঁদের না করি এই কাজগুলো করতে।
নাসিফ কি স্পষ্ট কথা বলতে ভালবাসে?
একেবারেই! আমি একদম রেখে ঢেকে কিছু বলতে পারি না। যেটা খারাপ লাগে সবার সামনে বলি। আমি সহজ কথায় খুব ফ্লেক্সিবল। একেবারেই কোনও পুরুষতান্ত্রিক হাবভাব নেই। যেটা খারাপ সেটা খারাপ আমার কাছে।
এই যে স্কুল কলেজ নিয়ে অনেক ভিডিও বানাও তুমি কী করে ভাবনা এল যে এই জায়গায় পড়ুয়ারা এমন হয়?
( হেসে ) ওটা একটা ধারণা। মোটামুটি কোন ক্যাম্পাসে কী হয় এটা অনেকেই জানে। আর আমার কলেজ লাইফ একদম বোরিং ছিল। সেই জন্য আমি চাই বাকিরা আনন্দ করুক। এই যে আমি ভিডিও বানাই তাতে লোকজন তাদের বন্ধুদের ট্যাগ করে। আমার সত্যিই এটা ভাল লাগে। বাকি সব ক্যাম্পাসে বন্ধুরা ছড়িয়ে আছে, আইডিয়া একটা চলেই আসে।
ইউটিউবে অভিনয় নাকি স্ট্যান্ড আপ কমেডি - কোনটা তোমার কাছে বেশি শক্ত?
সত্যি বলতে গেলে আমি অভিনয় পারি না। আমায় দিয়ে হয় না অভিনয়। আর স্ট্যান্ড আপ কমেডির একটা আলাদা ভাইব রয়েছে। সামনে অডিয়েন্স। আমার কাছে দুটো আলাদা।
স্ট্যান্ড আপ কমেডির সময় নিজেকে গুটিয়ে রাখো নাকি যেকোনও লেভেলের জোকস বল?
এটা অডিয়েন্সের ওপর নির্ভর করে। সামনে যখন যেরকম। এমন অডিয়েন্স পেয়েছি যারা খারাপ জোকস সেভাবেই নিয়েছে। আমিও ফালতু অনেক কিছু বলেছি। কিন্তু আবার অনেক সময় উল্টোটাও হয়। তখন একটু সামলে নেওয়া নিজেকে।
সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে এত সমস্যা কেন?
( হেসে ) নানা! ওনাকে নিয়ে কোনও রাগ সমস্যা কিছু নেই। উনি লেজেন্ড, তাঁকে ধরাছোঁয়ার ক্ষমতা নেই কারওর। তবে তার মানে এটা নয় যে কেউ ওঁকে নিয়ে সমালোচনা করতে পারবে না। আমি একজন মানুষ হিসেবে তাঁকে নিয়ে আলোচনা করতেই পারি। ওঁর দক্ষতা পারদর্শিতা নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই।
ওঁকে ধরে কি ফেমাস হওয়ার ইচ্ছে ছিল...
হ্যাঁ, অবশ্যই! আমি এরকম করি তো। যাঁকে নিয়ে বললে বেশি ভিউস আসবে তাঁদের নিয়ে ক্রিটিসাইজ করতে ভাল লাগে।
সমাজে যদি কিছু পরিবর্তন করতে চাও তাহলে সেটা কী হবে?
বলতে পারো কমিউনিকেশন! এই সমাজে একজন মানুষ আজকাল কথা বলতে ভুলে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে সেটা আরও বাড়ছে। একজন মানুষ যে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কসে ভাল কথা বলে সামনে এলেই বোকা বোকা। কিন্তু কথা বলা খুব দরকার। কথা না বললে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে। তাই কমিউনিকেশনের এই ধারা আমি বদলাতে চাই।
এই যে ডিজিটাল ক্রিয়েটরদের মধ্যে অনেকেই সিনেমার জগতে জুড়ছেন এটা নিয়ে কী বলবে?
দেখ, সিনেমার আসল হল কনটেন্ট! সেটা যদি খারাপ হয় তাহলে কিছুই সম্ভব না। বং গাই-এর কলকাতা চলন্তিকা নিয়ে আমি বিশেষ কিছু জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি ওঁর অডিয়েন্স কিন্তু ওর মতো কনটেন্ট দেখার জন্য ওঁর কাছে থাকে। তাই ইউটিউবারদের নিয়ে সিনেমা বানালেও কনটেন্ট দারুণ রাখতে হবে নইলে সিনেমা ফ্লপ।