দুস্থের ‘সান্টা ক্লজ’কে মনে আছে নিশ্চয় সকলের! ১৩ বছর ধরে অভুক্তদের মুখে অন্ন তুলে দেন রানাঘাটের পাপিয়া কর। তার এই উদ্যোগ ইতিমধ্যেই সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে এসেছে। রানাঘাট স্টেশন চত্ত্বরে অভুক্ত মানুষদের কাছে স্বয়ং ‘ঈশ্বর’ পাপিয়া কর। সেদিন শীতের রাতে ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে রাত তখন প্রায় ১টা! চেনা মানুষগুলোর জন্য আলাদা করে তুলে রাখা খাবার মুখে তুলে দিতে হাজির হয়েছিলেন দুস্থের ‘সান্টা ক্লজ’ পাপিয়া।
ভাত, ডাল, সবজি, তরকারি, মাছ, মাংস, চাটনি, পাঁপড় এলাহি আয়োজনে মুহূর্তেই সংবাদ মাধ্যমের লাইম লাইটে এক আলাদাই জায়গা করে নেন তিনি। তবে পাপিয়া সেদিন জানিয়েছিলেন, কোনোরকম প্রচারের আলোয় আসা তাঁর উদ্দেশ্যে ছিল না, এটাই তার রোজের রুটিন। আর সেই তাগিদেই রাতের রানাঘাট স্টেশনে ছুটে আসা। পাপিয়ার ফেসবুক প্রোফাইলেও রয়েছে এমন অজস্র ছবি।
কেবল অভুক্ত মানুষদের মুখে খাবার তুলে দেওয়া নয়, সপ্তাহে একদিন রবিবার, কলকাতার রাস্তার পথশিশুদের পড়াশোনা এবং হাতের কাজের নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন তিনি। সময়টা ২০০৮ সাল। রানাঘাট স্টেশনে এক ভিখারি পাপিয়ার কাছে সামান্য কিছু খেতে চায়, সেই সময় তাঁর কাছে খাবার না থাকায় তিনি ওই অভুক্ত ভিখারিকে ১০ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। সেই থেকে শুরু পথ চলা।
সামান্য ১০ টাকা সেই মানুষটিকে যতটা খুশি করেছিল তা দেখে পাপিয়া স্থির করেন সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির পাশে দাঁড়িয়ে কিছু করতেই হবে। ভাবনা অনুযায়ী তিনি নেমে পড়েন তাঁর লক্ষে। পাপিয়ার কথায়, এইকাজে তাঁকে সব সময় অনুপ্রেরণা দেন তাঁর স্বামী। এবার আবারও পাপিয়া’র এক অভিনব উদ্যোগ নজর কেড়েছে সকলের। কী সেই উদ্যোগ? একটা ছোট ফেসবুক পোস্ট পাপিয়া’র! কী লেখা আছে সেই পোস্টে?
তাতে লেখা রয়েছে “২৫ শে জুন গোবিন্দর জন্মদিন উপলক্ষে আমি দেহ দান করছি। আমার কোনো বন্ধু বা পরিচিত যদি কেউ দেহদানে আগ্রহী হন তাহলে ওই দিন একটা দেহদান উপলক্ষে একটা ক্যাম্পের ব্যবস্থা করার ইচ্ছে আছে। কাউকে না পেলে ও আমি নিজেই সেদিন আমার দেহদান করতে উদ্যোগী হয়েছি। আশাকরি অনেককেই পাশে পাবো”।
আর এই পোস্ট ঘিরেই ফের একবার সমাজের প্রতি পাপিয়ার দায়িত্ব-কর্তব্য বোধের যে নমুনা মিলেছে তাকেই সেলাম ঠুকেছেন হাজারো মানুষ। অজস্র মানুষ পাপিয়ার এই উদ্যোগকে এগিয়ে আসার কথা জানিয়ে কমেন্টও করেছেন। রানাঘাট স্টেশন চত্ত্বরে ভিখারিদের মধ্যে পাপিয়া অতি পরিচিত এক মুখ। সকলেই যখন তাদের উপেক্ষা করে পাশ কাটিয়ে চলে যান সেই সময় পাপিয়া নিজের হাতে করে তাদের মুখে তুলে দেন দু’মুঠো অন্ন।
দিন দুয়েক আগেই পাপিয়ার এক পাতানো ভাই ‘ভিখারি গোবিন্দর জন্মদিনে’ দেহদানের ইচ্ছা প্রকাশের কথা জানিয়ে ফেসবুক-এ একটি পোস্ট করেছেন পাপিয়া কর। ফেসবুক পোস্টটিতে সকলকে দেহদানের মতো মহৎ কাজে এগিয়ে আসার বার্তা দিয়েছেন তিনি। গোবিন্দ’র কথা বলতে গিয়ে খানিক আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন পাপিয়া। প্রায় ১৪ বছরের সম্পর্ক! প্রথম দিনে নিজের হাতে কিছু’ই খেতে পারত না গোবিন্দ। তাকে পরম স্নেহে কাছে ডেকে নিজের হাতে করে খাওয়াতেন পাপিয়া।
নিয়ম করে ভাইফোঁটায় ফোটা দেওয়া থেকে রাখির দিনে প্রিয় ভাই গোবিন্দ’কে রাখিও পড়ান পাপিয়া। পাপিয়া এই কাজে পাশে পেয়েছেন তার স্বামীকে। আর প্রিয় ভাইয়ের জন্মদিন উপলক্ষে ফেসবুক পোস্টে দেহদানের অঙ্গীকার করে গোবিন্দ’র জন্মদিনকে সকলের কাছেই স্পেশাল করে তুলতে চেয়েছেন তিনি। আর সেই সঙ্গে সমাজের প্রতি তাঁর মহানুভবতাকে তুলে ধরেছেন। পাপিয়ার এই উদ্যোগকে ধন্য ধন্য করছেন সকলেই।