রানাঘাট স্টেশন চত্বর। রাত তখন ১টা। শীতের হালকা আমেজে রাস্তায় তখন সারমেয়দের চিৎকার। আর কিছু অভুক্ত মানুষ আকাশের দিকে চেয়ে পেটে খিল দিয়ে শুয়ে রয়েছেন। অর্ধেক দিন তো খাবারই জোটে না তাঁদের। ভালমন্দ তো দূর অস্ত! নিত্যদিন দু-মুঠো জোগাড় হলেই অদৃষ্টকে পেন্নাম ঠোকেন। তবে শনিবার রাতে দৃশ্যটাই বদলে দিলেন এক মমতাময়ী মহিলা। রকমারি খাবারের গামলা নিয়ে হাজির হলেন স্টেশন চত্বরে। কোনওটায় পোলাও, কোনওটায় পাঠার মাংস, কোনওটায় আবার রাধাবল্লভী। কোমরে কাপড় গুঁজে নিজেই বসে গেলেন পরিবেশন করতে।
Advertisment
হাতে পাতা ধরা মুখগুলোতে তখন কী প্রশান্তির ছাপ। কারণ এই রাতে আর অভুক্ত থাকতে হবে না তাঁদের। একে-একে সবাইকে ডেকে নিলেন। এরপর এই মহিলা ঈশ্বরের দূতের মতো নিজেই পরিবেশন করলেন খাবার। তিনি পাপিয়া কর। ভাইয়ের বিয়ের রিসেপশনে বেচে যাওয়া খাবার নষ্ট না করে খাওয়ালেন ক্ষুধার্তদের। নেটমাধ্যমে সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শুভেচ্ছা-আশীর্বাদের বন্যা।
প্রসঙ্গত, অনুষ্ঠান বাড়ির শত শত আমন্ত্রিত অতিথিদের পাতের উচ্ছিষ্ট খাবার অপচয় হওয়ার দৃশ্য প্রায়শই দেখা যায়। হয়তো সেইসমস্ত খাবার জড়ো করলে অনেক পথবাসীই খেতে পারতেন। কিন্তু আনন্দ বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেও যে এক নিবিড় আনন্দ রয়েছে, সেকথা বোধহয় সমাজের অনেকেই ভুলে যান। তবে ভোলেননি পাপিয়া। তিনি কিন্তু ভাইয়ের বাসর রাতের মজলিশ ছেড়ে রিসেপশনের সাজে সোজা পৌঁছে গিয়েছেন রানাঘাট স্টেশনে। বেঁচে যাওয়া সব খাবার বিলিয়ে দিয়েছেন ক্ষুধার্তদের মধ্যে। মহিলার এহেন অভিনব উদ্যোগে নেটদুনিয়ার অনেকেই 'স্যালুট' জানিয়েছেন তাঁকে।
রানাঘাট স্টেশন চত্বরে শুক্রবার রাতের সেই দৃশ্য দেখে অনেকেই বলছেন, 'মানবিকতা বেঁচে থাক এভাবেই'।