New Update
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/07/IMG-20200717-WA0005.jpg)
ভারত বহু ভাষাভাষীর দেশ। শুধু হিন্দি চালিয়ে তো কার্যোদ্ধার সম্ভব নয়। মহারাষ্ট্রে অনেক সময় মারাঠি ভাষাতেও ঘোষণা করতে হত।
করোনার প্রকোপে ট্রেন বহু মাস বন্ধ। ট্রেন সফর মিস করেছেন অনেকেই। নিয়মিত হোক বা অনিয়মিত ট্রেন ভারতে আলাদা একটা ধর্ম। সেই ধর্মস্থানই এখন বন্ধ। যাইহোক, ট্রেন সফরকারী ব্যক্তিরা একটি আওয়াজের সঙ্গে ভীষণভাবে পরিচিত।
প্ল্যাটফর্ম এ ট্রেন ঢোকার আগেই এক মহিলা হিন্দি ভাষায় সবাইকে বলে ওঠেন, "যাত্রীগণ কৃপয়া ধ্যান দে...."। তারপরেই তিনি জানিয়ে দেন তাঁর বাকি বক্তব্য। অনেকেরই মনে নিশ্চয় প্রশ্ন জাগে এই মহিলা কে, কী তাঁর নাম, কেমন দেখতে তাঁকে? এরকম হাজারো প্রশ্ন ভিড় করে এই মহিলার পরিচিতিকে ঘিরে।
এই মহিলা কন্ঠটি যাঁর, তাঁর নাম সরলা চৌধুরী। ১৯৮২ সালে সরলা সেন্ট্রাল রেলওয়েতে অ্যানাউন্সারের পদের জন্য পরীক্ষা দেন। পরীক্ষা পাসের পরে প্রাথমিক ভাবে দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে বছর চারেক কাজ করতে হয় সরলা দেবীকে। কিন্তু তাঁর কণ্ঠস্বর এতই মধুর ছিল যে, ১৯৮৬ সালে সেন্ট্রাল রেলওয়ে তাঁকে স্থায়ী অ্যানাউন্সার হিসেবে নিয়োগ করে।
আশির দশকে কম্পিউটার কোথায়! মূল ঘোষণা রেকর্ড করেই পাবলিক আনাউন্সার সিস্টেমে চালানো হত। ট্রেনের গোটা আনাউন্স রেকর্ড প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে নাকি ৪ দিন লেগেছিল। এমনটাই একবার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তিনি। তবে আচমকা কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সেই ঘোষণা সরাসরি ঘোষণা করতে হত। তাই এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে ছুটে বেড়াতে হত সরলা দেবীকে।
তবে ভারত বহু ভাষাভাষীর দেশ। শুধু হিন্দি চালিয়ে তো কার্যোদ্ধার সম্ভব নয়। মহারাষ্ট্রে অনেক সময় মারাঠি ভাষাতেও ঘোষণা করতে হত।
পরবর্তীকালে প্রযুক্তির আগমন ঘটে ভারতে। তার ছোঁয়াচ লাগে ভারতীয় রেলওয়ে সিস্টেমেও। ট্রেন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (টিসিএম) রেলের প্ল্যাটফর্মে ঘোষণার বিষয়টি দেখভাল শুরু করে। তবে তারা অন্যন্য বিষয়ে আমূল পরিবর্তন করলেও সরলা দেবীর কন্ঠস্বর স্ট্যান্ড বাই মোডে রেখে দেয়। রেলের সমস্ত কন্ট্রোল রুমগুলোতে সেই আওয়াজই সেভ করে রাখা হয়। সেই আওয়াজের অনুরণন এখনও সব প্ল্যাটফর্মে বেজে ওঠে নিয়ম মেনে, ঘড়ির কাঁটা ধরে। সেই নিয়মে কোনো ব্যত্ময় ঘটেনি। গত প্রায় তিন দশক ধরে সরলা দেবীর কন্ঠস্বর আর ট্রেন প্রায় সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছে।
১২ বছর হল কিছু ব্যক্তিগত কারণে অ্যানাউন্সারের কাজ ছেড়ে দিয়েছেন সরলা। বর্তমানে রেলওয়ের ওভারহেড ইকুইপমেন্টস বিভাগে রয়েছেন তিনি। কেমন লাগে, যখন রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে নিজের গলার আওয়াজ শুনতে পান? সরলা হেসে বলছেন, "খুব খুশি হই। মনে হয়, একদিন আমি থাকব না, কিন্তু আমার গলার আওয়াজ তো লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে গেঁথে থাকবে।"
একসময়ে অলইন্ডিয়া রেডিওতেও চাকরির অফার পেয়েছিলেন। তবে সেই চাকরি করেন নি। রেলওয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে। সেই পার্টনারশিপ এখনো অটুট।