ভূত কিংবা গোয়েন্দা গল্প, বাঙালি কিন্তু এই বিষয়টার সঙ্গে ভীষণ সম্পর্কিত। তাঁরা গল্প শুনতে ভালবাসেন। গল্প শোনার ঝোঁক থাকলেও সহজে গল্প কজনই বা বলতে পারে? তবে শেষ তিন বছর ধরে গল্প বলাই যাদের কাজ তাঁরা হলেন সৌভিক এবং অর্ণব ও তাঁদের ইউটিউব চ্যানেল Scattered Thoughts। কিভাবে শুরু এই পথ চলা? কেনই বা তাঁরা বেছে নিলেন এই পথ? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায় জানালেন সেই কথা।
সবকিছু কেমন চলছে দুজনের?
সৌভিক ও অর্ণব : চলছে! গল্প বলাও চলছে, তাঁর সঙ্গে চাকরি বাকরি সব মিলিয়ে ভালই।
Scattered Thoughts এই নামই বেছে নিলে কেন?
নামটা কেন বেছে নিলাম তাঁর জন্য কোনও কারণ আদৌ আছে... হ্যাঁ! সত্যি বলতে গেলে যখন এই চ্যানেল আমরা শুরু করলাম তখন ইচ্ছে ছিল যে সবরকম শিল্পকে তুলে ধরব আমরা। সেটাই রহস্য, রোমাঞ্চ, প্রেমের গল্প সব থাকবে। নাচ, গান, ইন্টারভিউ থাকবে। তো সবধরনের কিছু ছড়ানো ছেটানো থাকবে বলেই Scattered Thoughts।
প্ল্যানিং কী ছিল চ্যানেলের আড়ালে?
আমাদের সত্যিই প্রথমে কোনও চিন্তাভাবনা ছিল না যে এই চ্যানেলকে এভাবে তুলে ধরব বা অনেক বড় বড় গল্প থাকবে। আমরা ছোট কনটেন্ট অনুযায়ী কাজ করতে চেয়েছিলাম। তবে যেটা করব নিজেরা করব এটাই ভেবেছিলাম।
ভৌতিক, গোয়েন্দা নাকি তন্ত্র কোন গল্প মানুষের বেশি পছন্দ বলে মনে হয়?
সৌভিক : এরকম অনেক কনটেন্ট রয়েছে। নির্ভর করে কখন কি ধরনের গল্পের বাঁধন রয়েছে। তবে, হ্যা বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে তন্ত্র মন্ত্র এইধরনের গল্প মানুষ বেশি শুনছেন।
অর্ণব : ভুতের চাহিদা আমাদের চ্যানেলে বেশি। এছাড়া শার্লক হোমস এর জনপ্রিয়তা রয়েছে আমাদের চ্যানেলে। এটা যেকোনও চ্যানেলের ওপর নির্ভর করে।
Sunday suspense এর এত জনপ্রিয়তা..তোমাদের কনটেন্ট সেই জায়গায় কতটা ক্লাসিক?
অর্ণব : আমরা তো ফ্যানবয় হিসেবে শুরু করেছিলাম। সানডে সাসপেন্স দেখেই নিজেদের গল্প বলার ইচ্ছে হয়েছিল। ভালবেসে কাজটা শুরু করেছিলাম। এরকম ভাবনা চিন্তা ছিল না যে কেন শ্রোতারা আসবে। আমরা ভেবেছিলাম একটা প্যাকেজ তৈরি করব। স্টার নিয়ে কাজ করিনি। আর্ট ওয়ার্ক ভাল করার চেষ্টা করেছিলাম। মানুষ শুনতে আসবে এটাই।
সৌভিক : আমরা ওদের থেকে শিখেছি। এখানে তুলনা টানা উচিত নয়। ওরা ওদের মত করছেন, আমরা আমাদের মত।
বাঙালিকে গল্প বলতে গেলে খুব পারদর্শী হতে হয়?
অর্ণব : বাঙালিকে গল্প বলতে গেলে কথকের পারদর্শিতা খুব দরকার। ছোট থেকে নেশা আমার গল্প পড়া। বাড়ি বসে বই পড়তাম। কেউ খেলতে নিত না। বাঙালিকে গল্প বলতে গেলে গল্পটা ভাল হতে হয় অবশ্যই।
সৌভিক : বাঙালিকে গল্প বলার একটাই রুল, যদি সেটাকে সিনেমার মত প্রেজেন্ট করা যায়। যেন কানে শুনেও চোখের সামনে বিষয়টা ভেসে ওঠে। এটুকুই।
গল্প সিলেকশন কীভাবে হয়?
আগে তো আমরা করতাম, এখন একটা দল রয়েছে। ফাইনাল সিলেকশন এর আগে একবার পড়ে নিয়ে তারপর বাকিটা। কণ্ঠের খেলাটাও খুব দরকার। অভিজ্ঞতা বলতে এটুকুই।
ইংরেজি সাহিত্যের কোনও ভৌতিক গল্প নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছে হয় না?
ইচ্ছে করে, তবে ট্রান্সলেশন বিষয়টার সঙ্গে বাঙালিরা ঠিক মানানসই নয়। ওরা নিতে পারে না। সবার বোঝার স্বার্থে বাংলা গল্প নিয়ে কাজ করাটা খুব দরকার। বাঙালির মাটির গল্পটা খুব পছন্দের। আমাদের এটাই কর্তব্য, যে মানুষ যেটা চান সেটাই তাদের উপহার দেওয়ার।
ব্যকগ্রাউন্ড স্কোর কতটা গুরুত্বপূর্ন?
বিরাট ভূমিকা রয়েছে। ব্যকগ্রাউন্ড স্কোর ছাড়া এটা সম্ভব নয়। অডিও স্টোরি না থাকলে আবহ হয় না। যেন নুন ছাড়া রান্না। ভয় পাচ্ছি, বা ভয় পাওয়ানো টা সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশের গল্প নিয়ে অনেকেই তোমাদের কাজ করতে বলেন, কোনও প্ল্যানিং?
কপিরাইট! এই একটাই বাঁধা। বাংলাদেশের মানুষেরা আমাদের খুব কাছের শ্রোতা। আমরা এই নিয়ে অনেক ভুগেছি। রাইট কেনার জন্য অনেক জলঘোলা হয়েছে। পাবলিশার্স এবং লেখকের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব, লিগ্যাল অ্যাকশন - এতকিছু ভেবে কাজে এগোনো একটা বিষয়। তাই, একটু চাপ তো রয়েছেই। দুজনের মধ্যে একটা বিতর্ক কিন্তু এড়ানো যায় না।
ভৌতিক গল্পের ভবিষ্যত কি বুঝছ?
ভুতের মার্কেট কিন্তু আছে! এখনও অবধি যখন সমাজ ভাল ভাবে নিচ্ছে। লেখনী ভাল হলে আরও বেশি করে বাড়বে। মানুষ ভয় পেতে ভালবাসে শুধু তাই নয় বাঙালির ভূতপ্রীতি কিন্তু খুব বেশি! ( হাসি )
ভৌতিক সিনেমা নাকি অডিও পডকাস্ট কোনটা বেশি এগিয়ে?
আমরা তো পডকাস্টকে এগিয়ে রাখব। কারণ, এটা শুনতে শুনতে তুমি কোনও কাজ আরামসে করতে পারো যেটা সিনেমার ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। কিন্তু, তাই বলে এটা নয় যে আমরা ভূতের সিনেমা দেখি না। আমরা দেখি অবশ্যই, কিন্তু ওই আর কি!