বিজেপি নেত্রীর একটি মন্তব্য! তাতেই বিদেশের মাটিতেও কার্যত হাজারো প্রশ্নের সামনে পড়তে হচ্ছে ভারত সরকারকে। ইসলাম ধর্মকে অবমাননার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি নেত্রীর নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে। যা নিয়ে একের পর এক দেশের তরফে কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে আরব উপমহাদেশের একাধিক দেশের তরফে ওই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। দিকে দিকে প্রতিবাদ, বিক্ষোভের আঁচ। একাধিক রাজ্যে বিক্ষোভ চূড়ান্ত আকার নিয়েছে।
পয়গম্বরকে অবমাননা বিতর্কে বিক্ষোভের জেরে হাওড়া জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল নবান্ন। বিজ্ঞপ্তি জারি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, আজ শুক্রবার থেকে আগামী সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গোটা হাওড়া জেলায় বন্ধ থাকবে ইন্টারনেট পরিষেবা। অনলাইন ভয়েস কলের ক্ষেত্রেও এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। তবে সাধারণ ফোন এবং এসএমএস করা যাবে। বৃহস্পতির থেকেই দফায় দফায় জারি বিক্ষোভ। গতকাল নূপুর শর্মাদের গ্রেফতারির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছিল অঙ্কুরহাটি ও সংলগ্ন এলাকায়। ১১৬ নং জাতীয় সড়ক প্রায় ১১ ঘণ্টার উপর অবরুদ্ধ ছিল। এর মাঝেই ভাইরাল হয়েছে এক পীরজাদার ভাইরাল ভিডিও।
ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে “আপনারা কি আইন হাতে তুলে নেবেন? আপনাদের আমি হাত জোর করে বলছি অবরোধ করবেন না। আমার দেশকে আমরা নোংরা করতে পারি না। এই আন্দোলন মুসলমানদের নয়। সকলের আন্দোলন। নবী কখনওই এই অন্যায় মেনে নিতেন না। সকলে শান্তিতে বসবাস করব। আইনকে প্রাধান্য দিয়ে দোষীদের শাস্তি হবেই। আপনারা আইন হাতে তুলে নেবেন না। আপনাদের হাতজোড় করে বলি অবরোধ সরিয়ে নেন, গাড়িগুলিকে যেতে দেন”।
এই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে নেটদুনিয়ায়। সকলেই এই মুসলমান ধর্মগুরুর বক্তব্যকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছে ইসলাম কখনই হিংসাকে বরদাস্ত করেনা।
অশান্তির আঁচে তপ্ত হাওড়ার পাঁচলার বিস্তীর্ণ এলাকা। শুক্রবারের পর শনিবার সকাল থেকেও দফায়-দফায় বিক্ষোভ-বিশৃঙ্খলা। পাঁচলাজুড়ে তাণ্ডবের ছবিটা গা শিউরে ওঠার মতো। পুড়ছে দোকান, বাড়ি। বাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শাক-সবজি। পাঁচলা বাজার-সহ গোটা এলাকা শুনশান। যেন অঘোষিত বনধ চলছে। একরাশ আতঙ্কে নিজেদের ঘরবন্দি করে রেখেছেন বাসিন্দারা। হিংসার আঁচ সামাল দিতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকেও। তবুও পাঁচলা জুড়ে মোতায়েন বিশাল পুলিশ বাহিনী ও RAF।
দিকে দিকে প্রতিবাদ এবং প্রতিবাদের নামে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। প্রতিবাদের নামে যে হিংসাত্মক বিক্ষোভ চলছে তার তীব্র প্রতিবাদ করে তিনি এক টুইট বার্তায় লিখেছেন “আজকে যদি নবী মহম্মদ বেঁচে থাকতেন, তাহলে সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের এই বিক্ষোভ দেখে হতবাক হয়ে যেতেন।”
পয়গম্বরকে নিয়ে করা মন্তব্য, তারই জেরে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায়। বিক্ষোভের নামে কার্যত তাণ্ডব চলছে হাওড়ার পাঁচলায়। শুক্রবারও দিনভর অশান্তি চলেছে, পাঁচলা, সলপ, রঘুদেবপুর-সহ হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায়। শুক্রবারের পর শনিবার সকাল থেকেও অশান্তি শুরু পাঁচলায়। এদিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ পাঁচলা বাজারে ঢুকে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। লণ্ডভণ্ড করে দেয় গোটা বাজার চত্বর।
আরও পড়ুন: পরিকল্পনামাফিক হিংসা! বাংলায় মুসলিমরা অনেক সুরক্ষিত: কৌশিক সেন
নূপুর শর্মার মন্তব্যকে কেন্দ্র করে উত্তাল একাধিক রাজ্য। দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভকারীরা বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মার গ্রেফতারের দাবি জানানর পাশাপাশি তার মৃত্যুদণ্ডের জন্যও সোচ্চার হয়েছেন।
বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশেও। শুক্রবার, হাজার হাজার মানুষ নবী মহম্মদকে নিয়ে নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিলে সামিল হন। বিক্ষোভকারীরা ভারত সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি আগামী ১৬ জুন ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও অভিযানেরও ডাক দেন। একই সঙ্গে ভারতীয় পণ্য বয়কটেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।