বহু মানুষের জীবন তছনছ করে দিয়েছে এই পুতুল, বিশ্বের সবচেয়ে 'অভিশপ্ত' পুতুল! কে এই রবার্ট? যার ছবি দিয়ে নেটদুনিয়ায় ক্ষমা চাইছেন সবাই?
আপনি প্রায়ই সিনেমায় 'অভিশপ্ত' পুতুলের সম্পর্কে শুনেছেন। কিন্তু ফ্লোরিডার ইস্ট মার্টেলো মিউজিয়ামে আসলে একটি 'অভিশপ্ত পুতুল' রয়েছে যার কারণে বহু মানুষকে নানান ভৌতিক ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
মোবাইল কিংবা ল্যাপটপে ফেসবুক খুললেই দেখা মিলছে এই পুতুলের। সমাজমাধ্যমের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পড়েছে তার ছবি, সঙ্গে লেখা 'সরি'। এখন প্রশ্ন হল কে এই রবার্ট? যার ছবি দিয়ে নেটদুনিয়ায় ক্ষমা চাইছেন সবাই!
সোশ্যাল মিডিয়ায় গত কয়েকদিন ধরে ট্রেন্ড করছে 'সরি রবার্ট'। রবার্ট- দ্য কার্সড ডল। অনেকেই জানেন না এই ভূতুড়ে পুতুলের কথা। অনেকেই কিছু না জেনেই 'সরি'ও বলে ফেলছেন রবার্টকে। রবার্ট আসলে একটি অভিশপ্ত পুতুল।
সালটা ১৯০৬, বাড়ির পরিচারিকা রবার্ট ইউজিন অটো নামে এক শিশুকে এই পুতুলটি উপহার দিয়েছিলেন। কথিত আছে, ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে এই পুতুলের ওপর কালো জাদু করেছিলেন এই পরিচারিকা। রবার্ট এই পুতুলটিকে তার সেরা 'বন্ধু' হিসাবে ভাবতে শুরু করে। শিশুটি পুতুলের সঙ্গেই খেলত এবং তাকে নিয়েই ঘুমাতে যেত। রবার্ট পুতুলটিকে 'পুতুল' নয়, সত্যিকারের মানুষ হিসাবে ভাবতে শুরু করে।
রবার্ট লক্ষ্য করেন মাঝে মধ্যেই তার ঘরের সব জিনিস এলোমেলো। যখন রবার্ট তার বাবা-মাকে বলে যে সে নয় যে ঘরটি এলোমেলো করেছে সেও পুতুল, বাবা-মা তা বিশ্বাস করলেন না এবং তাকে অনেক বকাঝকা করেন। এক রাতে রবার্ট লক্ষ্য করলেন যে পুতুলটি একটি চেয়ারে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে এবং তারপরে ঘরের জিনিস শূন্যে উড়তে শুরু করে এবং দরজা বারবার খুলতে এবং বন্ধ হতে শুরু করে। কিন্তু রবার্টের বাবা-মা তার চিৎকার শুনে ঘরে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু শান্ত হয়ে যায়।
প্রতিবেশীদের মতে, রবার্টের ঘর থেকে প্রায়ই অদ্ভুত আওয়াজ আসত। রবার্টের বাড়ির সাথে সাথে তার প্রতিবেশীদের সঙ্গেই নানান ভীতিকর ঘটনা ঘটতে থাকে। এরপর পুতুলটিকে একটি বাক্সে বন্দী করে রাখায় এসব ঘটনা বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে রবার্ট বড় হয়ে তার সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। রবার্ট বিয়ে করে তার স্ত্রীর সাথে একটি নতুন বাড়িতে চলে যায় এবং পুতুল সহ কিছু জিনিসপত্র তার নতুন বাড়িতে নিয়ে যায়।
এই বাড়িতে রবার্ট পুতুলের জন্য আলাদা ঘর তৈরি করেছিলেন। এতে তার স্ত্রী খুবই বিরক্ত ছিলেন। ধীরে ধীরে আবার সেই পুতুলের নড়াচড়া শুরু হল। ১৯৭৪ সালে রবার্টের মৃত্যুর পরে, বাড়িটি অন্য একটি পরিবার কিনে নেয়। এরপর পুতুলটিকে ১৯৯৪ সালে যাদুঘরে দান করা হয়েছিল।
অনেক সময় কাঁচের বাক্সে রাখা পুতুলটি ছাড়া বাকি সব জিনিসপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায় এবং শিশুদের কান্নার শব্দ শোনা যায়। এত কিছুর পর জাদুঘরে (ইস্ট মার্টেলো মিউজিয়াম) পুতুলের জন্য আলাদা কেবিন তৈরি করা হয়। বলা হয়, অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা হলে এই পুতুল 'অভিশাপ' দেয়।
একজন পর্যটক যখন তাকে জিজ্ঞাসা না করে রবার্ট দ্য ডলের ছবি তোলেন, তখন সমস্ত ছবি ক্যামেরা থেকে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। এই পুতুলের গল্প সত্যিই বেশ ভয়ঙ্কর। মিউজিয়ামে সেই পুতুল দেখে কেউ হাসিঠাট্টা করলে তার জীবনে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটত। এমনকী পুতুলটি নিজে থেকে চলাফেরা করত বলেও দাবি করেছেন অনেকে। এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন #SorryRobert হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে। অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় রবার্ট দ্য ডলের ছবি ছবিতে কেউ যদি সরি না লেখে তাহলে তার জীবনে নেমে আসতে পারে ভয়ঙ্কর কিছু। সেই ধারণা থেকেই এই অভিশপ্ত পুতুলকে দেখে 'সরি' লিখছেন নেটিজেনরা।