সোমবার কলকাতায় পা দিয়েও তরতাজাই ছিলেন। নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া করেছেন। খুব খোশমেজাজে ছিলেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে মহড়া দিয়েছেন। সারা ক্ষণ শুধুই অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা। আর রাতেই সব শেষ। চলে গেলেন কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পী কেকে। টুইটার জুড়েই 'কান্নার' রোল! কেকে'র মৃত্যু সংবাদ শুনেই শোকে ভেঙ্গে পড়েন আসমুদ্র-হিমাচল। টুইটারে অজস্র মানুষ শোক প্রকাশ করেছেন। কিংবদন্তী শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সকলেই টুইটারের দারস্থ হন।
মঞ্চে থাকা স্পটলাইট বারবার বন্ধ করতে বলেছিলেন কেকে। তাঁর শরীরে যে একটা অস্বস্তি হচ্ছিল, সেটা অনেকেরই চোখে পড়ে। কেকের অনুষ্ঠানের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কেউ কেউ বলছিলেন, 'এদিন মঞ্চে প্রচণ্ড ঘামছিলেন গায়ক। কিছুটা অস্বস্তিও বোধ করছিলেন'।
তারপরই শো' শেষে হোটেলে ফেরার পথেই গাড়িতে শীত শীত ও অনুভব করেন কেকে। গাড়িতে হোটেলে ফেরার পথে গাড়ির এসিও বন্ধ করতে বলেন তিনি। হোটেলে ফিরে যাওয়ার পরই খানিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। CMRI হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে সঙ্গীত জগতে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, কেকে'র শরীরে একাধিক ক্ষত চিহ্ন লক্ষ্য করা গিয়েছে। চিকিৎসকদের অনুমান সোফা থেকে পড়ে গিয়েই সম্ভবত কপালে চোট পেয়েছিলেন তিনি।
প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কনসার্ট আয়োজকদের ভুমিকা নিয়েও। নজরুল মঞ্চে শো' দেখার জন্য ৩০০০ আসন বরাদ্দ থাকলেও সেখানে প্রায় সাত হাজার লোকের সমাগম হয় বলেও জানা গিয়েছে।
পরপর ২ দিন শো ছিল। কলকাতায় শো করতে এসে বেজায় উচ্ছ্বসিত ছিলেন তিনি বলেও জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে নজরুল মঞ্চে শো চলাকালীন-ই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন কেকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
‘হাম দিল দে চুকে সনম’ দিয়ে যাত্রা শুরু। ‘ঝঙ্কার বিটস’, ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ হয়ে অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গায়ক। প্রতিটি গান সুপার হিট! দিন কয়েক আগেই আরবে গানের অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। সঙ্গে অমিত কুমার, রিমা গঙ্গোপাধ্যায়েরাও ছিলেন। সেখানেও নিজস্ব ভঙ্গিতেই মঞ্চ মাতিয়েছেন। মঙ্গলবারের নজরুল মঞ্চও তার ব্যতিক্রম ছিল না। একের পর এক জনপ্রিয় গান গাইছিলেন অবলীলায়। কলেজ পড়ুয়ারা মাতোয়ারা তাঁর গানে। বুধবারেও কেকে-র আরও একটি কলেজ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কেকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিশ্ব জুড়েই শোকের ছায়া।
সঙ্গীতশিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে-র অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ আসমুদ্রহিমাচল। এবার গায়কের মৃত্যুতে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করল নিউ মার্কেট থানার পুলিশ। তাঁর মৃত্যু কি স্বাভাবিক না কি অন্য কোনও রহস্য রয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, কেকে কলকাতা এসে নিউ মার্কেট থানা এলাকার একটি পাঁচতারা হোটেলে উঠেছিলেন। মঙ্গলবার রাতে নজরুল মঞ্চে শোয়ের শেষে সেই হোটেলে ফিরে আসেন। তার পরই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় তাঁর। এর পর দক্ষিণ কলকাতার সিএমআরআই হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। সূত্রের খবর, তিনি যে হোটেলে ছিলেন তার ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
মঙ্গলবার গুরুদাস কলেজের ফেস্টে নজরুল মঞ্চে শো করছিলেন। সেখানেই খানিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিরতিতে ব্যাক স্টেজে বিশ্রামও নেন। বলেনও, অনুষ্ঠানের আলো কমাতে। তবে অনুষ্ঠানে দিব্যি মাতিয়ে রাখেন হিন্দি-বাংলা গান গেয়ে। আর সেই শোয়ের পর হোটেলে ফিরে যেতেই অঘটন। অসুস্থ হয়ে পড়ে যান কেকে।
বাংলা, হিন্দি, তামিল, কান্নাড়, মারাঠি একাধিক ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছেন কেকে। তাঁর প্রয়াণে ভেঙে পড়েছেন ২৭ বছরের বন্ধু মিউজিক কম্পোজার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শোকের ছায়া বাংলা সঙ্গীতজগতেও। ইমন চক্রবর্তী, অনুপম রায়-সহ অনেকেই শোকপ্রকাশ করেছেন। জিতের কাছ থেকে ফোনে শুনে বিশ্বাস-ই করতে পারছেন না সোনু নিগম। চিকিৎসকদের প্রাথমিক অনুমান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই প্রয়াত শিল্পী। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আজ, বুধবার ময়নাতদন্ত হবে সঙ্গীতশিল্পীর মরদেহের।
তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার গভীর রাতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, "কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ, আমরা যাঁকে কেকে নামেই বেশি চিনি, তাঁর অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। ওঁর গান সব বয়সের শ্রোতাদের আবেগপ্রবণ করেছে। আমরা ওঁকে ওঁর গানের মধ্যে দিয়েই মনে রাখব। ওঁর পরিবারের সদস্য এবং অনুরাগীদের জন্য সমবেদনা জানাই। ওম শান্তি"।