দীপাবলির পর দিল্লির দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আগামী ২ সপ্তাহেও দূষণের মাত্রা যে কমবে তা হলফ করে বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। বরং তাঁদের দাবি, দিল্লির দূষণ করোনার থেকেও ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দিল্লির ৯২টি জায়গায় নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওইসব জায়গায় দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিধিনিষেধ মানা হচ্ছিল না। এমনটাই জানিয়েছেন দিল্লি সরকারের মন্ত্রী গোপাল রাই। এবার দিল্লির সেই দূষণ নিয়েই মজার মিম ভাইরাল হয়েছে নেটদুনিয়ায়।
নির্মাণের কাজ বন্ধের পাশাপাশি বাতাসে ধূলিকণা কমানোর জন্য শহরজুড়ে জল স্প্রে করছে ১১৪টি ট্যাংকার। একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, দীপাবলির পর দিল্লির বাতাসে দূষণের মাত্রা গত ৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বর্তমানে দিল্লিতে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ৪৬২।
বাজি পোড়ানোর কারণে, দূষণের বিপজ্জনক স্তরও পার হয়ে গেল দিল্লিতে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ও দিল্লি সরকারের নির্দেশ, কড়া নজরদারি উপেক্ষা করেই বাজি পুড়েছে রাজধানীর অলিতে গলিতে। তারই ফল, মারাত্মক ঘন ধোঁয়াশা যা আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে ফেলেছে দিল্লিকে। বাতাসে ভাসমান বিষাক্ত কণার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেশি। প্রতি শ্বাসেই বিষ-বাষ্প ঢুকছে শরীরে। প্রতিদিনই বাতাসের গুণগত মান খারাপের দিকে যাচ্ছে। এদিকে কালীপুজোর রাত থেকেই দূষণের মাত্রা বেড়েছে কলকাতাতেও।
পরিসংখ্যান বলছে, দীপাবলির দিনেই দিল্লির কোনও কোনও জায়গায় বাতাসের মান সূচক উঠে গিয়েছিল ৬১৭-তে। কোথাও আবার ৯৯৯ ছাড়িয়েছিল। অথচ গতবছর এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ৪৩৩, তার আগের বছর ২০১৯ সালে ৩৯০। শুক্রবারই দিল্লির বাতাসের মান সূচক ছিল পাঁচশোর বেশি। প্রতিবেশী শহর ফরিদাবাদে বাতাসের মান সূচক ছিল ৪৬৯, গ্রেটার নয়ডায় ৪৬৪, গাজিয়াবাদে ৪৭০, গুরগাঁওতে ৪৭০।
দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই বলছেন, “অনেকেই করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আদালতের নির্দেশ মেনে বাজি পোড়াননি। তবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে শব্দবাজি ও আলোর বাজি পোড়ানো হয়েছে বহু জায়গায়। দীপাবলির রাত থেকেই দিল্লির বাতাস বিষাক্ত। একেই দূষণের মাত্রায় দেশের সব রাজ্য ও বড় শহরগুলির মধ্যে দিল্লিই শীর্ষে ছিল। দীপাবলির পর থেকে দিল্লির বাতাসের মান তথা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেছে।”
বিপজ্জনক দূষণের ফলে যমুনা নদীতে তৈরি হয়েছে সাদা ফেনার মতো কিছু পদার্থ। তারই মধ্যে হাঁটু সমান জলে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে ছটপুজো পালন হয়েছে। দুর্গন্ধযুক্ত ওই সাদা ফেনার মধ্যে দাঁড়িয়েই ভক্তিভরে পুজো করেন কেউ কেউ। কেউ আবার ওই সাদা ফেনার রঙে আকৃষ্ট হয় সেলফি তুলতেও ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
এবার দিল্লির এই ভয়াবহ দূষণ নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় তরজা অব্যাহত। টুইটার জুড়েই শুধু মিমের বন্যা। টুইটারে ভাইরাল হওয়া মজার মিম গুলি থেকে বেশ কয়েকটি তুলে ধরা হয়েছে।
অবিলম্বে দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আর্জি জানান হয় বিভিন্ন পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের তরফ থেকে। তাদের দাবি সরকারকে কঠোর হাতে পরিবেশ বাঁচাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষদেরও দূষণ রোধে এগিয়ে আসার কথাও তুলে ধরা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন