বছর ২২ এর একটা ছেলে। অল্প বয়সেই প্রতিবাদী সুর। শুধু ভাবনা চিন্তাটা অনেক সাবলীল। আর পাঁচজনের মত গলা ফাটিয়ে নয় বরং গান কবিতা প্যারোডির মাধ্যমেই তার প্রতিবাদী সুর। যে কাউকে নিয়েই সে মুখ খুলতে রাজি। ভুল মানে সেটা ভুল, প্যারোডি থেকে পলিটিক্স - মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে প্যারোডি এবং সেই থেকে হাজারো সমস্যা। নিজের ব্যক্তিগত থেকে সোশ্যাল দুনিয়া নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায় মুখ খুললেন অনুভব মাইতি।
কেমন আছ অনুভব? জীবনে কী চলছে?
এই তো ভাল! সব মিলিয়ে ভালই চলছে। গান, প্যারোডি সব নিয়ে দিব্যি কেটে যাচ্ছে।
নিজেকে একটুও সেলিব্রিটি সেলিব্রিটি মনে হচ্ছে?
( হেসে ) এ বাবা! না না, একেবারেই না। সেলিব্রিটি ভাবার কোনও কারণই নেই।
মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে প্যারোডি তারপরই জীবনে নয়া মোড়, কিরকম লাগে?
আমি উনাকে নিয়ে যখন প্রথম প্যারোডি বানাই, তখন কিন্তু বেশি ভেবে চিনতে বানাই নি। উনার এক মন্তব্য আমায় ভাবিয়ে তোলে যে এক্ষেত্রে প্রতিবাদ করা দরকার, আমি সেটা ভেবেই প্রতিবাদ করেছিলাম। ব্যাস এটুকুই। তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় সেটা আপলোড করতেই, প্রচুর মানুষের সহমত পেয়েছি, ভালবাসা পেয়েছি।
শুধুই সহমত নাকি মিশ্র প্রতিক্রিয়া...
অবশ্যই মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ আমি বয়সে ছোট বলেও অনেক কথা বলেছে। আর সবথেকে বড় কথা ডেথ থ্রেটস পেয়েছি। প্রতিবাদ করলে তো শুনতে হবেই। কিন্তু থেমে থাকলে তো চলবে না। কথা তো বলতেই হবে।
শুধুই কী প্যারোডি নাকি অন্য কনটেন্ট বানাও?
না! আমি একসময় মিম বানিয়েছি, শুধু এমন নয় যে আমাদের রাজ্য সরকার বরং কেন্দ্রীয় সরকার বলুন অথবা বিরোধী দল, সবাইকে নিয়েই বানিয়েছি। যারা আমার মিম দেখেননি তারা অনেকসময় দাবি করেন যে, আমি হয়তো একতরফা জিনিসপত্র বানাই তবে এটা ভুল।
এত অল্প বয়স, রাজনীতির মঞ্চ নিয়ে কী ভাবছ?
রাজনীতির প্রতি আমার আগ্রহ সবসময় আছে। সেটা বাবার সূত্রেও কিছুটা পেয়েছি। তবে এখনও অতটা জ্ঞান হয়নি। শুরু করেছি এই সম্পর্কে জানা, যদি সম্ভব হয় কিংবা সুযোগ হয় পরে অবশ্যই সক্রিয় ভাবে শুরু করব।
ছাত্র রাজনীতি করেছ কোনোদিন?
না! সত্যিই না! কারণ রাজনীতি করতে গেলে আদর্শ মিলতে হয়। আর আমার কলেজের ক্ষেত্রে সেটা সত্যিই মিলত না তাই আর কোনওদিন করা হয় নি। তবে ভবিষ্যতে অন্যত্র সুযোগ থাকলে অবশ্যই করব।
প্যারোডি নাকি গান, কোনটা তোমার বেশি পছন্দ?
গান আমার শখ! ওটা আমি ভালোবাসি। আর পরে যখন দেখলাম গানের সুরে প্রতিবাদ করা যায় তখন আমি ভাবলাম এর থেকে ভাল আর কিছুই হয় না। তাই শুরু করে দিলাম। আমি কিন্তু অন্য ধরনের গান গাইতেও পছন্দ করি। শুধু প্যারোডি না!
শুনলাম লেখালেখির অভ্যাস আছে....
হ্যাঁ! আমি লিখতে খুব ভালবাসি। আমার গান গুলো আমি নিজে লিখি কিংবা একজন দিদি আছে সে লিখে দেয়। আবার এখন তো অনেকেই আমায় গান লিখে পাঠাচ্ছে। বেশ ভাল লাগছে যে ওরা আমায় ভালবাসছে। ওদের নিজেদের কথাগুলোকে যদি আমি তুলে ধরতে পারি তাহলে খুশিই হব।
সাফল্য তুঙ্গে, অনেকেই বলছেন দ্বিতীয় রোদ্দুর রায় হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে তোমার?
এটা একেবারেই ঠিক নয়। উনি একেবারে আলাদা মানুষ। অন্য জগতের মানুষ। উনার প্রতিবাদের সুর আলাদা আমার আলাদা। এটা ঠিক উনি একটু গালমন্দ করে ফেলেন। সেটা ভারতের আইন ব্যবস্থা দেখে নেবে যদি ভুল ত্রুটি থাকে। তবে সহজ সোজা ভাষায় কথা বলা খুব দরকারি।
তোমার প্রতিবাদের ভাষায় তাহলে শুধুই ছন্দ থাকে বলতে চাইছ?
অবশ্যই! কারণ আমি যেটা করি বা বলি সেটা বড্ড ভেবে চিন্তে বলি। আইন কানুন মেনে, শব্দচয়ন বলুন কিংবা যা কিছু অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বলি। ভারতের বাক স্বাধীনতার ওপর অগাধ বিশ্বাস রয়েছে আমার। তবে হ্যাঁ, কু শব্দের প্রয়োগ আমি করি না।
পড়াশোনা তো শেষ, এরপরের প্ল্যান কী?
পড়াশোনা শেষ, কিন্তু এবার আরেকটু উচ্চশিক্ষার দিকে যেতে চাই। কম্পিটিটিভ পড়ছি, এবার দেখা যাক, কি হয়।
তোমার এই সাফল্যে অভিভাবকের কী প্রতিক্রিয়া?
দেখ, আমি আসলে দীঘার ছেলে। এখানে এসেছিলাম পড়াশোনা করতে। এখানেও নিজের বাড়িতেই থাকি। কিন্তু যা হয়, মা খুব ভয় পান। বলেন, এসব করতে না। তবে আমি তো আমি! ( হেসে ) আর বাবা খুব সাপোর্ট করেন। আমার যেটা ইচ্ছা সেটাই করতে বলেন। পাশে পেয়েছি সকলকেই। এখন অনেকেই অনেক ধরনের গানের রিকোয়েস্ট করেন, এটাই সবথেকে বেশি ভাললাগে।