বিশ্বজুড়ে ভাইরাল ‘বাদাম গান’। আর এই ‘বাদাম গান’-এর স্রষ্টা বিদেশ বিভুঁইয়ের কেউ নন। তিনি রাঢ় বাংলার-ই এক বাদাম বিক্রেতা। নাম ভুবন বাদ্যকর। এবার তিনি সরাসরি পুলিশের দ্বারস্থ। কিন্তু কেন? জানা গিয়েছে, বাদাম-গানে নেচে গেয়ে আয় করছে মানুষ, তাঁর হাত রয়েছে একেবারে খালি! তাই নিয়েই বেজায় চটেছেন ভুবন। পুলিশে নালিশ করলেন বীরভূমের ভুবন বাদ্যকর। ইদানীং নেটমাধ্যমে প্রবল জনপ্রিয় হয়েছে— ‘বাদাম বাদাম, দাদা কাঁচা বাদাম, আমার কাছে নাই গো বুবু ভাজা বাদাম’ গানটি। সামান্য সময়ের মধ্যে গোটা বিশ্বের কয়েক লক্ষ মানুষ গোগ্রাসে দেখেছেন-শুনেছেন। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টা রিলস খুললেই বেজে উঠছে ‘বাদাম-গান’। ভারত বাংলাদেশ থেকে ইউটিউবাররা, তার কাছে পৌঁছেছেন, মিলেছে অনেক প্রতিশ্রুতিও কিন্তু তাঁর অবস্থা যেমন ছিল তেমনই, অভাব মেটেনি।
ভুবনের অভিযোগ, তাঁর গান থেকেই লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছেন ইউটিউবাররা, অথচ, কেউ তাঁকে কোনও প্রকার সাহায্য করেনি। তাঁর সাফ কথা, ‘গান আমার, উপার্জন করছেন সকলেই, অথচ আমার অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেখানেই। তাঁরই গান গেয়ে নেটমাধ্যমে বাহবা কুড়োচ্ছেন বহু মানুষ।" কিন্তু গানের আদত স্রষ্টা কোনও ভাবেই অর্থ পাচ্ছেন না। কৃতজ্ঞতা স্বীকারেও থাকছে না তাঁর নাম। ভুবনের অভিযোগ, এই গান নেচে-গেয়ে অনেকেই লক্ষ লক্ষ রোজগার করে ফেলছেন। কিন্তু তাঁর হাত খালি। এ বার তা নিয়ে দুবরাজপুর থানায় নালিশ জানালেন ‘বাদাম-গান’-এর স্রষ্টা ভুবন।
জীবনের চলার পথে সকাল থেকে রাত হাড় ভাঙা পরিশ্রম করতে হচ্ছে ভুবনকে। বাদাম বিক্রি করে যা আয়, তাই দিয়েই কোন মতে সংসার চলে তাঁর। ইউটিউব থেকে রিল, ফেসবুক থেকে ইউটিউব সবেতেই নজর কাড়ছে ভুবনের ‘কাঁচা বাদাম’ গানটি। খ্যাতিও জুটেছে। ব্যাস ওইটুকুই।
আগে সাইকেলে করে গ্রামের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত সকাল থেকে রাত বাদাম বিক্রি করতেন ভুবন। কিছুদিন আগে একটি মটর বাইক কিনেছেন তিনি, তাই এখন তার সম্বল। উপহার বলতে জুটেছে একটা সাউন্ড সিস্টেম। তাতে কী অভাব ঘোচে? পুরনো বাইকের পিছনে বাদামের বস্তা চাপিয়ে গান গাইতে গাইতে বাদাম বেচছেন ভুবন কুড়ালজুড়ি গ্রামে এ অতি পরিচিত ছবি। তবে ইউটিউব খুললেই তাঁর গান ভেসে উঠছে,। ‘বাদাম বাদাম দাদা কাঁচা বাদাম, আমার কাছে নাই গো বুবু ভাজা বাদাম… ’,
ভুবনবাবু জানিয়েছেন আজকাল প্রতিদিন তাঁর বাড়িতে প্রচুর মানুষ ভিড় করছেন। সবাই সেই গান রেকর্ডিং এর ব্যাপারেই জড়ো হচ্ছেন।এমনকি দুবরাজপুর থানাতে তিনি যখন অভিযোগ দায়ের করতে গেছিলেন তখনও তাঁকে দেখতে প্রচুর মানুষ ভিড় জমিয়েছেন। হুড়োহুড়ি করেছেন তাঁর সঙ্গে ছবি, ভিডিও তুলবেন বলে। ভুবনবাবুর দাবি, ইউটিউবে তাঁর গাওয়া সেই গানের কপিরাইট দেখাচ্ছে, কিন্তু তিনি নিজে কোনও গানই আপডেট করেননি! বক্তব্য শেষে জানা যায় থানায় তিনি হেলমেট পরে গেছিলেন। এবং তা নাকি নিতান্ত ভয়ে এবং দায়ে পড়েই। কারণ ভুবনবাবুর সন্দেহ হচ্ছে ওঁকে কেউ কিডন্যাপও করে নিতে পারে। তবে এমন ভুবনের এমন অভিযোগে তোলপাড় নেটদুনিয়ায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন