মার্কিন এবং ব্রিটিশ সেনা দেশ ত্যাগ করতেই আফগান মসনদে দীর্ঘ ২০ বছর পর কায়েম তালিবানী রাজ। যদিও একে রাজত্ব বলতে নারাজ অনেকেই। তার চেয়ে বলা ভাল অন্ধকারের রাজত্ব। ২০ বছরের আগের তালিবানি অত্যাচারের স্মৃতি এখনও টাটকা। মসনদে বসার পর থেকেই বারে বারে নেমে এসেছে গণতন্ত্রের উপর চরম আঘাত।
সংবাদ মাধ্যম থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক, রেয়াত করা হচ্ছে না কাউকেই। এর আগে আমরা একাধিক সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে দেখেছি তালিবানি বর্বরতার চিত্র। কখনও গান পয়েন্টে রেখে সংবাদ পাঠককে দিয়ে বাধ্য করা হয়েছে তালিবানের হয়ে প্রচারমুলক সংবাদ পরিবেশনে, তো আবার কখনও আফগান বুদ্ধিজীবীদের খুন করে উল্লাস করতে দেখা গিয়েছে জঙ্গিদের। এবার বর্বরতার ভয়ঙ্কর এক নিদর্শন ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা দেখে আঁতকে উঠেছেন নেটিজেনরা।
তালিবানরা যাতে মহিলাদের শিক্ষা, চাকরিতে বা খেলাধুলায় কোনও বাধা না দেয়, তার জন্য কাবুলে বিক্ষোভ শুরু করেছে বেশ কয়েকটি মহিলা সংগঠন৷ কাবুলে মহিলাদের বিক্ষোভ বন্ধ করতে টিয়ার গ্যাস চালায় তালিবান৷ মহিলাদের বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করতে তালিবান যেভাবে টিয়ার গ্যাস চালায় তাতে গুরুতর আহত হন অনেকেই, বিক্ষোভ মিছিলে বেশ কয়েকজন মহিলার উপর লাঠিচার্জও করা হয় বলে খবর৷
শুধু তাই নয়, ওই বিক্ষোভ মিছিল থেকে এক মহিলাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে আসা হয়৷ প্রকাশ্যে তাঁকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ৷ রাস্তার উপর প্রকাশ্যে যে মহিলাকে টেনে হিঁচড়ে এনে মারধর করা হয়, তাঁর ছবি প্রকাশ্যে আসতেই ভাইরাল হয়ে যায়৷ নার্গিস সাদাত নামে ওই মহিলা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীকে মারধরের পর তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায় কাবুলের রাস্তায়৷ নার্গিস সাদাতের ওই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই তা ভাইরাল হয়ে যায়৷
আফগান প্রশাসনের মহিলারা অংশ নিলে, সে দেশে মেয়েদের উপর নির্যাতনের মাত্রা কমবে তার আর কোনও নিশ্চয়তা রইল না৷ তালিবান জমানায় মহিলাদের অধিকার সুরক্ষিত করতে যাঁরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ শুরু করেন, তাঁদের উপরই হামলা চালিয়ে বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন: উড়ন্ত হেলিকপ্টার থেকে দড়িতে ঝুলছে মানুষ! ভাইরাল তালিবানি নৃশংসতার ভিডিও
এক আফগান সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রচারিত হওয়ার পরই তা ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তালিবান যেভাবে ওই মহিলার উপর অত্যাচার চালিয়েছে তা দেখে শিউরে উঠেছে সমগ্র বিশ্ব। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য তালিবানরা দেশের দখল নেওয়ার পর থেকেই দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন অসংখ্য মানুষ।
তাঁদের মধ্যে যেমন রয়েছেন মহিলা সাংবাদিক তেমনই রয়েছেন মহিলা পরিচালক থেকে জনপ্রিয় আফগান গায়ক। নিজের দেশের মাটি আর তাঁদের জন্য নিরাপদ নয় বলেই দেশ ছেড়েছেন তাঁরা। এদিকে, এই ভিডিও ভাইরাল হতেই আফগানিস্তান যে আর নিরাপদ নয় সেই তথ্যেই সিলমোহর পড়ল। মসনদে বসার পর তালিবান বেশ কয়েকটি বিষয়ে সাধারণ জনগণকে আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু সেগুলি যে কেবল মুখের কথা এদিনের ভিডিওতে তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এদিকে, এই ভিডিও ভাইরাল হতেই নিন্দার ঝড় সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। মহিলার ওপর অত্যাচারের ভিডিও দেখে তালিবানি হিংস্রতার বেআব্রু চিত্র বেরিয়ে আসতেই শিউরে উঠেছেন নেটিজেনরা। এদিকে সংবাদমাধ্যম এই ঘটনার ফুটেজ সংগ্রহ করতে গেলে তাঁদেরকেও তালিবানি বাধার মুখে পড়তে হয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন