দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনের জের! বদলি হলেন দিল্লির প্রিন্সিপাল (রাজস্ব) সেক্রেটারি সঞ্জীব খিরওয়াড়। একই সঙ্গে বদলি করা হয়েছে আধিকারিকের স্ত্রী’কেও। কী হবে তাদের পোষ্যের! এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুঙ্গে তরজা। ভাইরাল হয়েছে নানান মজার মিম।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে দেখা গিয়েছে অনুশীলনের সময়ের অনেক আগেই খেলোয়াড়দের স্টেডিয়াম থেকে বের করে দেওয়া হত কারণ হিসাবে তাদের বলা হত ওই সময়ের আধ ঘন্টার মধ্যেই দিল্লির প্রিন্সিপাল (রাজস্ব) সেক্রেটারি সঞ্জীব খিরওয়াড় তাঁর প্রিয় পোষ্যটিকে নিয়ে স্টেডিয়ামে পাইচারি শুরু করেন। তার জেরেই ত্যাগরাজ স্টেডিয়ামে নাকি সময়ের আগেই অনুশীলন শেষ, করতে হচ্ছে খেলোয়াড় ও কোচদের।
এদিকে এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনার পুর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশের পাশাপাশি বদলিও করা হয়েছে ওই আধিকারিকদের। কিন্তু এই ঘটনার পর পরই এই একই ইস্যুতে সরগরম হয়ে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই আধিকারিককে রীতিমত তিরস্কার করা হয়। পাশাপাশি নানান মজার মিম শেয়ার করা হয়েছে। সেখানেই দেখা যাচ্ছে নেটিজেনরা চিন্তিত আধিকারিক এবং তার স্ত্রী বদলি হয়ে গেলে তাদের প্রিয় পোষ্যের কী হবে! #IASOfficer এবং #IASOfficerCouple হ্যাশট্যাগের পাশাপাশি, হ্যাশট্যাগ #WhereWillTheDogGo ও নজর কেড়েছে নেটিজেনদের।
দিল্লির ত্যাগরাজ স্টেডিয়ামে সময়ের আগেই অনুশীলন গোটাতে বাধ্য হচ্ছেন খেলোয়াড়, কোচরা। গত কয়েকমাস ধরেই এই অভিযোগ করে আসছেন তাঁরা। আগে ৮ থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অনুশীলন করা গেলেও বর্তমানে ৭টার মধ্যেই স্টেডিয়াম ছাড়তে হচ্ছে বলে দাবি খেলোয়াড়দের। তাঁদের মতে, ওই সময়ের আধ ঘন্টার মধ্যেই দিল্লির প্রিন্সিপাল (রাজস্ব) সেক্রেটারি সঞ্জীব খিরওয়াড় তাঁর প্রিয় পোষ্যটিকে নিয়ে স্টেডিয়ামে পাইচারি শুরু করেন। তার জেরেই ত্যাগরাজ স্টেডিয়ামে নাকি সময়ের আগেই অনুশীলন শেষ, করতে হচ্ছে খেলোয়াড় ও কোচদের। গতকালই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরের জেরে তড়িঘড়ি ওই আমলাকে লাদাখে বদলি করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের (MHA) জারি করা এক নির্দেশে আরও বলা হয়েছে সঞ্জীব খিরওয়াড়ের স্ত্রী রিংকু দুগ্গা যিনিও এক আইএএস আধিকারিক তাকেও অরুণাচল প্রদেশে বদলি করা হয়েছে। এপ্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই শীর্ষকর্তা জানান, “দিল্লির প্রিন্সিপাল (রাজস্ব) সেক্রেটারি সঞ্জীব খিরওয়াড়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সে ব্যাপারে এমএইচএ দিল্লির মুখ্য সচিবের কাছে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট চায়, সেই রিপোর্টের প্রেক্ষিপ্তেই সঞ্জীব এবং তার স্ত্রী দু’জনকেই বদলি করা হয়েছে”। দিল্লি বিজেপির নেতা নবনিযুক্ত এল-জি বিনাই কুমার সাক্সেনাকে অবিলম্বে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিপ্তে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন।
যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, দিল্লির রাজস্ব দফতরের সেই প্রন্সিপাল সেক্রেটারি সঞ্জীব খিরওয়াড় পুরোটাই ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন। যদিও স্বীকার করেছেন যে, তিনি তাঁর পোষ্যকে নিয়ে ‘মাঝেমধ্যে’ স্টেডিয়ামে যান। তবে সেই জন্য খেলোয়াড়দের অসুবিধার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন খিরওয়াড়।
অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিনিধি গত এক সপ্তাহে তিনবার বিকেলবেলায় ত্যাগরাজ স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন। দেখা যায় যে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রক্ষীরা স্টেডিয়ামের ট্র্যাকে পাশে হাঁটাহাঁটি করছেন, বাঁশি বাজাচ্ছেন এবং বলছেন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ওই এলাকাটা ফাঁকা করে দিতে হবে।
২০১০ সালের কমনওয়েলথ গেমসের সময় ত্যাগরাজ স্টেডিয়ামটি দিল্লিতে তৈরি হয়েছিল। নানা সুবিধায় পূর্ণ এই ক্রীড়া কমপ্লেক্সটি। ফলে জাতীয় এবং রাজ্যস্তরের ক্রীড়াবিদ এবং ফুটবলারদের খুব আকর্ষণের স্টেডিয়াম এটি।
আগে যেখানে ত্যাগরাজ স্টেডিয়ামে রাত ৮ থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অনুশীলন করতে দেওয়া হত তখন হঠাৎ গত কয়েকমাস ধরে অন্য ছবি কেন দেখা যাচ্ছে? কেন স্টেডিয়াম থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে খেলোয়াড় ও কোচদের বেরিয়ে যেতে বলা হচ্ছে? জবাবে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ত্যাগরাজ স্টেডিয়ামের পরিচালক অজিত চৌধুরী বলেছেন, ‘অনুশীলনের সরকারি সময় বিকেল ৪ থেকে ৬টা। কিন্তু প্রচণ্ড গরমের কথা বিবেচনা করে তা সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।’ যদিও অনুশীলনের সময়সীমা সংক্রান্ত কোনও সরকারি নির্দেশ অজিত চৌধুরী দেখাতে পারেননি। এছাড়া খেলোয়াড়দের অভিযোগও তিনি মেনে নেননি। জানিয়েছেন যে, অনুশীলনের পর ওই স্টেডিয়ামে কোনও আইএএস অফিসার পোষ্যকে নিয়ে ঘোরেন কিনা তা তাঁর জানা নেই।
অজিত চৌধুরী বলেছেন, ‘আমাদের সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে স্টেডিয়াম বন্ধ করতে হবে। যে কোনও জায়গায় সরকারি অফিস বন্ধের সময় এটাই। এই স্টেডিয়াম দিল্লি সরকারের অধীনে একটি সরকারি অফিস। একজন আইএএস তাঁর কুকুরকে নিয়ে স্টেডিয়ামে হাঁটেন কিনা সেটা আমার জানা নেই। আমি সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে যাই।’
মঙ্গলবার দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিনিধির নজরে পড়েছে যে, আইএএস সঞ্জীব খিরওয়াড় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ত্যাগরাজ স্টেডিয়ামে তাঁর পোষ্যকে নিয়ে প্রবেশ করছেন। তারপর অনুশীলনের ট্র্যাকে কুকুরটি ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফুটবল মাঠেও পোষ্যটি অবলীলায় খেলছে। সবটাই ঘটছে নিরাপত্তা রক্ষীদের চোখের সামনে।
আইএএস খিরওয়াড় বলেছেন, ‘আমি কখনই কোনও খেলোয়াড়কে তাঁদের স্টেডিয়াম ছেড়ে যেতে বলব না। এমনকি আমি সেখানে গেলেও স্টেডিয়াম বন্ধ হওয়ার পরেই যাই…আমরা পোষ্যটিকে ট্র্যাকে ছেড়ে দিই না…যখন আশেপাশে কেউ না থাকে তখন আমরা তাকে ছেড়ে দি। কিন্তু তা কখনও কোনও খোলয়াড়কে সরিয়ে নয়। এরপরও আপত্তিকর কিছু হলে আমি তা বন্ধ করে দেব।’
একজন প্রশিক্ষনাধীন অ্যাথলিটের মা, বাবা পরিস্থিতিটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। বলেছেন যে, ‘আমার সন্তানের অনুশীলন ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি সরকারি অফিসার গভীর রাতেও কী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই স্টেডিয়াম কুকুরকে হাঁটানোর জন্যও ব্যবহার করতে পারেন? এটা ক্ষমতার চরম অপব্যবহার।’
এদিকে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনের জেরে সমস্ত ক্রীড়াক্ষেত্র, স্টেডিয়াম-জিম রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া। সিসোদিয়া এদিন টুইট করেছেন, “খবরের রিপোর্ট অনুযায়ী, আমাদের নজরে এসেছে যে কিছু মাঠ বন্ধ করা দেওয়া হচ্ছে যার ফলে অনেক রাতে অনুশীলনে সমস্যার মুখে পড়ছেন ক্রীড়াবিদ এবং কোচেরা। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লি সরকারের সমস্ত স্পোর্টস ফেসিলিটিং রাত দশটা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।”
Read story in English