পৃথিবীর প্রতিটি জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছে কার নেই? সুযোগ থাকলেও সম্ভব করতে পারাটাই অসাধ্য সাধন। তবে, শিবাজি (পাল) এক্সপ্লোরার কিন্তু দেখব এবার জগতটাকের মোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন অজানাকে জানতে। এই বয়সেও এতটা ইচ্ছে, ক্লান্তিকে তোয়াক্কা না করেই আবারও অচেনা গন্তব্যে বেরিয়ে পড়া। কিভাবে সম্ভব? সেই অজানা গল্প শেয়ার করলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায়।
কেমন আছেন শিবাজিদা?
ঘোরা, বেড়ানো এদিক ওদিক সব মিলিয়ে দারুণ। আবারও সামনে বেরিয়ে পড়তে হবে।
ক্লান্তি লাগে না? অবসর খোঁজেন মাঝেমধ্যে?
আমরা সবসময়ই বলে থাকি, বাড়ি হচ্ছে আমাদের অবসর। বাড়িতে ঢুকলাম অর্থাৎ মনটা একটু ভাল লাগতে শুরু করল। সেটাই অবসর। আর যদি ছুটি কাটাতে হয়, তাহলে দিনের পর দিন আমি দার্জিলিং গিয়ে পড়ে থাকতে রাজি।
ট্রাভেল যখন প্রফেশন হয়ে যায়, তখন কী চাপ বেড়ে যায়?
অবশ্যই! ফ্রি মাইন্ডে যারা ঘুরতে যায় তাঁরা উপভোগ করতে যায়। আমরা তো কাজ করতে যাই। রাতের পর রাত ঘুম নেই। আবার হয়তো ভোর হতেই সূর্যোদয়, চাপ তো থেকেই যায়।
এতটা এনার্জি বা শরীর ঠিক রাখার কোনও গোপন চাবিকাঠি আছে নিশ্চই?
এই রে! হ্যাঁ, শরীর ঠিক রাখাটা আমাদের কাছে খুব কষ্টকর। যে হারে দিনযাপন। তবে বেশ নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলি। যেমন কম খাওয়া, তারপর একটি ব্যায়াম করা, স্ট্রেস না নেওয়া ইত্যাদি।
কাজে স্ট্রেস থাকবে না, এও আবার হয়?
থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ওই যে, ঘুরে বেড়ানো। ছোট থেকেই একটা নেশা। এখন সেটা অনেকটাই বেড়ে গেছে। তবে স্ট্রেস না নিলেই ভাল।
ঘুরতে গিয়ে কোন বিষয়টা বেশি দরকার, এদিক ওদিক ভ্রমণ নাকি হোটেল - লাক্সারি এগুলো?
যারা আমার মত রও ট্রাভেলার, তাদের কাছে কিন্তু এগুলো একদম কিছু মানে রাখে না। আমরা তাবুতে শুই। হয়তো সারাদিন খাবার পাই না। আমাদের শুধু দেখার ইচ্ছে, বাকি আর কিছু না। কিন্তু যারা স্ট্রেস রিলিজ করতে যায় তাঁদের কাছে এগুলো গুরুত্বপূর্ন।
পাহাড়, সমুদ্র, নাকি ঐতিহাসিক কোনও জায়গা?
এটা বলা খুব মুশকিল। আমার কাছে সব জায়গা সুন্দর। সবকিছুর একটা আলাদা আমেজ রয়েছে। পাহাড় আমার খুব ভাল লাগে। তবে যে জায়গায় একটা ঐতিহাসিক দিক রয়েছে সেটা খুব টানে আমায়।
কোনোদিন কোথাও গিয়ে খারাপ কিছুর শিকার হয়েছেন? বা এমন মনে হয়েছে যে এই জায়গার সম্পর্কে নেগেটিভ শুনেছি, যাবনা?
খারাপ কিছু বলতে, কোথাও হয়তো গিয়ে আমায় ভিডিও করতে দেয়নি। বা হালকা ব্যাবহার খারাপ। কিন্তু সেগুলো বাকি যা পাচ্ছি বা যে ভালবাসা পাচ্ছি তাঁর কাছে কিছুই না। আর নেগেটিভ কিছু শুনে আসি জায়গায় যাব না এমন কোনোদিন মনে হয়নি। আমার কথা হল, খারাপ জায়গায় গিয়েও দেখতে চাই সেটা খারাপ কেন।
বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা একটু শুনব..
উফ! সাংঘাতিক। মানে ওঁরা এত আন্তরিক, এত আপন করে নিতে পারে। খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে সাংঘাতিক ওনারা। হাজার রকমের পদ, এবং দাঁড়িয়ে থেকে খাওয়াবে। না খেলে আবার বলবেন যে খাচ্ছেন না কেন। আসলে আমরা রাজনৈতিক ভাবে আলাদা, মনটা এখনও এক। আর বেস্ট লেগেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যরকম একটা বিষয়। রাস্তার জ্যমটা একটু বেশি, বাকি দারুণ অনুভূতি হয়েছে।
আপনি, গণপতি বিসর্জন দেখেছেন, সেটা দুর্গাপুজোর কার্নিভালের থেকে কতটা আলাদা?
দেখ, সত্যি কথা বলতে গেলে দুর্গাপুজোর যা আয়তন - প্যান্ডেল, প্রতিমা, বা মানুষজন সবই বেশি। পুজোর আড়ম্বর নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু বিশেষ করে বিসর্জনের দিকটা পুনেতে অনবদ্য। ওঁরা যে জায়গায় নিয়ে গেছে বিষয়টা সেটা স্বপ্নের অতীত। একটা লোক বাড়িতে নেই, সবাই রাস্তায় নাচ গান করছেন। কিন্তু তারপরেও কত ডিসিপ্লিন। অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করতে পারে। ওটা অসাধারণ একটা বিষয় দেখেছি।
সস্তায় পুষ্টিকর প্ল্যান বানাতে গেলে কি লাগে?
বাজেট ভীষণ সাবধানে করতে হয়। যেমন, হোটেল খরচ। গাড়ি ভাড়াটা শেয়ারে হলে ভাল হয়। খাওয়াদাওয়ার দিকে স্ট্রিট ফুড অপশন বেছে নিতে হয়। যেগুলো না করলেই নয়। একটু বুঝে চলতে হয়।
আপনার ট্রাভেল ব্লগিং এর স্টাইলটা কি একটু অন্যরকম?
অন্যরকম বলতে একটা ভাইব ক্যাচ করাটা খুব দরকার। প্রতিটা জায়গার একটা ভাইব রয়েছে। সেই নির্দিষ্ট ভাললাগাটা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হয়। শুধু তাই নয়, একটা গল্প বলার ধরণ হওয়া উচিত কারণ আজও বাঙালি গল্পের সঙ্গে কানেকটেড। তাই সেটা মেনটেন করি।
ট্রাভেল ব্লগিং শুরু করতে গেলে প্রথম থেকে দামী ইকুইপমেন্ট আসলেই দরকার?
একটা মোবাইল ক্যামেরা হলেও চলবে। শুরু করতে ওটুকুই কাফি! পরে যত আরও উপরে উঠবে তত লাগে কিছু ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু নিজের কাজ থামালে চলবে না।