মহালয়ার আগেই যেন চোখ ধাঁধানো মহারণ। ভাগীরথী থেকে উঠে এসে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় দাপিয়ে বেড়ালো প্রকাণ্ড কুমির। বাড়ির সদর দরজার চৌকাঠে মঙ্গলবার ভোরে জল ছড়াতে গিয়ে সেই কুমির দেখেই আত্মারাম খাঁচা হয়ে যায় গৃহকর্ত্রীদের। ঘটনা জানাজানি হতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের কালনা পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পালপাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে। খবর পেয়ে কালনা থানার পুলিশ ও বনদফতরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছায়। এলাকার বাসিন্দাদের সহযোগিতা নিয়ে দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় তারা কুমিরটিকে জালে ধরতে সক্ষম হয়। তার পর স্বস্তি ফেরে বাসিন্দাদের। তবে কুমির আতঙ্ক যেন সবসময় তাড়া করে বেড়াচ্ছে ভাগীরথী পাড়ের বাসিন্দাদের।
ভাগীরথীর জল ছড়ে ডাঙ্গায় কুমির চলে আসার ঘটনা কালনাতে প্রথম ঘটলো এমনটা নয়। মাত্র ১৪ দিন আগে কাটোয়ার অগ্রদ্বীপের কালিকাপুরে ভাগীরথী নদী পারাপারের ফেরিঘাটের পাড়ে দেখা মিলেছিল প্রকাণ্ড একটি কুমিরের। গ্রামবাসীদের সহযোগিতা নিয়ে ৭-৮ ঘন্টার চেষ্টায় প্রায় ১২ ফুট লম্বা ওই কুমিরটিকে বাগে আনতে সক্ষম হয়েছিল বনদফতরের কর্মীরা।
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে সোমবার রাত দেড়টা নাগাদ ভাগীরথী ছেড়ে কালনা শহরের পালপাড়া এলাকায় চলে আসে বিশাল আকৃতির একটি কুমির। ধীরে ধীরে কুমিরটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ঢুকে পড়ে। পাড়ায় কুমিরের প্রবেশ ঘটেছে জেনে রাতের ঘুম ছুটে যায় বাসিন্দাদের। ঘটনা জেরে নড়ে চড়ে বসে কালনা থানার পুলিশ। কুমিরটি যাতে কোনও বাসিন্দার ক্ষতি না করে তার জন্য পুলিশ রাতভর সেটির গতিবিধির উপর নজর রেখেছিল। তারই মধ্যে ভোর হতে না হতেই এক বাসিন্দার বাড়িতে ঢুকে পড়ে কুমিরটি। যদিও পুলিশ সজাগ থাকায় কুমিরটি ওই গৃহস্থ পরিবারের কারুর কোনও ক্ষতি করতে পারেনি। সকাল হতেই দমকল ও বনবিভাগের কর্মীরা এলাকায় পৌছায়। তাদের সবার মিলিত প্রচেষ্টায় কয়েক ঘন্টার মধ্যে কুমিরটিকে জালে ভরা সম্ভব হয়। তবে কুমির ধরা পড়লেও নদী ছেড়ে লোকালয়ে কুমির চলে আসাটা বনবিভাগের লোকজনকে যথেষ্টই ভাবিয়ে তুলেছে। আর কয়েক দিন বাদেই মহালয়া। ওই দিন ভাগীরথীতে আর তর্পণ সারতে যাওয়াটি নিরাপদ হবে কি না তা নিয়েই এখন চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন কালনার ও কাটোয়ার বাসিন্দারা।
জেলার বন আধিকারিক (ডিএফও ) নীশা গোস্বামী জানিয়েছেন, কুমিরটিকে উদ্ধার করে কাটোয়ার বন বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে শারীরিক পরীক্ষার পর কুমিরটিকে ভাগীরথীতেই সহয়ক পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে কুমিরের নদী ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসা প্রসঙ্গে ডিএফও বলেন, 'মনে হয় এর কারণ ডিস্টারবেন্স , খাদ্য সংকট নয়। দিন রাতই বহু মৎসজীবী ভাগীরথী নদীতে মাছ ধরেন। তার জন্য ডিসটার্ব হওয়াতেই হয়তো কুমিরটি ভাগীরথী ছেড়ে লোকালয়ে চলো এসেছে ।' নিরাপদে সাধারণ মানুষ যাতে মহালয়ার দিন ভাগীরথীতে তর্পণ সারতে পারেন তার জন্য ঘাট গুলিতে বনদফতরের কর্মীরা নজরদারি চালাবেন বলে বন-আধিকারিক আশ্বস্ত করেছেন।