ফের চেনা আতঙ্ক ফিরল বউবাজারে! মদন দত্ত লেনের একাধিক বাড়িতে ফাটল। ভোররাতেই ফাটল টের পেয়েছিলেন ১০টি বাড়ির বাসিন্দারা। তারপরই ঘরছাড়া একাধিক পরিবার। ভিটে মাটি ছেড়ে তড়িঘড়ি যাবেন কোথায় তাঁরা? সেই চিন্তাই কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে তাদের। ২০১৯ সালে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেলের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই বউবাজারে বিপত্তি শুরু হয়। মাস পাঁচেক আগেই ঠিক পাশের রাস্তা দুর্গাপিতুরি লেনে একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরে। মুহূর্তে ঘরছাড়া হন একাধিক পরিবার। সেই স্মৃতিই যেন ফিরে এল বউবাজারে। এবার ফাটল ঠিক তার পাশের লেন মদন দত্ত লেনের একাধিক বাড়িতে। আবারও ভিটেমাটি ছাড়া অসংখ্য পরিবার। প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে ভিটে ছেড়ে অজানা ঠিকানায় মদন দত্ত লেনের অসহায় পরিবারগুলো।
মেট্রো রেল সূত্রে খবর, আজ সকালেই মদন দত্ত লেনের প্রায় ১০ টি বাড়িতে ফাটল ধরে। বেলা গড়াতেই মেট্রোর পদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মিলেছে ক্ষতিপূরণের আশ্বাসও। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার বাসিন্দারা। এলাকারই এক বাসিন্দার কথায়, "বারবার মেট্রো রেলের গাফিলতির কারণে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। বার বার আমাদের ভিটে মাটি ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে হোটেলে। কবে আবার ঘরে ফিরব তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই! ক্ষতিপূরণ পেলেই কী সব কিছু মিটে গেল? বাড়িতে অসুস্থ ব্যক্তি, বাচ্চা , বয়স্করা রয়েছেন। কীভাবে আমরা দিন কাটাবো তা ভেবেই দিশাহীন অবস্থা আমাদের"। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, "যখনই এমন ঘটনা ঘটছে মেট্রো কর্তৃপক্ষে নড়েচড়ে বসছে। কিছুদিন যেতে না যেতেই ফের একই চেনা ছবি"। আমাদের সঙ্গে অনেকটা গিনিপিগের মত ব্যবহার করছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ"।
বউবাজারের দুর্গাপিতুরি লেনের পাশের গলি মদন দত্ত লেনের বেশ কয়েকটি বাড়িতে বড় বড় ফাটল দেখতে পাওয়া যায় আজ ভোররাতেই। তারই জেরে চূড়ান্ত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। বাড়ি-ঘর ছেড়ে প্রাণভয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন বাসিন্দারা। খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছোয় পুলিশ ও স্থানীয় কাউন্সিলর। ঘটনাস্থলে যান মেট্রোর আধিকারিকরাও। বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁদের। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছান সিপিআইএম নেতা মহম্মদ সেলিম, বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। এর কিছুক্ষণ আগেই এলাকা পরিদর্শন করেন স্থানীয় বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কথা বলেন মেট্রো রেলের পদস্থ কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে। ঘুরে দেখেন ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলিও। কথাও বলেন স্থানীয়দের সঙ্গে। গোটা এলাকা কার্যত নিজেদের দখলে রেখেছে কলকাতা পুলিশ।
কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাথমিক অনুমান, গ্রাউটিং- এর কাজ চলার সময় সুড়ঙ্গে জল ঢুকে বিপত্তি ঘটেছে। ভোর চারটের পর সুড়ঙ্গে জল ঢুকতে শুরু করে। তার জেরেই ঘটে বিপত্তি। ইস্ট ওয়েন্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ নির্মাণে বিপত্তির জেরে, বহু মানুষগুলোর জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা। একটার পর একটা বাড়িতে ফাটল দেখা যায়। ব্যাগ গুছিয়ে ফের হোটেলমুখী অসহায় মানুষজন।
এলাকার কাউন্সিলর বিশ্বরুপ দে গোটা ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “মানুষের সঙ্গে গিনিপিগের মতো ব্যবহার করছে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। কে দায়িত্ব নেবে এই অসহায় মানুষদের? শুধুমাত্র মেট্রো কর্তৃপক্ষের জন্য বউবাজারের একাধিক এলাকা ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। আমরা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের তরফে লিখিত বয়ান চেয়েছি।”
অন্যদিকে, ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছেন মেট্রো রেলের একাধিক প্রতিনিধি। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখানোয় তারা এলাকায় ঢুকতে পারেননি বলেই জানা গিয়েছে।পুলিশ গিয়ে বাড়ি ছাড়তে বলেন বাসিন্দাদের, তা নিয়েই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাসিন্দারা। বাড়ি ছেড়ে জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে দেখা যায় অনেককে।
ইতিমধ্যেই সবক'টি বাড়ি খালি করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় বসেই মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তাঁরা। পরে তাদের বুঝিয়ে স্থানীয় দুটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মেট্রো রেল সূত্রে খবর, সুড়ঙ্গে কোনওভাবে জল ঢুকে গিয়েই বিপত্তি হতে পারে। তবে বাড়িতে নতুন করে এই ফাটল তৈরির হওয়ার পিছনে প্রকৃত কারণের খোঁজে মেট্রোর বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মেট্রোর কর্তারা।