Barkat Ali & Brothers: সাহেবি পোশাকের মধ্যেও বছরের পর বছর ধরে ভারতীয় ঘরানাকে তুলে ধরে শতবর্ষ পেরিয়েও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে শহরের স্যুটওয়ালা। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বার্থ'ডে পার্টি অথবা হোক না বন্ধুর বিবাহ- বার্ষিকী। কেরাদুরস্ত স্টাইলে নিজেকে আদ্যোপান্ত সাহেবি ধাঁচে সাজিয়ে তুলতে বাঙালি সবসময়ই কিছুটা এগিয়ে।
বিশেষ কিছু অনুষ্ঠানে ধুতি পাঞ্জাবি পরার প্রথা হাতে গোনা সীমিত সংখ্যক বাঙালি মেনে চললেও অধিকাংশের মন এখন স্যুট, ব্লেজারেই মজেছে। বিয়ের মরসুমে বেড়েছে স্যুটের চাহিদাও। অনেকেই আছেন যারা বাজার থেকে রেডিমেট স্যুট অথবা ব্লেজারে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে পছন্দ করেন। তবে যারা সাহেবি পোশাকের মধ্যেও ভারতীয় ঘরানাকে তুলে ধরতে চান তাঁরা অবশ্য তৈরি স্যুট-ব্লেজারেই ভরসা রাখেন। শহরের এখন বহু নামী-দামি সংস্থা হাজির হলেও শতবর্ষ ধরে মাথা উঁচু করে শহরের বুকে দাঁড়িয়ে রয়েছে বরকত আলি অ্যান্ড ব্রাদার্স। ১৯২৪ সালের ২৮ শে জানুয়ারি পথ চলা শুরু। আজ ১০০ বছর পার করেও শহরের বুকে মাথা উঁচু করে রয়েছে এই স্যুটওয়ালা।
ব্রিটিশ আমলের দর্জি বলে পরিচিত বরকত আলি অ্যান্ড ব্রাদার্স। বর্তমান কর্ণধার আলম আলি বলেন, 'যারা জানেন তাঁরাই আসেন'। সাহেবি পোশাকের সঙ্গে বাঙ্গালির চাহিদা, আবেগকে মিশিয়ে দিতে পারেন তারাই এমনই দাবি আলম আলির। শতবর্ষ পেরোলেও জনপ্রিয়তায় এতটুকু ভাটা পড়েনি ব্রিটিশ আমলের এই দর্জির। আমল আলি বলেন, 'কলেজ জীবন থেকে তরুণ প্রজন্মের মনে স্বপ্ন থাকে চাকরি প্রথম দিনের স্যুট আমি বরকত আলি অ্যান্ড ব্রাদার্স থেকেই তৈরি করাব। এটাই আমাদের ইউএসপি'।
শহরের বুকে হাজারো নামী ব্র্যাণ্ডের শো'রুম থাকলেও 'আমরাই পারি সাহেবি পোশাকের মধ্যেও ভারতীয় ঘরানাকে মিলিয়ে দিতে' আত্মবিশ্বাসের সুর আলম আলির গলাতে। পাশাপাশি তিনি বলেন, 'বিশেষত্ব বলতে আমাদের নিখুঁত কাটিং। তাছাড়া আমাদের ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের সব সময়ের জন্য একটা সুসম্পর্ক রয়েছে। আমরা ক্রেতার সঙ্গে দোকানীর সম্পর্কের উপর বিশেষ জোর দিয়ে থাকি। যারা একবার এখান থেকে স্যুট তৈরি করাবেন। তারা আর কখনই অন্য কোন স্যুট পরে সেই অনুভূতিটা পাবেন না'।
দোকান যার নামে সেই বরকত আলি আদতে পাকিস্তানের শিয়ালকোটের বাসিন্দা ছিলেন। অভাবের সংসারে ঠিক মত খাবার জুটত না। হঠাৎ করেই সুযোগ পেয়ে ব্রিটিশ সেনার পোশাক তৈরি করতে কলকাতায় আসা। ব্যাস আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯১০ সালে পার্ক হোটেলের উল্টোদিকেই একটি দোকান তৈরি করেন। সেই থেকে পথ চলা শুরু। সামনেই পার্ক হোটেল। সেই সৌজন্যে বহু নামী দামি ব্যক্তিত্ব স্যুট, গলাবন্ধ জ্যাকেট তৈরি করাতে আসেন এই দর্জির দোকানেই।
এই দোকান থেকেই স্যুট তৈরি করাতেন মহানায়ক উত্তম কুমার। গলাবন্ধ জ্যাকেট বানাতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। বর্তমানে বহু নামী দামী ব্যক্তিত্ব এই দোকানের ক্রেতা। তালিকায় এম জে আকবর থেকে সাংসদ শশী থারুর, সৌরভ গাঙ্গুলীর মত ব্যক্তিত্ব। সাহেবি পোশাককে নিজস্ব শৈলীর সেলাই, নিখুঁত কাটিং আর কাঁচির শিল্পের মাধ্যমে আরও কয়েকশো বছর এভাবেই টিকে থাকা আশা বরকত আলি অ্যাণ্ড ব্রাদার্সের।