'২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে লাগামছাড়া সন্ত্রাস দেখল বাংলা। শাসক থেকে বিরোধী, বেনজির হিংসার বলি সব-পক্ষেরই প্রতিনিধি। আশঙ্কাটা ছিলই, সেটাই হল সত্যি! দিনভর কেন্দ্রীয় বাহিনী, রাজ্য পুলিশকে কার্যত দূরবীণ দিয়ে খুঁজে বেড়ালেন সাধারণ ভোটাররা। দিকে-দিকে খুন, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, আগুনে ইতিহাস লিখল বাংলা।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন ছাপিয়ে গেল ২০১৮-এর হিংসাকেও। সীমাহীন সন্ত্রাস একদিনেই প্রাণ কাড়ল ১৪ জনের। বিরোধীদের দাবি, সংখ্যাটা আরও বেশি। তবে নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা এদিন বিকেলে জানিয়েছেন, ভোট-সন্ত্রাসের বলি হয়েছেন ৩ জন।
জেলায়-জেলায় ভোট সন্ত্রাস। গ্রাম-বাংলার ভোটে মৃত্যু-মিছিল।
মুর্শিদাবাদে ভোটের বলি ১০ :
এবারের পঞ্চায়েত ভোটে সবচেয়ে বেশি হিংসা ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদে। ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরের দিনই খড়গ্রামে খুন হন এক কংগ্রেস কর্মী। পরবর্তী সময়েও জারি থেকেছে মৃত্যু মিছিল। আজ পঞ্চায়েত ভোটে লাগমছাড়া সন্ত্রাস দেখেছে নবাবের জেলা। এদিন ভোট শুরুর পরেই বেলডাঙার কাপাসডাঙায় এক তৃণমূল কর্মীকে মাথায় ইঁট মেরে খুনের অভিযোগ ওঠে।
এছাড়াও এই জেলারই খড়গ্রাম এবং রেজিনগরেও দুই তৃণমূলকর্মীকে খুনের অভিযোগ ওঠে। লালাগোলায় ভোটের বলি হয়েছেন এক সিপিণএম কর্মী। অন্যদিকে, নওদায় তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে এক কংগ্রসে কর্মীর। এছাড়াও জেলাজুড়ে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএমের বহু কর্মী সংঘর্ষে জখম হয়েছেন।
নদিয়ায় সন্ত্রাসের বলি ১ :
ভোট ঘিরে হিংসার ছবি নদিয়া জেলাতেও। নদিয়ার চাপড়ায় ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন এক তৃণমূলকর্মীর উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। তুমুল সংঘর্ষ ছড়ায় বুথ চত্বরে। সেই সংঘর্ষের মাঝে পড়ে মৃত্যু হয় ওই তৃণমূলকর্মীর।
পূর্ব বর্ধমানেও ভোট সন্ত্রাস প্রাণ কেড়েছে ২ জনের :
পঞ্চায়েত ভোটে বেনজির হিংসা পূর্ব বর্ধমানেও। আউশগ্রামে তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত এক সিপিএম কর্মী। দুপুরে কাটোয়াতেও ছড়ায় অশান্তি। কাটোয়া ২ নং ব্লকে সিপিএম কর্মীদের সঙ্গে তুমুল বচসা শুরু হয় তৃণমূলের এজেন্ট গৌতম রায়ের। ব্যাপক বচসা থেকে চলে ধাক্কাধাক্কি। আচমকা মাটিতে পড়ে যান তৃণমূল এজেন্ট গৌতম রায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
মালদহে ভোটের বলি ১ :
একইভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে বেনজির অশান্তি চলে মালদহেও। মানিকচকে নির্বাচন চলাকালীন গুলি চলে বলে অভিযোগ। শেখ মালেক নামে এক তৃণমূলকর্মীর গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
উত্তর দিনাজপুরে ভোটের বলি ৩:
গোয়ালপোখর ২ নং ব্লকের চাকুলিয়ার ভেবরা ১০ নং বুথে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। সেই সংঘর্ষের জেরে তৃণমূল নেতা মহম্মদ শাহেনশার মৃত্যু হয়। পরে দুপুর নাগাদ হেমতাবাদে এক তৃণমূলকর্মীর দেহ উদ্ধারের খবর মেলে। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে উদ্ধার হয় মৃতদেহ। বিজেপির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ওঠে। পরে বিকেলে ফের খুন এই জেলাতেই। গোলায়পোখরের হাটখোলা সাহাপুর গ্রামে জামিরুদ্দিন মহম্মদ নামে এক কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়। তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষের বলি হতে হয়েছে ওই কংগ্রেস কর্মীকে।
কোচবিহারে ভোটের বলি ২:
কোচবিহারেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তুমুল অশান্তি ছাড়ায়। ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই কোচবিহারের ফলিমারিতে বিজেপির পোলিং এজেন্টকে গুলি করে খুন করার অভিযোগ ওঠে। বুথে ঢুকতে বাধা দেয় তৃণমূল, জোর করতেই গুলি দুষ্কৃতীদের। এমনই অভিযোগ বিজেপির। অন্যদিকে, দিনহাটায় গুলিবিদ্ধ আরও ১ বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সন্ত্রাসের বলি ১:
দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও ভোট সন্ত্রাস। বাসন্তীর ফুলমালঞ্চ গ্রামে ভোটের লাইনে দাঁড়ানো যুবক বোমাবাজিতে নিহত। তৃমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে ব্যাপক বোমাবাজি চলে বুথে। ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন এক তৃণমূলকর্মী। ঘটনাস্থলে মৃত্যু তৃণমূলকর্মীর।