রাজ্যে করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত। মঙ্গলবার একলাফে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ৩৯৬। একদিকে লকডাউন শিথিল হয়েছে, অন্যদিকে পরিযায়ীরাও ঘরে ফিরছেন। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা। যা বিবেচনা করে আরও ১৫টি কোভিড-১৯ হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। মঙ্গলবারই রাজ্য প্রশাসনের তরফে এই ঘোষণা করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে রাজ্যে মোট ৬৯ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৬টি রাজ্য সরকার পরিচালিত ও ৫৩টি বেসরকারি হাসপাতাল। করোনা চিকিৎসায় মোট শয্যা সংখ্যা রয়েছে ৮,৭৮৫টি। রাজ্য সরকার সূত্রে খবর, দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় উত্তরবঙ্গে করোনা হাসপাতালের সংখ্যা কম। তাই নতুন ১৫ করোনা হাসপাতালের বেশিরভাগই হবে উত্তরবঙ্গে। দার্জিলিং, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার উত্তর দিনাজপুর, ও মালদার জেলাকে বিবেচনা করে এই হাসপাতালগুলো গঠন করা হবে।
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, 'উত্তরবঙ্গে কোভিড-১৯ হাসপাতালের ঘাটতি রয়েছে। এখনও কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে কোনও করোনা হাসপাতা নেই। ফলে তিন থেকে চারটে হাসপাতালের জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন রয়েছে।' তিনি জানান, 'কোচবিহারের ১১৮ জন করোনা সংক্রমিত। তাঁরা প্রত্যেকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ভবিষ্যতে সংক্রমণে সংখ্যা বাড়লে সমস্যা হবে। তাই উত্তরবঙ্গে করোনা হাসপাতাল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
রাজ্য সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গে গত ২৪ ঘন্টায় ৫৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে, রাজ্যের মাথাব্যাথা বাড়াচ্ছে কলকাতা ও হাওড়া। এই দুই জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ১১৬ ও ৭৪। দক্ষিণবঙ্গের মতোই উত্তরবঙ্গেও গত কয়েকদিনে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার উর্ধ্বমুখী। এখনও পর্যন্ত উত্তর দিনাজপুরে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ১৬৬, মালদহে ১৪৩, কোটবিহারে ১১৮ ও দার্জিলিংয়ে ৩৮ জন।
আরও পড়ুন- করোনায় নয়া রেকর্ড বাংলায়, একদিনে আক্রান্ত ৩৯৬, মৃত আরও ১০
দক্ষিণবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, নাদিয়া, হুগলি, হাওড়া এবং বীরভূমেও বেশকিছু পরিকাঠামোগত উন্নয়ের কাজ হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক। বর্তমানে হাওড়ায় মোট আক্রান্ত ১,১৫৬ জন, হুগলি, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমে আক্রান্ত যথাক্রমে ৩৪৪, ১৬৬, ১০৩ ও ৯৯ জন।
ইতিমধ্যেই রাজ্যে পাঁচ লক্ষ পরিযাযী ফিরেছেন। আরো কয়েক লক্ষ ফিরবেন। এই পরিস্থিতিতে কোয়ারেন্টিন পরিষেবা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য় সরকার। স্বাস্ত্য দফতরের আধিকারিক জানিয়েছেন, 'প্রাথমিকভাবে আমরা প্রত্যেককেই হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা বলেছি। তবে, উপসর্গ থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। জেলা প্রশাসনকে ইতিমধ্যেই কোয়ারেন্টিন সেন্টার বাড়ানোর কথা জানানো হয়েছে।'
গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে রাজ্যে করোনায় মৃত বেড়ে হয়েছে ২৬৩, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন সূত্রে এমনটাই জানা যাচ্ছে। বাংলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ১৬৮। মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজ্যে করোনায় অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৪২৩। বাংলায় করোনা মুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪১০ জন।
করোনার এই লাগামহীন বৃদ্ধির মধ্যেই আশার আলো দেখাচ্ছে কালিম্পং, ঝাড়গ্রাম, আলিপুরদুয়ার সহ বেশ কয়েকটি জেলা। এপ্রিলের ২ তারিখ থেকে কালিম্পংয়ে কোনও করোনা আক্রান্তের হদিশ মেলেনি। গত পাঁচ দিনে ঝাড়গ্রাম, নতুন করে কেউ সংক্রমিত হয়ে পড়েননি। গত ২৪ ঘন্টায় আলিপুরদুয়ার, পশ্চিম বর্ধমানেও কোভিড-১৯ আক্রান্তের খবর নেই। তবে, এক দিনে সংক্রমণ বৃদ্ধি উর্ধবমুখী গতি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। নতুন আক্রান্ত চিহ্নিতকরণ ও আইসোলেশন-কোয়ারেন্টিন প্রক্রিয়ায় আরও বেশি গুরুত্ব আরোপ করতে চলেছে রাজ্য।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন