আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে পুজোয় বৃষ্টির সম্ভাবনা। ঝিরঝিরে বৃষ্টি তারপরই কড়া রোদ, রাজ্যজুড়ে জাঁকিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গির প্রকোপ। পুজোর মধ্যেই নয়া আতঙ্ক। সূত্রের খবর এখনই একাধিক হাসপাতালের বাইরে বেড অমিল বলে বিজ্ঞপ্তিও টানানো রয়েছে। পুজোর আগেই যদি এমন হাল হয় তাহলে পুজোর মধ্যে ডেঙ্গি যে মাথাচাড়া দেবে তা একপ্রকার প্রায় নিশ্চিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তাহলে উপায়? শ্রীরামপুরের বিশিষ্ট চিকিৎসক শুভদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আবহাওয়ার খামখেয়ালিতেই ডেঙ্গুর বিস্তার বেড়েই চলেছে। ঝির ঝিরে বৃষ্টি পরেই কড়া রোদ ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকটাই বাড়িয়ে তুলেছে। নিজেদের সাবধানতা অবলম্বন ছাড়া ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে তেমন কোন উপায় নেই। তাঁর পরামর্শ জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করান। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই সময়ে জ্বর হলে নিজে থেকে ওষুধ খাওয়া একেবারেই অনুচিত”।
এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে এই মুহূর্তে ভর্তি রয়েছেন ৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালকে ডেঙ্গু চিকিৎসায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ডেঙ্গুর এই বাড়বাড়ন্ত নিয়ে কলকাতার মেয়র ফিরাদ হাকিম বলেন, “ এই সময়ে প্রতি বছরই ডেঙ্গুর একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তবে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। আমরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে স্প্রে করছি। এমনকী পুজো মণ্ডপগুলিতেও লার্ভা নিরোধক স্প্রে করা হচ্ছে। আমরা ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাব কিন্তু মানুষকে সচেতন থাকতে হবে”।
আরও পড়ুন: < কলকাতাকে টেক্কা জেলার পুজোর,৭০ ফুটের মাতৃপ্রতিমা ঘিরে চমকের ছড়াছড়ি! >
পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানান, “কলকাতা পুরসভার ১৪৪ টি ওয়ার্ডে ইতিমধ্যেই ডেঙ্গু সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর পাশাপাশি স্প্রে করার কাজ চলছে। মেডিকেল টিমকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি এম আর বাঙ্গুর হাসপাতাল, এসএসকেএম হাসপাতাল, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে অতিরিক্ত বেড রেডি রাখা রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকছে”।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর সপ্তমী ছাড়া পুজো বাকী দিনগুলিতে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিও খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে তৎপর পুরসভা তবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে কিন্তু উদ্বেগ অব্যাহত। কলকাতার পাশাপাশি হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, উত্তরে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিংয়েও ভয়ঙ্কর ভাবে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। ইতিমধ্যে উত্তরের জেলাগুলিতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ দল সেখানে নিয়ে পরিস্থিতি সরজমিনে খতিয়ে দেখেন। তবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অনেকক্ষেত্রেই ডেঙ্গু টেস্ট করতে অনেকটাই দেরি করছেন রোগীরা। তাতে পরিস্থিতি অনেকক্ষেত্রেই জটিল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকছে। তাদের পরামর্শ জ্বর হলে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ডেঙ্গু টেস্ট করিয়ে নেওয়াটা খুবই দরকার।
আরও পড়ুন: < থিমের অভিনবত্বে সমাজসেবী পাপিয়াকে কুর্নিশ, ভাগাড়ের মা’র কর্মকাণ্ড ফুটে উঠবে কলকাতার পুজো মণ্ডপে! >
এদিকে রাজ্যজুড়ে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪০ জন। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগ উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, কলকাতা, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলার বাসিন্দা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জনগণকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি মশারি ব্যবহার এবং বাড়ির আশেপাশে জল জমতে না দেওয়ার মতো ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে কলকাতায় ল্যাবগুলিতে যে পরিমাণ রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে তার মধ্যে ১৫ শতাংশ রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।
ডেঙ্গুর এই দাপট নিয়ে পিয়ারলেস হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজিস্ট ভাস্কর নারায়ণ চৌধুরী বলেন, " ডেঙ্গুর এই বাড়বাড়ন্ত বৃষ্টিপাতের ওপরের অনেকংশে কিছু নির্ভর করে। ২০১৯ সালে আমরা সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর একটা বাড়বাড়ন্ত দেখেছিলাম,। তবে শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ ধীরে ধীরে কমতে থাকবে”।