মহাকালের বাঁধা ধরা নিয়মে অন্তিম লগ্নে এসে পৌঁছেছে ২০১৮। কড়া নাড়ছে নতুন বছর। সমাদরে স্বাগত জানানোর পরিকল্পনায় মেতে উঠেছেন আট থেকে আশি। আনন্দ-কষ্ট, আশা-নিরাশা, গর্ব-আক্ষেপের টানাপোড়নে ২০১৮ কে বিদায় জানানোর পাশাপাশি অগোচরেই উঁকি দিচ্ছে ২০১৯ এর একাধিক স্বপ্ন। এরই মাঝে বছরের শেষ দিনে ফিরে তাকালে যা স্পষ্ট, তা হল ২০১৮-র কিছু হারানোর ক্ষত। অমোঘ নিয়মে চিরবিদায় জানাতে হয়েছে রাজনীতি, বিনোদন ও সংস্কৃতি অঙ্গনের একাধিক কৃতি ব্যক্তিত্বকে। একসময় যাঁরা রাজনীতির মাঠ থেকে শিল্পাঙ্গনে নিজেদের প্রতিভায় একের পর এক মাইলস্টোন গড়েছেন। তাঁরা আজ চিরদিনের মতো পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে।
সুপ্রিয়া দেবী
প্রজাতন্ত্র দিবসের দিনে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন সুপ্রিয়া দেবী। মৃত্যুর সময়ে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। বেণুদির প্রয়াণে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে চলচ্চিত্র দুনিয়া।
শ্রীদেবী
বছরের শুরুর দিকের এই আকস্মিক প্রয়াণে হতচকিত হয়েছিল সারা বিশ্ব। সবাইকে ছেড়ে চিরনিদ্রায় যান এই সুপারস্টার। শ্রীদেবীর মৃত্যুশোকে মুহ্যমান হয়ে যায় সিনেমা জগৎ। দুবাইয়ের বিলাসবহুল হোটেলের বাথটবে পাওয়া যায় তাঁর নিথর দেহ।
স্টিফেন হকিং
পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায়, বিশেষ করে ব্ল্যাক হোল থিওরিতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য, চিরস্মরণীয়। ৭৬ বছর বয়সে চলে যান বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং।
এম করুণানিধি
৭ অগাস্ট মারা যান দু’দশক ধরে তামিলনাড়ুর প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন থাকা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এম করুণানিধি। কালাইনার করুণানিধির শোকে মর্মাহত তাঁর ভক্তকুল। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরে দাক্ষিণাত্যের রাজনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি ছিলেন তিনি৷
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়
দক্ষিণ কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন লোকসভার এই প্রাক্তন স্পিকার। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। মরণোত্তর দেহদান করে গিয়েছিলেন তিনি।
অটলবিহারী বাজপেয়ী
লড়াই শেষ। দীর্ঘ রোগভোগের পর প্রায় ছত্রিশ ঘন্টা লাইফ সাপোর্টে থেকে এক বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রয়াত হন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
অশোক মিত্র
মে দিবসেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বিশিষ্ট বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদ অশোক মিত্র। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বভার সামলেছিলেন।
আয়ুব বাচ্চু
শুধু গিটারের ছ’টা তারে যে পাঁজর নিঙড়ে অনুভূতির প্রকাশ ঘটানো যায় তা নোনা জলের ওপারে বুঝেছিলেন জ্যানিস জপলিন, জিমি হেনড্রিক্সরা। আর পদ্মাপারে জোয়ার আনলেন আইয়ুব বাচ্চু। বাংলাদেশের সঙ্গীতে ‘ফিলিংস’ নিয়ে আসা মানুষটা এরপর গেয়ে গেয়ে গড়লেন ইতিহাস। তারপর ১৮ অক্টোবর, ঢাকার স্কোয়ার হাসপাতাল থেকে চির ছুটিতে রকস্টার।
স্ট্যান লি
স্ট্যান লি - স্পাইডার ম্যান, থর, দ্য ইনক্রেডিবল হাল্ক এবং এক্স ম্যানের মতো সুপারহিরোর জনকের জীবনাবসান হয়েছে এবছর। তিনি মার্ভেল কমিকসের প্রাক্তন প্রধান সম্পাদক এবং প্রকাশক ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
বিপ্লবকেতন চক্রবর্তী
লিভারের সমস্যায় ভর্তি ছিলেন বেসরকারি হাসপাতালে। বাড়িতে নিয়ে আসার কিছুদিনের মধ্যেই প্রয়াণ ঘটল বর্ষীয়ান এই অভিনেতার। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। আরও এক নক্ষত্রপতন।
দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। বার বার ফুসফুসে সংক্রমন জনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। শিল্পীর প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত সঙ্গীতমহল ৷
নিরুপম সেন
এই বছরই প্রয়াত হলেন সিপিআইএম নেতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন। সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে সিপিএমের এই পলিটব্যুরো নেতার। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
বড়দিনের রোদ্দুর ফেলে চিরছায়ায় চলে গেলেন কলকাতার যীশু। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
জর্জ বুশ
৯৪ বছর বয়সে চলে গেলেন জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ। আন্তর্জাতিক রাজনীতি মহলের কাছে তিনি অবশ্য বেশি পরিচিত সিনিয়র বুশ হিসেবেই। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ঠাণ্ডা যুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে মার্কিনদের চোখে রাতারাতি 'নায়ক' হয়ে ওঠা জর্জ বুশ।
বার্নার্দো বার্তোলুচ্চি
ইতালীর এই কিংবদন্তি পরিচালকের জীবনাবসান হয় এই বছরই। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর ৷ অস্কার বিজয়ী এই পরিচালক দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন ক্যানসার রোগে ৷
রমাপদ চৌধুরী
যাঁর বইয়ের ব্লার্বে লেখা হত, ‘সতেরোয় শুরু, পচিঁশে প্রতিষ্ঠিত, তিরিশের আগেই বিখ্যাত লেখক’, তিনি রমাপদ চৌধুরী। বাংলা সাহিত্যে এক শ্রদ্ধেয় নাম। ৯৬ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন বাংলা ভাষার বিশিষ্ট সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরী।
মৃণাল সেন
'খারিজ' উপন্যাসের লেখক রমাপদ চৌধুরী প্রয়াত হয়েছিলেন এই কদিন আগেই। এবার জীবনাবসান ঘটল সে উপন্যাসের চলচ্চিত্রকারের। দীর্ঘ জীবন, বহু কাজ ছিল মৃণাল সেনের। সে কাজের সুবাদে বিশ্ব সিনেমার দরবারে উঁচু হয়েছে ভারতের মাথা, বারবার।