/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/04/Chitmahal-cover-final.jpg)
অনেক আশা ছিল ছিটমহলের বাসিন্দাদের। কিন্তু ভারতের সঙ্গে যুক্ত হলেও হতাশ তাঁরা। ছবি- শশী ঘোষ
বয়সের ভারে কথা একটু জড়ালেও হাঁটাচলায় কোনও অসুবিধা নেই। কাঠের উনুনে রান্না করতেও সিদ্ধহস্ত। পরাধীন ভারত ও বাংলাদেশের ছিটের বাসিন্দা হিসেবে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের ছিয়াশিটা বছর। নাম সুখনারায়ন বর্মণ। বাড়ি কোচবিহারের ফলনাপুর। কিন্তু বাংলাদেশের ছিটমহলের বাসিন্দার পরিচয় ঘুচে ভারতীয় হলেও এই জীবনে সুখের মুখ দেখলেন না এই অশীতিপর বৃদ্ধ। নামেই শুধু জুড়ে রয়েছে সুখ। তাঁর কথায়, "এখনও বার্ধক্য ভাতা জুটলো না। আর কত দিনই বা বাঁচব? এ জন্মে বোধহয় আর জুটবে না। অথচ কত যে পরিচয়পত্র তৈরি হয়েছে গত চার বছরে তার ইয়ত্তা নেই। এদেশের বাসিন্দা হয়ে রেশনটাই যা ঠিকঠাক মেলে।"
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/04/Chitmahal-pic-inline-01.jpg)
ভোটের বাদ্যি আজ সশব্দে বাজছে কোচবিহারে। এরাজ্যে প্রথম দফার লোকসভার ভোট আজ, ১১ এপ্রিল, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই এদেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরও নাগরিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত বলে ক্ষোভ উগরে দিলেন শীতলকুচির ফলনাপুরের বাসিন্দারা। এদেশের বাসিন্দা হওয়ার আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি এখনও অথৈ জলে। আজ ছিটমহলবাসী প্রথমবার দেশের শাসক নির্বাচনের ভোট দিতে চলেছেন। এর আগে ২০১৬ বিধানসভা, গ্রাম পঞ্চায়েত ও লোকসভার উপনির্বাচনের ভোটে অংশ নিয়েছিলেন এখানকার বাসিন্দারা।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/04/Chitmahal-pic-inline-05.jpg)
ফলনাপুরের বাসিন্দা ৬৭ বছরের বিজেন্দ্রলাল বর্মণ ব্যতিক্রম নন। ছিটমহলের নানা আন্দোলনের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ভেবেছিলেন এদেশের সঙ্গে যুক্ত হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ভুল ভেঙেছে তাঁরও। তাঁর বক্তব্য, "স্বর্গ কোথায়? এ তো নরক। এদেশে এলে যে সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল তার অধিকাংশই পূরণ হয়নি। কথা দিয়েও কেউ কথা রাখেনি। আমরা বঞ্চনার শিকার। গ্রামের রাস্তা এখনও কাঁচা। একটু বর্ষা হলে হাঁটাই দায়।"
বিজেন্দ্রবাবুর অভিযোগ, সাঙ্গারবাড়ি থেকে খলিসামারি যাওয়ার দুই কিলোমিটার রাস্তায় কোনও কাজ হয়নি। ছিটের সময় যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে। বুড়োধরলা নদীর ওপর প্রতিশ্রুত তিনটি সেতুর একটিও হয়নি। তাঁর কথায়, "বৃষ্টি হলেই ভেলায় ভাসা ছাড়া আমাদের কোনও উপায় থাকে না। দুবছর আগে আইসিডিএস সেন্টারের ভবন তৈরি হয়েছে গ্রামের বাসিন্দা বীরেন বর্মণের চার শতক জমির ওপর। সেই কেন্দ্র এখনও চালু হয়নি।"
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/04/Chitmahal-pic-inline-04.jpg)
গ্রামবাসীরা জানান, ফলনাপুরে ৮০০ বাসিন্দার বাস। ভোটার সাড়ে চারশো। এখান থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। কলেজের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। বিজেন্দ্রবাবুর বক্তব্য, "জেলাশাসক দফতরে গিয়ে দেখেছি নির্মল জেলা কোচবিহারের বোর্ড ঝুলছে এক জায়গায়। কিন্তু এখানে তার কিছুই হয়নি। এখনও আবাস যোজনার কোনও সুবিধে পান নি একজন বাসিন্দাও। রেশন ও বিদ্যুৎ ছাড়া উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে নি এখানে। আমাদের দাবি, ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করতে হবে। তা না থাকলে আবার কবে বলবে আমরা এদেশের বাসিন্দাই নই। এতদিন বাংলাদেশের রংপুরের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও 'নেই দেশের' বাসিন্দা ছিলাম।"
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/04/Chitmahal-pic-inline-03.jpg)
স্বাধীনতার জন্মলগ্ন থেকেই শুরু হয় ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহল সমস্যা। সীমানা নির্ধারণের নিয়ম মানা হয়নি অনেক ক্ষেত্রেই। মূলত এক দেশের ভূখন্ডের চারিদিকে দ্বীপের মত ছোট্ট জমির খণ্ডটি অন্য এক দেশের। যার পোষাকি নাম ছিল ছিটমহল। ভারতের ১১১টি ছিটমহল ছিল বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ছিল ভারতে। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই সব ছিটমহল দুদেশের মধ্যে পারস্পরিক হস্তান্তর হয়। রাষ্ট্রহীন ছিটের লোকেদের নাগরিকত্ব জুটলেও এখনও তাঁরা 'ইন্ডিয়া' বলতেই অভ্যস্ত। বিজেন্দ্রবাবুর কথায়, "অভ্যাস বদলাতে সময় তো লাগবেই।"