কেটে গিয়েছে বামেদের ১৬ বছর, তৃণমূলের ৯ বছর। দীর্ঘ ২৫ বছর পর কর্মরত মৃত বাবার চাকরি জুটল ছেলের। একটা ফেস বুক পেজের মাধ্যমেই সমস্যা মিটল মাত্র তিন মাসেই। 'বাপ কে বলো' টিমের সহযোগিতায় ধন প্রাপ্তি ঘটল মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার বাগডাঙ্গা গ্রামের হারাধনের। দিনমজুরি, রাজমিস্ত্রির কাজ করে কোনওরকমে দিনাতিপাত করে অবশেষে ৪৫ বছর বয়সে গত সোমবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কাজে যোগ দিলেন হারাধন ঘোষ।
হারাধনের বাবা রোহিনী মোহন ঘোষ কলকাতা পুলিশের হেড কনস্টেবল পদে কাজ করতেন। ১৯৯৫-তে কর্মরত অবস্থায় কলকাতায় পুলিশ হাসপাতালে মৃত্যু হয় রোহিনীবাবুর। হারাধন ঘোষ বলেন, "ওই বছরই আমার মা শান্তিলতা ঘোষ এক্সেমটেড ক্যাটাগরিতে(Exempted Category) সংরক্ষিত আসনে আমার চাকুরীর জন্য কলকাতা পুলিশের কাছে আবেদনপত্র জমা দেন। দীর্ঘ বছর পরে ২০১৬-তে কলকাতা পুলিশ আমাদের জানিয়ে দেয়, এসব ক্ষেত্রে পুলিশ বিভাগ কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি গ্রহণের সুযোগ থাকে। সেই মতো আমি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান বিভাগে কর্মজীবনের জন্য বেছে নিই। এই বিভাগ থেকে প্রথমবারের মতো নথি পাই ২০১৭-তে। তাঁদের নির্দেশ মেনে আমি পিভিআর(PVR), মেডিক্যাল ফিটনেস থেকে যাবতীয় প্রক্রিয়াগুলি সম্পন্ন করি। ২০২০-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমি সর্বত্র ছোটাছুটি করে নিরাশ হই। এই জীবনে আমি চাকরির আশা প্রায় ত্যাগ করি।"
হারাধনের আক্ষেপ, "বিগত ২৫ বছরের বিরামহীন ছোটাছুটির মধ্যে শুধু কলকাতার বড় বড় অফিসই ছিল না, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির বাড়ি থেকে শুরু করে ব্লক সভাপতি, বিধায়ক, এমনকি সাংসদের বাড়িও গিয়েছি। এই দৌঁড়ঝাপে বয়স পৌঁছে গেল ৪৫ বছরে। ঠিক তখনই 'বাপ কে বলো'-র সৌজন্যে দিশা খুঁজে পাই। ১ ফুব্রুয়ারি যোগ দিয়েছি সরকারি চাকরিতে।" স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে কোনওরকমে এতগুলি বছর কাটিয়েছেন হারাধনবাবু।
মহম্মদ সেবলু, ইমরান আলম সহ স্থানীয় কয়েকজন যুবকের মাধ্যমে 'বাপ কে বলো' পেজের সন্ধান পান হারাধন ঘোষ। এর আগে স্থানীয় কিছু সমস্যা সমাধানে এই পেজের ভূমিকা ছিল। হারাধনবাবুর সোশাল মিডিয়া নিয়ে তেমন ধারনা না থাকায় সেবলু ও ইমরান ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ মারফত 'বাপ কে বলো' টিমের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হাইস্কুলের শিক্ষক সেবলু ইমরানকে সঙ্গে নিয়ে যাবতীয় তদারকি করতে থাকেন হারাধান ঘোষের হয়ে। 'বাপ কে বলো'-র সদস্যরা যাবতীয় নথি যাচাই করে চাকরি নিশ্চিতভাবে হবে বলে হারাধনবাবুকে আশ্বস্ত করে। ধারাবাহিকভাবে এই পেজের সদস্য সেলিম রেজওয়ানের সঙ্গে যোগযোগ রেখে যান সেবলু, ইমরানরা। এরপর টিমের সদস্যদের নির্দেশ অনুসরণ ও পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হয়।
মহম্মদ সেবলু বলেন, "হারাধনবাবু বিষয়টা জানানোর পর আমি ও ইমরান উদ্যোগ নিই। 'বাপ কে বলো'-র পেজের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা আমাদের নথি পর্যালোচনা করে নানান পরামর্শ দেয়। সেই অনুযায়ী আমরা হারাধনবাবুকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকি। শেষমেশ গত ১৮ জানুয়ারি নিয়োগপত্র পান তিনি। সোমবার হারাধনবাবু মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে কাজে যোগ দিয়েছেন।" 'বাপ কে বলো' পেজের পক্ষে মহম্মদ সেলিম রেজওয়ান বলেন, "আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেবলু. ইমরান। হারাধন ঘোষ ওদের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারপর তিন মাস ধরে নানা প্রচেষ্টার মাধ্যমে অসাধ্য সাধন হয়েছে।"