নিরীহ প্রাণীদের উপর বেনজির নৃশংসতা! বন-জঙ্গল ও প্রকৃতিকে আঁকড়ে বেঁচে থাকা বিভিন্ন পাখি ও প্রাণীদের নির্বিচারে হত্যা করে যাচ্ছিল ৩০ জনের শিকারিদের একটি দল। পরপর এমন অভিযোগ পেয়ে শেষমেশ নড়ে চড়ে বসে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানার পুলিশ ও জেলার বন দফতর। পুলিশ সুপার আমন দীপের কথায়, "বন্য প্রাণী হত্যায় দায়ে বন্য প্রাণ সংরক্ষণ আইনে ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতরা বীরভূমের বাসিন্দা।"
রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে এই পূর্ব বর্ধমান জেলারই পূর্বস্থলীর চুপির পাখিরালয়। এখন বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আস্তানা হয় উঠেছে এই পাখিরালয়। পাখি দেখার টানে সারা বছর বহু পর্যটক চুপির পাখিরালয়ে আসেন। তা দেখে জেলার পশু-পাখি প্রেমী সংগঠন ও বাসিন্দারাও চান, জেলার সব জঙ্গল আবৃত এলাকা হয়ে উঠুক বন্য প্রাণী ও পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। কিন্তু শিকারিদের নিষ্ঠুরতার কারণে তা আর হয়ে উঠছে না।
কেতুগ্রামের বাসিন্দা ও পশু-পাখি প্রেমী সংগঠনের সদস্যদের কথা অনুযায়ী, কেতুগ্রাম ও কাটোয়ায় অজয় এবং ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী এলাকায় রয়েছে ঝোপ-জঙ্গল। সেখানেও বহু বন্য প্রাণী ও নানা ধরনের পাখি আশ্রয় নিয়ে থাকে। কিন্তু কেতুগ্রামের ঝোপ-জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া সেই সব বন্য প্রাণী ও পাখিদের উপর নজর পড়ে শিকারিদের। বীরভূম থেকে আসা শিকারি দলের লোকজন শনিবার কেতুগ্রামের ঝোপ জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে থাকা প্রাণী ও পাখিদের শিকারে মত্ত হয়। কেতুগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে শয়ে-শয়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, ১২ রকমের গোসাপ, বেজি, কাঠবেড়ালি, বনবিড়াল ও নেউলকে নির্বিচারে হত্যা করে তারা।
আরও পড়ুন- Digital School: সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় ডিজিটাল স্কুল, খুশিতে ডগমগ খুদে পড়ুয়ার দল
এক দিনে এত বিপুল সংখ্যায় বন্য প্রাণী ও পাখি হত্যা দেখে শিউরে ওঠেন কেতুগ্রামের বাসিন্দারা।একইভাবেস্তম্ভিত হয়ে যান 'হিউম্যান অ্যাণ্ড এনভায়োরেন্টমেন্ট অ্যালায়েন্স লিগ' নামে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরাও। তাঁরা গোটা ঘটনার কথা বন দফতরে জানালে দফতরের আধিকারিকরাও নড়েচড়ে বসেন। বন দফতর থেকে কেতুগ্রাম থানায় খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ ও বন দফতরের আধিকারিকরা যৌথভাবে অভিযানে নেমে ৩০ জন শিকারিকে পাকড়াও করে। বাজেয়াপ্ত করা হয় শিকারে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, ট্রাক্টর, মোটর চালিত ভ্যান ও বাইক।
আরও পড়ুন- Sealdah Division: শিয়ালদহ ডিভিশনে বিশেষ অভিযান, ১০ হাজারের বেশি বিনা টিকিটের যাত্রীকে জরিমানা
জেলা বন আধিকারিক কেতুগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ ’বন্য প্রাণ সংরক্ষণ আইনের’ ধারায় মামলা রুজু করে ৩০ জন শিকারিকে গ্রেফতার করে রবিবার কাটোয়া মহকুমা আদালতে পেশ করে। বিচারক শর্ত সাপেক্ষে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
এভাবে নির্বিচারে বন্য প্রাণী হত্যার কী কারণ? ধৃত শিকারি জগন্নাথ হেমব্রম জানান, মাংস খাওয়ার জন্যই তাঁরা বন্যপ্রাণী শিকার করেছেন। তাঁর কথায়, "বছরে একদিন পরব উপলক্ষে আমরা শিকারে বের হই। সেই মতোই শনিবারও শিকারে বেরিয়ে ছিলাম। তবে শিকারের জন্যে যে গ্রেফতার হতে হবে তা বুঝতে পারিনি।"
আরও পড়ুন- Mango: আম কিনতে ঠকার দিন শেষ! বাম্পার কায়দায় চিনুন ফলের জাত, এলাকা, চাষীর পরিচয়
অন্যদিকে, কাটোয়া মহকুমার সহকারি বন আধিকারিক সোমনাথ চৌধুরী বলেন, “বন্য প্রাণী হত্যা আইনত অপরাধ। শনিবারর দু’শোর বেশি বন্যপ্রাণী হত্যার দায়ে ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিকার উৎসবের নামে বন্যপ্রাণী হত্যা না করার জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রচার চালানো হয়। তবুও বন্যপ্রাণ শিকার ঠেকানো যাচ্ছে না।"