মিজোরামে নির্মীয়মাণ রেলব্রিজ ভেঙে মালদার ২৩ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ্রমিকরা গিয়েছিলেন রেলব্রিজ তৈরির কাজে। ইংরেজবাজারের সাটটারি গ্রামের চার ভাইও গিয়েছিলেন মিজোরামে রেলের ব্রিজ তৈরির কাজে। মর্মান্তিক দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়েছে চার ভইয়েরই। বাড়ি তৈরির ঋণের টাকা এখন শোধ দেবে কে? ভেবেই কুল পাচ্ছেন না পরিবারের সদস্যরা। এদিকে, মালদার মৃত শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এদিনই পৌঁছেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
বাড়ি তৈরির জন্য ৫ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন মালদার ইংরেজবাজারের সাটটারি গ্রামের বাসিন্দা জাল্লু সরকার। পরিকল্পনা ছিল ভিন রাজ্যে কাজ করে ধীরে-ধীরে মহাজনের সেই ধারের টাকা শোধ করবেন। জাল্লু-সহ তাঁর চার ভাই গিয়েছিলেন মিজোরামে দিনমজুরির কাজে। গত বুধবার নির্মীয়মাণ রেল ব্রিজ ভেঙে পড়ে জাল্লু সরকার-সহ তাঁর চার ভাইয়েরই মৃত্যু হয়েছে। তারপর থেকেই মাথায় হাত পড়েছে গোটা পরিবারের।
মালদার ইংরেজবাজারের বিনোদপুর পঞ্চায়েতের সাটটারি গ্রাম। এই গ্রামেরি বাসিন্দা জাল্লু সরকার সহ তাঁর গোটা পরিবার। একই পরিবারের চার সদস্যের এমন মর্মান্তিক পরিণতিতে গোটা গ্রাম শোকে বিহ্বল। গ্রামবাসীদের দাবি, এলাকায় ১০০ দিনের কাজ বন্ধ রয়েছে। আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির সুযোগও নেই। বাধ্য হয়েই দিনমজুরের কাজে ভিনরাজ্যে ছুটতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। এব্যাপারে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন- বন্দে ভারত ‘বিপত্তি’তে খোদ রাজ্যপালও, হাওড়া স্টেশনে যাত্রী-বিক্ষোভ
উল্লেখ্য, গত বুধবার মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে পার্বত্য এলাকায় নির্মীয়মাণ একটি রেল ব্রিজ ভেঙে মালদার ২৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের দেহ শুক্রবারই জেলায় পৌঁছোনোর কথা। মৃত শ্রমিকদের মধ্যে অধিকাংশই মালদার পুখুরিয়া থানার চৌদুয়ার গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়াও ইংরেজবাজারের সাটটারি এলাকার শ্রমিকরাও তালিকায় রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে জাল্লু সরকার-সহ তাঁর পরিবারের চার সদস্য রয়েছেন।
মৃত জাল্লু সরকারের এক আত্মীয় চৈতন্য সরকার বলেন, 'একটা সময় বাংলা আবাস যোজনায় ঘর পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু সেটাও বন্ধ হয়ে রয়েছে। ১০০ দিনের কাজও নেই। এখানে কাজ করলে দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা রোজগার হয়। ভিন রাজ্যে কাজ করতে গেলে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা উপার্জন হয়। জাল্লু সরকার বাড়ি তৈরির জন্য মহাজনের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ধার করেছিল। কিছু টাকা শোধ করেছিল। বাকি টাকা শোধের জন্যই মিজোরামে চার ভাইকে নিয়ে কাজে গিয়েছিল। তার মধ্যেই এই ঘটনা।'
আরও পড়ুন- মধ্যরাতে তারাপীঠে হইচই, গর্ভগৃহে ফিরলেন মা তারা
মৃত জাল্লু সরকারের স্ত্রী সারথি সরকার জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় বাড়ির চার পুরুষেরই মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে বাড়িতে একজনও পুরুষ নেই। কীভাবে মহাজনের টাকা শোধ দেবেন তা তিনি ভেবে পাচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, ছোট-ছোট ছেলেমেয়েদের কীভাবে তিনি মানুষ করবেন, তাও ভেবে পাচ্ছেন না। রাজ্য সরকার ২ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
আরও পড়ুন- পরকীয়ার অভিযোগ! অবর্ণনীয় অত্যাচারে চরম ‘শাস্তি’, লজ্জায় এ কী করলেন মহিলা
তবে সেই টাকাতেও তাঁদের জীবন কীভাবে চলবে তা ভেবেই কুল পাচ্ছেন না ওই মহিলা। গ্রামবাসীদের দাবি, ওই পরিবারের একজন সদস্যকে অন্তত চাকরির ব্যবস্থা করে দিক সরকার। আর কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। এদিকে, মিজোরামে মৃত শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এদিন মালদায় পৌঁছেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শুক্রবার সকালে ট্রেনে মালদায় নামেন রাজ্যপাল। মৃতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানিয়েছেন সিভি আনন্দ বোস।