Kolkata Private Bus Service: নতুন বছরে কলকাতায় বেসরকারি বাসের (private bus Servicei in Kolkata) সংখ্যা একলাফে অনেকটাই কমে যাচ্ছে। ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে হওয়ায় প্রায় চার হাজার বেসরকারী বাসের চাকা থমকাবে। গণপরিবহণে যার আঁচ পড়বে মারাত্মকভাবে। ফলে চরম সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে যাত্রীদের।
শহরের চারটি আঞ্চলিক পরিবহন অফিসে (আরটিও) নতুন বাস নথিভুক্তকরণের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৪-১৫ সালে নথিভূক্তকরণের সংখ্যা ৮৭১-টি ছিল। যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র 46-টিতে। রাজ্য পরিবহণ দফতর থেকে সংগ্রহ করা পরিসংখ্যান অনুসারে, নতুন বাসের নিবন্ধনের সংখ্যা ২০১৫-১৬ আর্থিক বছর থেকে কমতে শুরু করেছে, যা তারপর থেকে ক্রমাগত কমছে।
অঙ্কের হিসাবে, কলকাতা সংলগ্ন চারটি আরটিও-তে বেসরকারি বাস নথিভুক্তকরণের সংখ্যা ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে ৪০৯-টি। ২০১৬-১৭-তে ১৬৮-টি। ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ সালে সেই সংখ্যা যথাক্রমে ২৮৫ ও ২৩১-টি। ২০১৯-২০ সালে চার আরটিও-তে বেসরকারি বাস নথিভুক্ত হয়েছিল ১২৮-টি। এরপরই কোভিড মহামারীর প্রভাব পড়ে গণপরিবহণ ব্যবসায়। ২০২০-২১ সালে ৮১, ২০২১-২২-এ ৬৭, ২০২১-২২ সালে ৫০ এবং ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৪৬টি বেসরকারি বাস নথিভুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- দিঘা যাচ্ছেন? মন্ত্রমুগ্ধকর এপ্রান্তে যেতে ভুলবেন না, অসাধারণ এতল্লাট দিঘার নয়া আবিষ্কার
করোনা মহামারী চলাকালীন বাস ব্যবস্য়ায় বড় ধরনের পতন ঘটেছিল, পরিবহন বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার কথায়, 'আমরা প্রাইভেট বাস অপারেটরদের পক্ষ থেকে নতুন যানবাহন কেনার প্রতি অনীহা দেখেছি। কিন্তু ওই সময়ে ট্যাক্সি এবং অটোরিকশার মতো বাণিজ্যিক গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধির সাক্ষী হয়েছি।'
অপারেটরদের অভিমত যে, বাস পরিষেবা আর লাভজনক ব্যবসা নয়। কারণ রাজ্যে বাসের ভাড়া ১০ বছর ধরে বাড়ানো হয়নি। এমনকী ডিজেল এবং খুচরা যন্ত্রাংশের দামের পাশাপাশি বীমা এবং রোড ট্যাক্সের দাম প্রতিবার বাড়লেও আনুষ্ঠানিকভাবে বাসের ভাড়া বাড়েনি। এক বাস অপারেটর বললেন, 'কলকাতায় বাস চালিয়ে লাভ করা কঠিন। যদি একজন ব্যবসায়ী লাভ করতেই না পারেন তবে কেন তিনি বাস চালাতে আগ্রহী হবেন?' অনেক বাস অপারেটর ইতিমধ্যে অন্য ব্যবসা শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন- সাইকেলেই হুগলি থেকে অযোধ্যা, রাম মন্দির দর্শনে যুবকের তোলপাড় ফেলা কীর্তি জোর চর্চায়
বাস অপারেটরদের সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, '২০১৪-১৫ সালের পর থেকে ডিজেলের দাম বাড়তে শুরু করে এবং বর্তমানে যা প্রায় ১০০ টাকা ছুঁয়েছে। গত আট বছরে ডিজেরেলের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। বাসের খুচরা যন্ত্রাংশের দামও বেড়েছে। রাজ্য সরকারের বোঝা উচিত জলে বাস চলবে না। বাসের ভাড়া না বাড়লে লাভ হবে কী করে? গত ১০ বছরে, রাজ্য সরকার আমাদের ভাড়া বাড়াতে দেয়নি। বাংলায় এই পরিষেবা প্রায় ধ্বংসের মুখে।' তাঁর সংযোজন, '২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর, ১৫ বছরের বেশি বয়সী সমস্ত বাস পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হচ্ছে। ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার কারণে ২০২৪ সালে চার হাজারের বেশি বাস বাতিল করা হবে। বাসের ভাড়া না বাড়ানো হলে এসব বাস নতুন করে বদলানো হবে না। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হবে যাত্রীদের।'
রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বাস ভাড়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। বলেছেন, 'কোভিডের আগে কলকাতায় বাসের সংখ্যা বাড়লেও পরে তা কমে যায়। আমরা নতুন বাস কিনে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছি। কিন্তু এই চাহিদা সরকার পূরণ করতে পারে না। অতএব, আমরা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মোডে শহরে বাস চালানোর চেষ্টা করছি।'