কলকাতার কাছেপিঠে পরিবার বা প্রিয়জনের সাথে বড়দিন কিংবা বর্ষবরণের রাত কাটাতে অনেকেরই মন টানে আজও সুন্দরী দিঘার সৈকত। সেই সৈকতে সান্তাক্লজের সঙ্গে মাততে রবিবার থেকেই ভিড় জমিয়েছেন অনেকেই। আর বড়দিনের আনন্দে পর্যটকের ঢল দেখে হাসি ফুটেছে ব্যবসায়ীদের মুখেও। সস্তা সুন্দর ভ্রমণের তালিকায় বাঙালির আদি অকৃত্রিম পছন্দ দিঘা। কালের গতিতে তালিকায় সংযোজিত হয়েছে তাজপুর, মন্দারমণি এবং শঙ্করপুরও।
প্রতিবছরই বড়দিন আর ইংরেজি নতুন বছরকে ঘিরে দিঘা সুন্দরী যেন আরও বেশি রূপসী হয়ে ওঠে। বরাবরই তাই এ সময় উৎসব আবহ তৈরি হয় গোটা সৈকতে। যে আয়োজনের কোনও খামতি নেই এবারও। বড়দিনের আগেই রবিবার এক ধাক্কায় বেড়ে গেছে ভিড়। যা হয়তো জনসমুদ্রে পরিণত হতে পারে মঙ্গলবার বড়দিনের সকালেই। এমনই ধারণা দিঘার হোটেল ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পরিবহণ ব্যবসায়ী সকলের।
আরও পড়ুন, বড়দিনে খুলবে কলকাতার আইফেল টাওয়ারের দরজা
দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, "দিঘার প্রায় ৬০ শতাংশ হোটেল-লজ আগে থেকেই পযর্টকরা বুক করে রেখেছেন। বাকি ঘরগুলোও সোমবারের পর আর ফাঁকা থাকবে না।" একই কথা হোটেল ম্যানেজার অচিন্তকুমার জানার মুখেও। বলেন, "বড়দিন-নতুন বছরকে ঘিরে দিঘা আরও নতুন সাজে সেজেছে।সৈকতের সেই সৌন্দর্যায়নের টানেই লাগামছাড়া ভিড় জমবে এবারও।"
পর্যটকদের স্বাগত জানাতে নানা রঙের আলোকসজ্জা এবং বড়দিন উপলক্ষে সান্তা ক্লজ ও ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে সাজানো হয়েছে হোটেলগুলি। বড়দিন এবং নতুন বছরে পর্যটকদের খাওয়াদাওয়া বিনোদনের বিভিন্ন প্যাকেজ চালু হয়েছে হোটেলে। কোথাও থাকছে নৈশ পার্টি, আবার কোথাও কাছেপিঠে অন্যান্য ভ্রমণস্থানগুলিতে ঘুরিয়ে আনার সহজ প্যাকেজ। সঙ্গে লা জবাব খানাপিনাও। ন্যূনতম দামে সেসব সুবিধা পর্যটকরা পাবেন বলে জানিয়েছেন দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক।
বড়দিনের পর ডিসেম্বরের শেষলগ্নে দাঁড়িয়ে ২০১৯-কে স্বাগত জানানোর দিন। বিরাম নেই উৎসবের। আর এই উৎসবকে পুঁজি করে সাজসজ্জার শেষ নেই সৈকত সুন্দরীরও। পুজোর আগেই নতুন করে সেজে উঠেছিল তাজপুর-মন্দারমণি এবং শংকরপুর।নতুন করে নিউ দিঘার যাত্রানালা সৈকতে তৈরি করা হয়েছে বিশ্ব বাংলা বিনোদন পার্ক। নিউ দিঘার ত্রিকোণ পার্ককেও সাজিয়ে গুছিয়ে নেওয়া হয়েছে নতুন করে। সহজ যান চলাচলের স্বার্থে বাইপাসের রাস্তা মেরামত করার কাজও প্রায় শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে পার্কিং পয়েন্ট, চড়ুইভাতির জায়গাগুলিকেও সাজিয়ে তোলা হচ্ছে।
নিরাপত্তার জন্য কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে পুলিশও। কয়েকদিন আগেই স্থানীয় প্রশাসন এবং হোটেল ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক সেরেছেন জেলা পুলিশের কর্তারা। উৎসব আনন্দে যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্য বিপুল পুলিশবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাঁথির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, "আমরা পুলিশ-প্রশাসনের তরফে ভিড় মোকাবিলায় পুরোপুরি প্রস্তুত। পর্যটকদেরও সতর্ক হতে হবে। উৎসবে যাতে কোনও বিশৃঙ্খলা না তৈরি হয় সেদিকে সবাইকে নজর রাখতে হবে।"
সরকারি যাবতীয় আয়োজনের পর এই উৎসবকে অন্য সাজে পর্যটকদের উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। ভিড়ের দিনে দিঘা সহ চার সৈকতের সমস্ত স্নানঘাটের পাশাপাশি রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং জনপ্রিয় স্থানগুলিতে বিশেষ নজরদারি চালাবে সাদা পোশাকের পুলিশ। থাকবে মাইক প্রচার এবং ক্যামেরা নজরদারির ব্যবস্থাও।