Advertisment

স্বাধীনতা দিবসেই রাতের অন্ধকার, গান্ধী আশ্রমকে ক্রমশ ভুলছেন সোদপুরবাসী

গান্ধীজি তো বটেই, জাতীয় রাজনীতির বহু তাবড় নেতা একসময় এখানে আসতেন।

author-image
Chinmoy Bhattacharjee
New Update
Gandhi_Ashram 1B

সোদপুর গান্ধী আশ্রম

প্রতিদিনই ব্যস্ত থাকে সোদপুর রেল স্টেশনের পাশের রাস্তাগুলো। অসংখ্য মানুষ এই স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে নানা জায়গায় যাতায়াত করেন। স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরোলেই চোখে পড়বে সারি দেওয়া দোকান। খাবার থেকে অন্যান্য জিনিস, সব পাওয়া যাবে পরপর দোকানে। মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবস, রাস্তায় নিত্যযাত্রীদের ভিড় একটু কম ছিল। তাই একটা দোকানেই জিজ্ঞাসা করতে হল, 'দাদা, সোদপুরের গান্ধী আশ্রমটা কোথায়?' ধন্ধে পড়লেন প্রৌঢ় দোকানদার। পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, 'গান্ধী আশ্রম? গান্ধী আশ্রম বলে তো এখানে কিছু নেই। অনুকূল ঠাকুরের আশ্রম আছে।'

Advertisment
publive-image
সোদপুর স্টেশনের পাশের রাস্তা

ভুল লোককে জিজ্ঞাসা করেছি ভেবে এগিয়ে গেলাম দু'-তিনটি দোকান বাদে। সংহতি ক্লাবের দিকে যাওয়ার রাস্তায় বামপাশে তৃণমূলের পার্টি অফিস। স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের প্রস্তুতিও তখন তুঙ্গে। অনেক মহাত্মার সঙ্গে গান্ধীজির ছবিও সেখানে টাঙানো। তার ঠিক পাশের দোকানেই ফের একই প্রশ্ন, 'দাদা, সোদপুরের গান্ধী আশ্রমটা কোথায়?' মাঝবয়সি দোকানদারের প্রথম প্রতিক্রিয়া, 'গান্ধী আশ্রম! গান্ধী আশ্রম তো এখানে না।' পরে সামলে নিয়ে বললেন, 'ওহ্! সামনেই দেখুন টোটো স্ট্যান্ড। ওদের লাইনে দাঁড়ান। বলবেন, গান্ধী আশ্রম যাব। একটু দূরে পড়বে। নামিয়ে দেবে।'

publive-image
সামনেই দেখা যাচ্ছে জলের ট্যাংক

ফের ভুল জায়গায় খোঁজ নিয়েছি ভেবে আরও ছ'-সাত পা এগিয়ে গেলাম। রাস্তার কলে জল নিচ্ছিলেন একজন। জিজ্ঞাসা করলাম, 'দাদা, সোদপুরের গান্ধী আশ্রমটা কোথায়?' তিনি খুব সাবলীলভাবে বললেন, 'এই গলিটা ধরে চলে যান। সামনেই যে দেখছেন জলের ট্যাংক। ওরই গায়েই গান্ধী আশ্রম।' দেখলাম, আমি রাস্তার যে ফুটে দাঁড়িয়ে, তার উলটো দিকেই একটা গলি যাচ্ছে সোদপুরের কোয়ার্টার এলাকার দিকে। গলিটার শেষেই জলের ট্যাংক।

publive-image
সোনালি অতীতের সাক্ষী দিচ্ছে এই সব ছবি

কথামতো এগিয়ে গেলাম। চোখে পড়ল সাইনবোর্ডে লেখা, 'গান্ধী মেমোরিয়াল আশ্রম, সোদপুর'। এই সেই জায়গা, যাকে গান্ধীজি তাঁর 'দ্বিতীয় বাড়ি' বলতেন। ১৯৩৯ সালে ত্রিপুরী কংগ্রেসের পরে গান্ধীজির সঙ্গে এই আশ্রমেই ২৭ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত বৈঠক করেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরুরা। তারপরই কংগ্রেস থেকে সুভাষচন্দ্র বসু পদত্যাগ করেন।

publive-image
অনুষ্ঠান মিটতেই তুলে ফেলা হচ্ছে চাদর

আরও পড়ুন- সান্ত্বনা দিতে বুধবার নদিয়ায় যাদবপুরের মৃত পড়ুয়ার বাড়িতে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল

১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর নোয়াখালি দাঙ্গা হয়। তার পর সোদপুরের এই আশ্রম থেকেই নোয়াখালির পথে রওনা হয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী। একটা সময় জাতীয় রাজনীতিবিদদের অন্যতম কর্মকাণ্ডের স্থল এই আশ্রমটি তৈরি করেছিলেন মহাত্মা গান্ধীর স্নেহভাজন ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সহযোগী সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত। পৌনে তিন বিঘা জমিতে সেই সময় হাতেকাটা চরকায় সুতো, খাদিবস্ত্র, মধু, ধূপকাঠি তৈরিই ছিল লক্ষ্য। সেই সব এখন স্মৃতি। এই আশ্রমের ভিতরে বিভিন্ন দেওয়ালে ঝোলানো গান্ধীজির বিভিন্ন মুহূর্তের মলিন হয়ে যাওয়া ছবির মতই।

publive-image
পলেস্তরাখসা দেওয়ালে গান্ধীজির ছবিগুলোও বিবর্ণ

তবে, বিশেষ দিনগুলোতে অনেকে এখানে আসেন। মঙ্গলবারও এসেছিলেন। সেসব দিনগুলোর কথা মাথায় রেখে একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় এই আশ্রম। তারপর অনুষ্ঠান শেষ হলেই দ্রুত টেবিল থেকে সেদিনের জন্য পাতা সাদা চাদর সরিয়ে ফেলা হয়। গান্ধী আশ্রমও যেন সেই চাদরের পরিচ্ছন্নতা থেকে ফিরে যায় বছরের সাধারণ দিনগুলোর মতই বিবর্ণতার দুনিয়ায়।

Mahatma Gandhi North 24 Pargana Independence Day
Advertisment