Advertisment

নিয়মে মাহাত্ম্য, এ বাড়িতে বিজয়ায় দুগ্গা-মাকে সিদুঁর-দান হলেও হয় না সিদুঁরখেলা!

বর্ধমানের মেমারিতে এই দশভূজার পুজো ঘিরেই হইহই রব।

IE Bangla Web Desk এবং Sayan Sarkar
New Update
durgapuja, দুর্গাপুজো, durga puja, দুর্গা পুজো, durga puja 2023, দুর্গা পুজো ২০২৩, durga puja 2023 ashtadhatu memari, অষ্টধাতুর দুর্গা মূর্তি মেমারি, A four inch Ashtadhatu Durga of Memari Biswas clan is worshipped, মেমারির বিশ্বাস পরিবারে চার ইঞ্চির অষ্টধাতুর দেবী দুর্গার মূর্তি পুজো করা হয়

বিশ্বাস পরিবারের চার ইঞ্চির অষ্টধাতুর মূর্তি।

অষ্টধাতুর চার ইঞ্চির দশভূজার মূর্তির পুজো ঘিরে মাতোয়ারা মেমারির নবস্থা গ্রাম। বিগত পাঁচশো বছরেরও বেশী সময়কাল ধরে নবস্থা গ্রামের দক্ষিন পাড়ার বিশ্বাস পরিবারে পূজিতা চার ইঞ্চির অষ্টধাতুর দেবী উমা। নিজ মাহাত্ম্য গুণেই এলাকাবাসীর কাছে আরাধ্য দেবী হিসাবে মান্যতা পেয়ে আসছেন চার ইঞ্চির এই দশভূজা।

Advertisment

শহর,মফস্বলের বড় বাজেটের থিম ভাবনার পুজো দেখা নিয়ে কোনও মাতামাতি নেই নবস্থা গ্রামের বাসিন্দাদের । তারা এখন ব্যস্ত ছোট দুর্গার পুজোর আরাধনায়।পুজো উপলক্ষে বিশ্বাস বাড়ির নাটমন্দির সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। নবস্থা গ্রামের বাসিন্দারা মনে করেন নিষ্ঠা ও ভক্তির মেলবন্ধনে হওয়া তাঁদের ছোট্ট দুর্গা মায়ের পুজো থিমের বড় বাজেটের পুজোর থেকেও বেশী নজরকাড়া।

নবস্থা গ্রামের রাজারাম বিশ্বাসের বাড়ি লাগোয়া মন্দিরে সারা বছর অধিষ্ঠিত থাকেন চার ইঞ্চির
দেবী দুর্গা। পঞ্জিকার নির্ঘন্ট মেনে কোন নির্দিষ্ট দিন বা সময় ধরে নয়,সারা বছরই নিত্যসেবা হয় অষ্টধাতুর এই দুর্গা মূর্তির। মহাসপ্তমির দিন সকালে বিশ্বাস বাড়ির মন্দির থেকে অষ্টধাতুর দশভূজার মূর্তি নিয়ে যাওয়া হয় পরিবারের বড় নাটমন্দিরে। দেবী পক্ষের চারটে দিন নাট মন্দিরেই নিষ্ঠা সহকারে অষ্টধাতুর ছোট্ট দুর্গা মায়ের পুজো হয়। বিশ্বাস পরিবারের কোন পুরুষ এই ছোট্ট অষ্টধাতুর দশভূজা মূর্তির পুজোর সূচনা করেছিলেন তা অবশ্য জানতে পারেননি বর্তমান পরিবার সদস্যরা ।

বিশ্বাস পরিবারের প্রবীন সদস্য রাজারাম বিশ্বাস জানান , পাঁচশো বছরেরও বেশী সময়কাল ধরে তাঁদের বংশের সদস্যরা অষ্টধাতুর ছোট্ট দশভূজা মায়ের পুজোপাঠ করে আসছেন। বর্তমানে বংশের অষ্টম পুরুষরা পুজোর আয়োজন করছেন। পুজোর চারটে দিন লোকাচার মেনেই পুজো হয়। পারিবারিক প্রথা মেনে সন্ধিপুজোর দিন ছাগ বলি,নবমীর দিন ছাঁচি কুমড়ো ও কলা বলি দেওয়ার প্রথা এখনও চালু রয়েছে।

দশভূজা দেবী মায়ের নানা মাহাত্ম্যের কথা জানিয়েছেন রাজারামবাবু। তিনি জানান, ইতিপূর্বে একাধিকবার তাঁদের পরিবারের অষ্টধাতুর দশভূজার মূর্তিটি চুরি হয়ে গেলেও কোনও না কোনও ভাবে মূর্তিটি ফের বিশ্বাস বাড়িতে ফিরে এসেছে। ২০০৭ সালে মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়। তা নিয়ে গ্রামে হুলস্থুল পড়ে গিয়েছিল। ওই সময়কালে এলাকার একটি খালে জেলেরা যখন মাছ ধরছিল তখন তাঁদের জালে দেবী মূর্তিটি উঠে অসে। পুলিশ মূর্তিটি নিজেদের হেপাজতে নেয়। পরে মেমারি ও বর্ধমান থানা ঘুরে অষ্টধাতুর দশভূজা মায়ের মূর্তি ফের মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়। বিশ্বাস পরিবারের অন্য সদস্যদের কথায়, তাঁদের পূর্বপুরুষরা একদা মেমারির বসতপুর এলাকায় বসবাস করতেন। ওই সময়ে এক পূর্বপুরুষের কাঁধে বাজপাখি উড়ে এসে বসে। তার পরেই ওই পূর্ব পুরুষ স্বপ্নাদেশ পান। সেই স্বপ্নাদেশ মেনে অষ্টধাতুর চার ইঞ্চির দেবী দশভূজা মায়ের মূর্তি গড়ে পরিবারে শুরু হয় পুজোপাঠ।

ছোট্ট দশভূজা মাকে নিয়ে এলাকাবাসীর শ্রদ্ধা ও ভক্তি ভাবের অন্ত নেই। এই ছোট্ট দশভূজা মায়ের পুজোই নবস্থা এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গা পুজো। ঐতিহ্য পরম্পরা মেনে নবমীর দিন ১০৮ টি পদ্ম ফুলের মালা দেবী মাকে পরানো হয়। দেবী মায়ের বিধান মেনে বিজয়ার দিন এলাকার সকলে এখনও অপরাজিতা ফুলের তাগা ধারণ করেন। দশমির পুজো শেষ হলে দশভূজার মূর্তি নাট মন্দির থেকে বাড়ি লাগোয়া মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয় । তবে বিশ্বাস বাড়ির পুজোয় দশমির দিন সিঁদুর খেলার কোন চল নেই।

Durgapuja
Advertisment