scorecardresearch

‘শিক্ষক রত্ন’ সম্মান পাচ্ছেন পূর্ব বর্ধমানের এক হাইমাদ্রাসা ও এক প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৫ সেপ্টেম্বর ভার্চুয়াল সভা করবেন। সেই সভায় জেলাশাসকের দফতরে এই দুই শিক্ষককে ‘শিক্ষক রত্ন’ পুরস্কার দেওয়া হবে।

two teachers
'শিক্ষক রত্ন' পুরস্কারের জন্য মনোনীত দুই শিক্ষক পলাশ চৌধুরী ও (ডানদিকে) মহম্মদ উজির আলি। ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

শিক্ষকতাকে শুধুমাত্র পেশা হিসাবে ভেবে নেওয়া নয়। স্কুলের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি সাধন ঘটানো ও পড়ুয়াদের সুশিক্ষিত করে তোলার কাজে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া শিক্ষকরা বরাবরই সমাদর পেয়ে থাকেন। পূর্ব বর্ধমান জেলার এমনই দু’জন শিক্ষক ৫ সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবসের দিনে পেতে চলেছেন রাজ্যের ‘শিক্ষক রত্ন’ সম্মান।

ওই শিক্ষকরা হলেন খণ্ডঘোষের নিশ্চিন্তপুর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ উজির আলি ও বর্ধমান শহরের শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা বিদ্যাপীঠ প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক পলাশ চৌধুরী। এই খবরে খুশি জেলার শিক্ষক মহল। জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৫ সেপ্টেম্বর ভার্চুয়াল সভা করবেন। সেই সভায় জেলাশাসকের দফতরে জেলার এই দুই শিক্ষককে ‘শিক্ষক রত্ন’ পুরস্কার দেওয়া হবে।

বর্ধমান শহরের বাদামতলা এলাকার বাসিন্দা পলাশ চৌধুরী ২০০০ সালে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালে তিনি বর্ধমানের শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা বিদ্যাপীঠ প্রাথমিক স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগ দেন। এই স্কুলে প্রথম থেকে চর্তুথ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। কোভিড অতিমারি ও লকডাউনের জন্য গত দু’বছর স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু এবছর তা বেড়েছে। বর্তমানে স্কুলে মোট পড়ুয়ার সংখ্যা ২০৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ৭ জন।

পলাশ চৌধুরী রবিবার জানান, শুধু নিয়ম মাফিক ক্লাস হওয়া আর নির্দিষ্ট সময়ে ছুটি দিয়ে দেওয়া এই ধারাপাতে তাঁর স্কুল চলে না। কমিউনিটি সচেতনতামূলক প্রচার, শিক্ষকবিহীন শ্রেণিতে পাঠদান, পাঠদানের জন্য বিভিন্ন নতুন পদ্ধতি তাঁরা ব্যবহার করেন। এছাড়াও পড়ুয়াদের নিয়ে ডাটাবেস তৈরি ও ডাটা বানানোর ব্যাপারে তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন।

সঙ্গে, Open Souzee software-এর ব্যবহার করার পাশাপাশি তাঁরা স্কুলে Response System-এর ব্যবহারও করেন। পলাশবাবু আরও জানান, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় T.C.T-এর Master trainner-এর দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন। এই সবকিছুই হয়তো তাঁর ‘শিক্ষক রত্ন’ সম্মান পাওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচিত হয়েছে বলেই পলাশবাবু মনে করেন।

‘শিক্ষক রত্ন’ সম্মান পেতে চলা অপর শিক্ষক মহম্মদ উজির আলির আদি বাড়ি সিউড়ির ইটাগড়িয়া গ্রামে। বর্তমানে তিনি শহর বর্ধমানের বহির্সর্বমঙ্গলা পাড়ায় থাকেন। ইটাগড়িয়া গ্রামের স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করার পর বর্ধমান টাউন স্কুল ও পরে সিএমএস স্কুলে তিনি পড়াশুনা করেন। স্নাতকস্তরের পড়াশুনা তিনি করেছেন বর্ধমান রাজ কলেজে। কল্যাণী ইউনিভার্সিটি থেকে গণিতে মাস্টার ডিগ্রি অর্জনের পর ইটাগড়িয়া হাইস্কুলেই উজির আলির প্রথম শিক্ষকতা জীবন শুরু। পরে ২০০৭ সালে তিনি খণ্ডঘোষের নিশ্চিন্তপুর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন । বর্তমানে এই মাদ্রাসায় শিক্ষক সংখ্যা ২৩ জন এবং পড়ুয়ার সংখ্যা ৭৪৪ জন।

উজির আলি জানিয়েছেন, শিক্ষকতাকে শুধুমাত্র পেশা হিসাবে না-ভেবে আন্তরিক ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালানোর ব্যাপারে তাঁকে প্রেরণা জুগিয়েছেন তাঁর দাদা মহম্মদ ইয়াসিন। বর্তমানে তিনি শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন। দাদার প্রেরণাকে কাজে লাগিয়েই তিনি তাঁর মাদ্রাসার পড়ুয়াদের মধ্যে ইনোভেটিভ চিন্তাভাবনা জাগানো ও শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিষয়ে মানোন্নয়নের ব্যাপারে প্রথম থেকেই উদ্যোগ নেন। সেই মত মাদ্রাসার রূপকেও সৌন্দর্যায়নে ভরিয়ে তোলেন।

কো-ক্যারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসে তিনি তাঁর মাদ্রাসার পড়ুয়াদের আগ্রহী করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। এইসবের বিচারে ২০১৩ সাল থেকে নিশ্চিন্তপুর হাই মাদ্রাসা একের পর এক পুরস্কার পেতে থাকে। ওই বছর ‘নির্মল বিদ্যালয়’-এর স্বীকৃতি মেলে। ২০১৪ সালে মাদ্রাসা বোর্ড নিশ্চিন্তপুর হাই মাদ্রাসাকে ‘মডেল মাদ্রাসা’র স্বীকৃতি দেয়। এরপর ২০১৮ সালে তাঁর মাদ্রাসা স্কুল পূর্ব বর্ধমান জেলার ‘সেরা মাদ্রাসা’ হিসেবে বিবেচিত হয়।

আরও পড়ুন- ভারতের গরুর ওপর নির্ভর নয় বাংলাদেশ, গরুপাচার নিয়ে সরব হাসিনা

২০১৯ সালে ‘শিশুমিত্র’ পুরস্কারও পায় তাঁর মাদ্রাসা। এমনকী, ২০২১ সালে ‘যামিনী’ পুরস্কারের জন্যও তাঁর মাদ্রাসা রাজ্য থেকে মনোনীত হয়েছে। এছাড়াও এই বছর রাজ্য থেকে জেলার সেরা ‘স্বচ্ছ’ বিদ্যালয়ের নমিনেশনও পেয়েছে তাঁর মাদ্রাসা। উজির আলি জানান, নিশ্চিন্তপুর হাই মাদ্রাসার এই পুরস্কার প্রাপ্তির কৃতিত্ব তাঁর একার নয়। এইসব পুরস্কার ও সম্মান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তাঁর মাদ্রাসার সকল শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও পরিচালন কমিটিরও যথেষ্ট অবদান রয়েছে।

পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘আমাদের জেলার দুই স্কুলে দুই শিক্ষক পলাশ চৌধুরী ও মহম্মদ উজির আলি এই বছর শিক্ষক রত্ন সম্মান পাচ্ছেন জেনে আমরা গর্বিত বোধ করছি। বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন-সহ সামগ্রিক উন্নতি সাধনে এই দুই শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। যোগ্য শিক্ষক হিসেবেই রাজ্য সরকার তাঁদের যোগ্য সম্মানে ভূষিত করতে চলেছে।’

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Westbengal news download Indian Express Bengali App.

Web Title: A high madrasa and a primary school teacher in east burdwan are getting the award