"প্রচণ্ড জোরে শব্দ, তারপর তীব্র ঝাঁকুনি। আমি পড়ে গেলাম আমার বার্থ থেকে আর সব অন্ধকার হয়ে গেল!" বিভীষিকা যেন এখনও কাটছে না বিকানের এক্সপ্রেসের জীবিত যাত্রীর। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ির দোমহনিতে পাটনা থেকে গুয়াহাটি যাওয়ার ট্রেনে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। যাতে এখনও পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত বহু। কিন্তু দুর্ঘটনার আগের মুহূর্তের স্মৃতি ভুলতে পারছেন না আহত যাত্রীরা।
দুর্ঘটনায় ১২টি বগি বেলাইন হয়ে যায়। বিকেল পাঁচটার দিকে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে নর্থ-ইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনে। দুর্ঘটনার পর কয়েক শো স্থানীয় বাসিন্দা ছুটে আসেন। তাঁরাই প্রথম উদ্ধারকাজে হাত লাগান। তার পর আসে দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
জীবিত যাত্রী সঞ্জয় বলেছেন, "বিকেল পাঁচটার সময় আমি তখন ট্রেনের মধ্যে। বউয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড জোরে আওয়াজ হল। তার পর তীব্র ঝাঁকুনি, আমি নিজের বার্থ থেকে পড়ে যাই। চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে যায়। জ্ঞান ফিরতে দেখলাম একটা অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যে রয়েছি।"
অনেক জীবিত যাত্রী নিজেদের পরিবার-পরিজনের জন্য তন্ন তন্ন করে দুর্ঘটনাগ্রস্ত কামরাগুলিতে খোঁজেন। একজন আহত যাত্রী কাঁপা কাঁপা গলায় বলেছেন, "আমি আমার মায়ের সঙ্গে চা খাচ্ছিলাম। আচমকা শব্দে চমকে উঠি, তার পর বিরাট ঝোরে ঝাঁকুনি আর বার্থ থেকে একের পর এক মালপত্র নীচে পড়তে থাকে। পরে স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে, মায়ের খোঁজ পাওয়া যায়নি। জানি না তাঁর কী হয়েছে।"
আরও পড়ুন দেখাই হল না বাবা-মেয়ের, ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা প্রাণ কাড়ল যুবকের
রেললাইনের কাছেই একটি চায়ের দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে বসে আড্ডা মারছিলেন মনোহর পাল। ট্রেন বেলাইন হওয়ার তীব্র শব্দ শুনতে পেয়ে সবার প্রথম সেখানে ছুটে যান তিনি। তিনি বলেছেন, "প্রথমে ভেবেছিলাম মনে হয় কোনও বিস্ফোরণ হয়েছে। তার পর ছুটে এসে দেখি ট্রেনের কামরাগুলি খেলনার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। তার মধ্যে থেকে মানুষের আর্তনাদ শুনতে পাই। তখনই তাঁদের বের করতে শুরু করি।"