Smart Parrot: কথায় আছে ভালোবাসা পেলে জঙ্গলের পশুরাও যেন পোষ মেনে যায়। তবে ভালোবাসা ও কাছে টানার এই ব্যতিক্রমী গল্পটি একটি টিয়াপাখিকে জুড়ে। জঙ্গলের একটা টিয়া (Parrot) পাখি পোষ মেনেছে খাস গৃহস্থ একটি বাড়িতে। প্রতিদিন এই টিয়া পাখির ডাকেই ঘুম ভাঙে বাড়িমালিকের। পাখিটি এই বাড়িতে এসে দোতলার ব্যালকনির দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই উড়ে এসে বসে সেখানে থাকা একটি টেবিলে। সেখানেই এই পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রত্যেকের সঙ্গে বসে ছোলা-পেয়ারা বিস্কিট সহযোগে 'নাস্তা' সারে বনের সেই পাখি। আর এই নিয়েই মাসতিনেক ধরে বনের টিয়াপাখিকে নিয়ে দিন কাটছে শিলিগুড়ির (Siliguri) শিবমন্দির এলাকার পাল পরিবারের।
একটা সময় ছিল যখন বাড়িতে বাড়িতে খাঁচায় বন্দি করে পুষতে দেখা যেত টিয়া, ময়না, মুনিয়া, কাকাতুয়াকে। বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইনে বর্তমানে সেসব অতীত। ধরা পরলে জরিমানা সহ সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। খোদ বন্যপ্রানই আস্তানা গেঁড়েছে গৃহস্থের দুয়ারে।
জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি মহকুমার শিবমন্দিরের বাসিন্দা বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বিব্রত পালের বাড়িতে সময়ে অসময়ে চলে আসছে একটি বনের টিয়াপাখি। মাসখানেক আগে বাড়ির সামনের একটি সেগুনগাছে বসে গাছের ফল খাচ্ছিল পাখিটি। বিব্রতবাবুর স্ত্রী সম্পা পাল পাখিটিকে দেখে 'আয় আয়' করে ডাক দিতেই গাছ থেকে সোজা চলে আসে দোতলার ব্যালকনিতে। তিনি কল্পনাও করতে পারেনি তার ডাকেই সারা দেবে লাল টুকটুকে ঠোঁটের সবুজ পাখিটি।
আদরের টিটুকে নিয়ে গৃহকর্ত্রী।
আরও পড়ুন- Madhyamik 2024: মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা এখবর আগে পড়ুন! তাঁদেরই সুবিধার্থে অভূতপূর্ব উদ্যোগ
তারপর থেকে দিনে অজস্রবার পাখিটির আগমন ঘটে সেই বাড়িতে। এখন আর তাকে ডাকতে হয় না, নিজে থেকেই চলে আসে। ব্যালকনিতে রাখা জলের গামলায় সে স্নান করে নিত্যদিন। ঘরে ঢুকে বাড়ির সদস্যদের কাঁধে এসে বসে। বিব্রতবাবুর মেয়ে ঈশিতা শখ করে পাখিটার নাম রেখেছে 'টিটু'।
সম্পা পাল জানান, সকালে টিটুর ডাকেই ঘুম ভাঙে তাঁদের। তারপর পাখিটিকে খেতে দিতে হয় ভেজানো ছোলা, পেয়ারা, বিস্কুট আর জল। কথা বললে টিয়া নিজের মত করে উত্তরও দেয়। আগে শুধু ব্যালকনিতে আসত, এখন সে ঘরেও চলে আসে। সম্পা দেবী বলেন, "এখন এই টিটুর জন্য বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতে পারি না। সেও এখন বাড়ির একজন সদস্য হয়ে গিয়েছে।"
আরও পড়ুন- Kolkata Weather Today: কাঁপানো ঠান্ডার জোরালো কামব্যাক! বিদায়বেলায় ঝোড়ো ইনিংস খেলবে শীত?
বাড়িমালিক বিব্রত পাল বলেন, "কখনই ভাবিনি বনের টিয়াপাখি এভাবে পোষ মানবে। সময় সময় আসে, কিছুক্ষণ থেকে আবার চলে যায়। বাড়িতে অপরিচিত লোক দেখলে ঘরে ঢুকতে চায় না। মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে কোনও কোনও সময় খাওয়াতে হয়। সবার হাত থেকেই ঠুকরে ঠুকরে খায়। ওকে নিয়েই আমাদের সময় কেটে যায়।"
এদিকে, টিয়াপাখির পোষ মানার খবর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। প্রতিদিন সকালে পাখি দেখতে ভিড় জমান স্থানীয়দের অনেকেই। তাতে বিরক্ত বোধ করে টিয়াপাখিটি। বেশি লোকের জমায়েত হলে প্রথম প্রথম ভয়ে আসতে চাইত না পাখিটা। এখন আর তার ভয় কেটেছে। টিটুকে নিয়েই এখন চর্চা পাড়াজুড়ে। অনেকের কৌতূহল, হয়তো পাখিটা কোনও বাড়ির পোষা পাখি। সব মিলিয়ে টিটুকে নিয়ে চর্চার শেষ নেই এলাকায়।