কীর্তিময়ীর পাশে দাঁড়ালেন আর এক কীর্তিবান। সংবর্ধনা সভায় এসে জেলারই এক দুঃস্থ ক্রীড়াবিদের সাহায্যে আর্থিক অনুদান দিলেন পেশায় প্রাথমিক স্কুলের এক শিক্ষক। শুধু শিক্ষক হিসেবেই পরিচিত নন এই ব্যক্তি। বাল্যবিবাহ রোধে তাঁর প্রচার ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে। সম্প্রতি জেলার এই দুই 'রত্ন'-কে সংবর্ধনা দিয়েছে হুগলি জেলা প্রেস ক্লাব।
চুঁচুড়ার রবীন্দ্র ভবনে সম্প্রতি হুগলি প্রেস ক্লাবের সংবর্ধনা সভায় হাজির ছিলেন খানাকুলের শিক্ষক দেবাশিস মুখোপাধ্যায় এবং তারকেশ্বরের বুল্টি রায়। বাল্যবিবাহ রোধে সক্রিয়ভাবে বছরভর প্রচার করেন দেবাশিসবাবু। অভিনব ঢঙে প্রচার সেরে ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সাড়া ফেলে দিয়েছেন দেবাশিস। বহুরূপী সেজে ঘুঙুর পায়ে ছড়া কেটে-কেটে মাঠে-ঘাটে প্রচার সারেন দেবাশিস।
অন্যদিকে, তারকেশ্বরের জয়কৃষ্ণ বাজারের বছর বত্রিশের গৃহবধূ বুল্টি রায়। তাঁর স্বামী ট্রেনের হকার। দুই সন্তানের মা বুল্টি অসম্ভব ভালো দৌড়বিদ। এক চিলতে ঘরে ভাড়া নিয়ে থাকেন তাঁরা। অদম্য জেদ আর প্রবল ইচ্ছাশক্তির উপর ভর করেই এগোচ্ছেন বুল্টি। দারিদ্র্যতাকে হেলায় হারিয়ে এগোচ্ছে তাঁর বিজয়রথও।
গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে তামিলনাড়ুর জহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে আয়োজিত ৪২তম জাতীয় মাস্টার্স অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপে নাম দিয়েছিলেন বুল্টি। বাংলার হয়ে লড়াইয়ে নেমে ৫টি ইভেন্টে পদক জিতেছেন তিনি। ২০০ মিটার, ৪০০ মিটার এবং ৪০০ মিটার হারডেলসে সোনার পদক জেতেন তিনি। অন্যদিকে, ১০০ ও ৪০০ মিটার রিলে-তেও রুপোর পদক পান বুল্টি। নজিরবিহীন এই কৃতিত্বে আজ বুল্টি বাংলার 'সোনার মেয়ে'।
আরও পড়ুন- নাম ভাঁড়িয়ে হাসপাতালে, সদ্যোজাতকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা মায়ের
তবে তীব্র দারিদ্র্যতা প্রতি মুহূর্তে তাঁর 'সোনা'র দৌড়ে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দু'বেলা দু'মুঠো খাবারও তাঁদের অনিশ্চিত। ভালো রানিং শু-ও নেই বুল্টির। পাড়ার মাঠে সকালে প্র্যাকটিস সারেন তিনি। হয় মুড়ি নয়তো চা-বিস্কুট খেয়েই মাঠে নামেন তিনি। সম্প্রতি চুঁচুড়ার সংবর্ধনা সভায় এসে বুল্টির এই 'জীবন-যুদ্ধের' কথা শোনেন পেশায় শিক্ষক দেবাশিস মুখোপাধ্যায়।
পরে বুল্টির অ্যাকাউন্টে ১৫,০০০ টাকা আর্থিক সাহায্য পাঠিয়ে দেন দেবাশিস। উন্নতমানের ক্রীড়া সরঞ্জাম কিনতেই বুল্টিকে ওই টাকা তিনি দিয়েছেন। আর্থিক এই সাহায্য পেয়ে আপ্লুত বুল্টি জানান, এই অনুদান তাঁর কাছে ভগবানের দান বলে মনে হচ্ছে। আরও ভালোভাবে অনুশীলন করে বাংলা তথা দেশের মুখ উজ্জল করার স্বপ্ন দেখেন তরুণী। অন্যদিকে পেশায় প্রাথমিকের শিক্ষক দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, ''এক লড়াকু অ্যাথলিটকে উজ্জীবিত করতে পেরে আমি নিজেও গর্বিত। আগামী দিনেও ওঁর পাশে থাকব।''