স্বামীকে খুন করার জন্য প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে 'থ্রিলার ফিল্ম'-এর চিত্রনাট্যকেও হার মানানোর মত পরিকল্পনা করেছিলেন স্ত্রী। কিন্তু, শেষরক্ষা হল না। নির্ঘাত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে স্বামী মণিরুল মণ্ডল আর্তচিৎকার জুড়ে দিতেই স্ত্রী ডলি বিবি ও তাঁর প্রেমিক সাদ্দাম শেখের যাবতীয় পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। যা নিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের লোহার গ্রামে।
পরিবারের অন্য লোকজন ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মণিরুলকে উদ্ধার করে। পরে তাঁরা একই ঘরের খাটের তলায় মাদুর চাপা দিয়ে লুকিয়ে থাকা মণিরুলের স্ত্রী ডলির প্রেমিক সাদ্দামকে দেখতে পেয়ে তাঁকে পাকড়াও করে। এরপর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে ধরা দিয়ে স্বামী মণিরুলকে খুনের পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে নেন বধূ ডলি বিবি। সেই স্বীকারোক্তি শোনার পরেই পরিবার পরিজন ও প্রতিবেশীদের ব্যাপক রোষের মুখে পড়ে বধূ ডলি বিবি ও তাঁর প্রেমিক।
খবর পেয়ে মন্তেশ্বর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে উত্তেজনা সামাল দিয়ে ডলি বিবির প্রেমিককে ধরে থানায় নিয়ে যায়। চিকিৎসার জন্য মণিরুলকে নিয়ে যাওয়া হয় মন্তেশ্বর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থকেন্দ্রে। এসডিপিও (কালনা) সপ্তর্ষি ভট্টাচার্য্য রাতে বলেন, 'গোটা ঘটনায় দু’পক্ষের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।'
মন্তেশ্বরের লোহার গ্রামের বাসিন্দা মণিরুলের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, প্রায় ৯ বছর আগে মণিরুলের বিয়ে হয় কালনার বুলবুলিতলা এলাকার তরুণী ডলির সঙ্গে। তাঁদের সাত বছর বয়সি একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। দিল্লিতে রেডিমেড গার্মেন্টের দোকানে কাজ করতেন মণিরুল। তিন মাস আগে তিনি নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। বর্তমানে তিনি এলাকায় টোটো চালিয়ে সংসার চালান। পরিবারের অভিযোগ, মঙ্গলবার গভীর রাতে বাড়ির একটি ঘরে মণিরুলকে ঠান্ডা দুধের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে খাইয়ে তাঁকে ঘুমে আচ্ছন্ন করে হাত ও পা শক্ত করে বেঁধে দেয় স্ত্রী ডলি ও তাঁর প্রেমিক। এরপর ডলি ও তাঁর প্রেমিক সাদ্দাম শেখ মিলে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মণিরুলকে খুন করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ।
মণিরুল এদিন অভিযোগে বলেন, 'মঙ্গলবার রাতে খাওয়াদাওয়ার পর আমার স্ত্রী আমার হাত-পা টিপতে টিপতে হঠাৎ করে হাত ও পা দুটি শক্ত করে বেঁধে দেয়। আর তখনই সন্দেহ হয়। যদিও তার আগে স্ত্রী আমাকে ঠান্ডা দুধ খেতে দিয়েছিল। তা খেয়ে আমি ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। মনে হয় ওই দুধেই কিছু মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর আমার স্ত্রী ও সাদ্দাম আমার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে আমাকে প্রাণে মেরে দেওয়ার চেষ্টা করে। ঘুম আচ্ছন্ন অবস্তাতেই তা বুঝতে পেরে আমি প্রাণে বাঁচার জন্য জোরে চিৎকার শুরু করি। তা শুনেই আমার পরিবারের লোকজন ধাক্কা মেরে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে আমাকে উদ্ধার করে।'
মণিরুলের ভাই রেজাবুল মণ্ডল বলেন, 'দাদার চিৎকার শুনে আমরা গভীর রাতেই ঘুম থেকে উঠে পড়ি। ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকতেই দেখি দাদার হাত ও পা বাঁধা। পাশেই বৌদি। দাদা তখন ইশারায় খাটের তলার দিকে দেখায়। খাটের তলায় তাকাতেই দেখি যুবক সাদ্দাম মাদুর চাপা দিয়ে লুকিয়ে আছে।' আর মণিরুলের ছেলে কবীর মণ্ডল জানায়, 'আমার মা ওই যুবকটার সঙ্গে রোজ ফোনে কথা বলত। বাবাকে জানাব বললেই, মা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিত।'
আরও পড়ুন- ভুতুড়ে কাণ্ড? নদীর মাছ নিজেই ডাঙায় উঠছে টপাটপ! চরম শোরগোল
পরিবারের লোকজনের হাতে ধরা পড়ার পড়ে জিজ্ঞাসাবাদে সাদ্দাম শেখ জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদের কাশীপুরে। আগে মণিরুলের পরিবারের কেউই সাদ্দামকে দেখেননি। মণিরুলের বাড়িতে বা এলাকায় তাঁর আসা-যাওয়াও ছিল না।
পরিবারের দাবি, ধরা পড়ার পর ডলি বিবি ও তাঁর প্রেমিক সাদ্দাম স্বীকার করে নেন, ফোনে তাঁদের আলাপ। পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় দু-আড়াই বছর হল তাঁরা প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে আছেন। মঙ্গলবার রাতের অন্ধকারে প্রেমিকা ডলির সঙ্গে দেখা করতে এসে মণিরুলকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা কষে ফেলেন দু'জনে। একইভাবে ডলি বিবিও স্বীকার করে নেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করতেই রাত ১২টা নাগাদ মণিরুল তাঁদের বাড়িতে ঢুকেছিল। হাত-পা বেঁধে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মণিরুলকে খুনের চেষ্টার কথা ডলি ও তাঁর প্রেমিক দু’জনেই স্বীকার করেছে বলেই মণিরুলের পরিবারের সদস্যদের দাবি।