কুড়ি বছর ধরে শিকলবন্দি অবস্থায় কাটাচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক। ওই যুবক বরুণ রাম (২৮)-এর পরিবারের বক্তব্য, বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়েও তাঁকে সুস্থ করা যায়নি। সেই কারণেই বাঁশের মাচানের সঙ্গে তাঁকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। মালদা শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে পুরাতন মালদা ব্লকের মুচিয়া গ্রাম। এই গ্রাম ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। সেখানেই ধরা পড়েছে এই অমানবিক ছবি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বরুণের বাবা শিবশংকর রাম পেশায় দিনমজুর। পরিবারে রয়েছে তিন মেয়ে এক ছেলে। বাড়ি থেকে সামান্য দূরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতার। সীমান্তে বয়ে চলেছে মহানন্দা নদী। তারই তীরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে ওই যুবককে। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, আর্থিক অবস্থার কারণে ওই যুবককে বিশেষ চিকিৎসা করাতে পারেননি পরিবারের লোকজন। সেই কারণেই তাঁকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। কার্যত বিনা চিকিৎসায় বছরের পর বছর ধরে এভাবেই বন্দি হয়ে আছেন ওই যুবক। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ার পর শোরগোল পড়ে যায়।
ওই যুবকের বাবা শিবশংকর রাম জানিয়েছেন,আট বছর বয়স থেকে ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। প্রথমে মালদা মেডিকেল কলেজে তাঁর চিকিৎসা করানো হয়। পরবর্তীতে বহরমপুরে করানো হয় চিকিৎসা। দিনমজুর হওয়ার ফলে তিনি ছেলের চিকিৎসার জন্য বেশি টাকা জোগাড় করতে পারেননি। ছেলে এখানে ওখানে পালিয়ে যাচ্ছিল। কয়েক মাস আগে শিকল খোলা থাকায় পালিয়ে গিয়েছিল বরুণ। খোঁজাখুজির পর ছেলেকে খুঁজে পান শিবশংকর রাম। পাশেই বাংলাদেশ সীমান্ত। বরুণের বাবার ভয়, বোধহীন ছেলে ভুল করে ওপারেও চলে যেতে পারে।
আরও ভয়, সীমান্তে অনুপ্রবেশকারী ভেবে বিএসএফ আবার গুলিও করে না-বসে! সেই ভয়ে তিনি ছেলেকে শিকলবন্দি করে রাখেন বলে জানিয়েছেন। শিবশংকর রামের বক্তব্য, 'আমরা বাড়ির সবাই কাজে চলে যাই। বাড়িতে কেউ থাকে না। প্রশাসনকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে খারাপ লাগলেও তাই ছেলেকে শিকলবন্দি করে রেখেছি।'
আরও পড়ুন- ‘ক্যাশলেস ইকোনমি’ কর্মসংস্থানে ব্যর্থ, নিজের উদাহরণ তুলে মোদীকে তুলোধনা মমতার
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শাসক এবং বিরোধী দলের মধ্যে তরজা শুরু হয়েছে। জেলা তৃণমূল সহ-সভাপতি বাবলা সরকার বলেন, 'স্থানীয় গ্রামপঞ্চায়েত বিজেপির। পঞ্চায়েত সমিতি বিজেপির। এমনকী বিধায়কও বিজেপির। বিষয়টি তাদের দেখা উচিত। এই যুগে এসব মেনে নেওয়া যায় না। আমরা স্থানীয় দলীয় কর্মীদের বলব, যাতে ওই পরিবারের পাশে থেকে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।' পুরাতন মালদার বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রিংকি রাজবংশী বলেন, 'বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।'