Aadhaar: কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েনের মধ্যে আধার কার্ড সক্রিয় হওয়ার বার্তা এল। আধার কার্ড সক্রিয় হওয়ায় খুশিতে আবীর মাখলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। অন্যদিকে আধার নিষ্ক্রিয় (Aadhaar) হওয়া নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলে আগেই বার্তা দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর সেই 'অভয়বাণী' দেওয়া চিঠি পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) অতিরিক্ত জেলাশাসক পৌঁছে দিয়েছেন জামালপুরে (Jamalpur)।
সপ্তাহ খানেক আগে এক আধজনের নয় প্রায় ৬০ জনের কাছে আধার নিষ্ক্রিয় (Aadhaar Deactivation) হওয়ার চিঠি পৌঁছায় বাড়িতে। এতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের। আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে জানিয়ে ডাকযোগে এমন চিঠি পান জামালপুর ব্লকের বহু বাসিন্দা। জামালপুর ব্লকের জৌগ্রাম, আবুজহাটি এলাকায় প্রায় ৬০ জনের কাছে ডাকযোগে 'ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইণ্ডিয়া (UIDAI) এর রাঁচির আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়। আবুজহাটি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের জুতিহাটি গ্রামের প্রায় ৫০ জন এমন চিঠি পান। জৌগ্রামের অনেকের কাছেও এই চিঠি আসে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বুঝতে পারেননি কেন আধার কার্ড ডিঅ্যাক্টিভেট হয়েছে । এমনকী তাঁদের রেশন, ব্যাঙ্কের লেনদেন সহ আধার নির্ভর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আধার নিয়ে ব্লক প্রশাসনও কার্যত অন্ধকারে ছিল। এই ঘটনায় যেমন বাসিন্দারা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। তেমনই রাজ্যজুড়ে ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়। তৃণমূল-বিজেপি নেতৃত্ব একে অপরের ঘাড়ে দায় চাপায় আধার নিষ্ক্রিয় হওয়া নিয়ে। শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতোর। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় এই নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বুধবার জেলা অতিরিক্ত জেলা শাসক (সাধারণ) অমিয় কুমার দাস জৌগ্রাম এবং আবুজহাটি ১ নম্বর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের কাছে যান মুখ্যমন্ত্রীর একটি শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে। সেই শুভেচ্ছা বার্তা তাঁদের হাতে তুলে দেন অতিরিক্ত জেলা শাসক। শুভেচ্ছা বার্তায় বিশ্ব বাংলার (Biswa Bangla) লোগো দেওয়া আছে।
যাঁদের আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হওয়ার চিঠি এসেছে, তাঁদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়। অতিরিক্ত জেলা শাসক (সাধারণ) অমিয় কুমার দাস বলেন, "রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আপনাদের পাশে আছেন।" তিনি আরও বলেন, "রাজ্যের যে বাসিন্দারা এই কার্ড বন্ধের কেন্দ্রীয় সরকারি বার্তা পেয়েছেন-তাঁদের এই নিয়ে কোনও উদ্বেগের কারণ নেই। আমাদের সরকার সবসময় রাজ্যের মানুষের পাশে আছে। সরকারি যেসব সুযোগ-সুবিধা তাঁরা পান, এই কারণে তা কখনও বন্ধ করতে দেওয়া হবে না।"
ওই সরকারি কর্তা বলেন, "আমরা ইতিমধ্যেই 'রাজ্যের আধার কার্ড সমস্যা পোর্টাল' চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেটা চালু হয়ে যাবে। যাঁরা যাঁরা এই চিঠি পেয়েছেন, তাঁরা তাঁদের এই সংক্রান্ত তথ্য এই পোর্টালে জানাতে পারবেন। এছাড়া, মানুষের অভাব-অভিযোগের নিষ্পত্তি করার জন্য আমরা যে 'সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী' টেলিপরিষেবা চালু করেছি সেই ৯১৩৭০৯১৩৭০ নম্বরে সরাসরি ফোন করেও তাঁরা তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন।"
এদিকে, প্রশাসনের এই উদ্যোগে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি এলাকার বাসিন্দারা। খানিকটা হলেও যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার মতো অবস্থা আধার নিষ্ক্রিয় হওয়া বাসিন্দাদের। জুতি হাটি গ্রামের বাসিন্দা বিপুল বিশ্বাস, বর্ষা বিশ্বাসরা জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। জেলাশাসক, বিডিও ও পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন। তাঁরা তাঁদের বাড়ি বাড়ি এসে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
জুতিহাটি গ্রামের বাসিন্দা সজল ব্যাপারী জানান, আজ সকালেই তাঁর মোবাইলে বার্তা এসেছে আধার কার্ড সক্রিয় হওয়ার।জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মেহমুদ খান বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে আধার কার্ড বাতিল করছিল তাতে এলাকার বাসিন্দারা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিন্তু ইতিমধ্যেই সেই বাতিল আধার কার্ড সক্রিয় হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আধার কার্ড সক্রিয় হয়েছে।"
অন্যদিকে বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, "কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলে বিজেপির রাজ্য সভা তথা সাংসদ সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) আগেই বলেছিলেন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নিক্রিয় আধার কার্ডগুলি সক্রিয় হবে। এখানে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এলাকায় গিয়ে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে।''
এই বিষয়ে জেলা শাসক বিধান রায় জানান, ১০২ জনের আধার কার্ড বাতিলের তালিকা পাঠানো হয়েছিল। বুধবার দুপুর ১২ টার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর শংসাপত্র অতিরিক্ত জেলা শাসক বাসিন্দাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এই বিষয়ে বিডিওরাও বাকীদের হাতে শংসাপত্র দিয়েছেন। তবে আধার কার্ড সক্রিয় হওয়ার খবর তার কাছে এসেছে। কিন্তু সময় অভাবে তা চেক করে দেখা হয় নি। জামালপুরের বিধায়ক অলক মাঝি (Alok Maji) বলেন, "আধার ডিএক্টিভেট হওয়া নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।"